অশ্রুডানায় সূর্য খোঁজার পালা

আগের সংবাদ

শূন্য অর্থনীতি থেকে উন্নয়নের রোল মডেল

পরের সংবাদ

১৫ আগস্টে এবারো নীরব বিএনপি

প্রকাশিত: আগস্ট ১৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ১৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : ১৫ আগস্টে এবারো নীরব থাকবে বিএনপি। জাতীয় শোক দিবসে দলের চেয়ারপারসনের জন্মদিনের নামে কেক কাটা কর্মসূচি রাখবে না দলটি। বিগত ৬ বছর ধরে এই দিনে কেক না কাটলেও দলীয় কার্যালয়ে মিলাদ-মাহফিলের আয়োজন করা হয় বিএনপির পক্ষ থেকে। এবারো সেই কর্মসূচি অব্যাহত থাকলেও তা পালন করা হবে শোক দিবসের পরের দিন। দলের একাধিক নেতা এই বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
শোক দিবসে জন্মদিন পালন করা নিয়ে অনেক দিন থেকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মাঝে বিতর্ক ছিল। দুই দলের নেতারা বিভিন্ন সময়ে বিতর্কও করেছেন। এ নিয়ে বিভিন্ন মহলের কঠোর সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে বিএনপিকে। গত ৬ বছর ধরে ১৫ আগস্টে জন্মদিনের আনুষ্ঠানিকতা বাদ দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
এবার বিএনপির পক্ষ থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে খালেদা জিয়ার আরোগ্য, দীর্ঘায়ু ও মুক্তি কামনা এবং করোনাসহ অন্যান্য রোগে মৃত্যুবরণকারী দেশবাসী ও দলের নেতাকর্মীদের আত্মার মাগফিরাত ও অসুস্থদের আশু সুস্থতা কামনায় আগামীকাল ১৬ আগস্ট সোমবার দেশব্যাপী দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজনের অনুরোধ করা হয়েছে। প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে স্বাক্ষর করেছেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও বিএনপি কেন্দ্রীয় দপ্তরের চলতি দায়িত্বে নিয়োজিত সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স।
জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) নিজে উৎসাহী হয়ে কখনোই জন্মদিন পালন করেননি। নেতাকর্মীদের উৎসাহে এটা হয়েছে। দলটির নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হাইকমান্ডের পক্ষ থেকে ১৫ আগস্টে কেক না কাটতে কড়াভাবে না করে দেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক বিতর্ক এড়াতেই ১৫ আগস্টকে খালেদা জিয়ার জন্মদিন হিসেবে পালন করবে না বিএনপি। এর আগে প্রথম গত ২০১৬ সালের দেশের বন্যা পরিস্থিতির কারণে জন্মদিন পালন করেননি খালেদা জিয়া। এরপর থেকে ১৫ আগস্ট আর জন্মদিন পালন করেননি তিনি।
১৯৯৬ সালের আগে বিএনপি কখনোই খালেদা জিয়ার জন্মদিনের কোনো অনুষ্ঠান করেনি। ১৯৯৬ সালের ১৫ আগস্ট বিএনপি প্রথম খালেদা জিয়ার জন্মদিন আনুষ্ঠানিকভাবে উদযাপন শুরু করে। আর ১৫ আগস্ট জন্মদিনের কথা প্রথম জানা যায় ১৯৯১ সালের মেয়াদে বিএনপি ক্ষমতায় থাকার সময় প্রধানমন্ত্রীর দুই উপ-প্রেস সচিব সৈয়দ আবদাল আহমেদ ও আপেল আবদুল্লাহর লেখা ‘নন্দিত নেত্রী খালেদা জিয়া’ গ্রন্থে। তারা খালেদা জিয়ার বোনের বরাত দিয়ে শোক দিবসে জন্মদিনের কথা লেখেন। ১৯৯৬ সালে প্রথম জন্মদিনের অনুষ্ঠান করার পর আওয়ামী লীগ তীব্র ভাষায় নিন্দা জানিয়েছিল। পরবর্তীতে দুটি দলের মাঝে এই নিয়ে দূরত্ব বাড়তে থাকে। হিংসা প্রতিহিংসার রাজনীতির বিকাশ ঘটতে থাকে।
সুধীসমাজে বিএনপিপন্থি বলে পরিচিত গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী দাবি করেছেন, তিনি অনুরোধ করার পর ১৫ আগস্টে কেক কাটা বন্ধ করেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে জন্মদিন পালন না করার জন্য আমি খালেদা জিয়াকে না করেছিলাম। তার পর থেকেই দেখছি উনি আর পালন করছেন না।
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের দিনে জন্মদিন পালনের বিরুদ্ধে বরাবরই বেশ সোচ্চার ছিলেন কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী। বিএনপির সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের আগে ২০১৬ সালের ৪ আগস্ট ‘ফিরোজা’য় খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে ১৫ আগস্ট জন্মদিন পালন না করার জন্য খালেদা জিয়াকে অনুরোধ করেন বলে জানা যায়। এ ছাড়াও সুধীসমাজের বেশ কয়েকজন প্রতিনিধি একবার গুলশান কার্যালয়ে দেখা করে ১৫ আগস্ট জন্মদিন পালনের বিষয়ে নিরুৎসাহিত করেছিলেন বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির একাধিক নেতা।
নেতারা জানায়, প্রয়াত রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ ও প্রয়াত সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহসহ অনেকেই ১৫ আগস্ট জন্মদিন পালনে দলের জন্য কতটা ক্ষতিকর হচ্ছে সে বিষয়টি খালেদা জিয়ার কাছে তুলেছিলেন। তবে তাদের যাওয়ার আগে স্থায়ী কমিটির কয়েক নেতার তরফ থেকেও ওই বিষয়ে তাদের কথা বলতে অনুরোধ করা হয়েছিল। নেতারা জানান, কৌশলগত কারণে তাদের পক্ষে খালেদা জিয়াকে এ বিষয়ে পরামর্শ দেয়া সম্ভব ছিল না। তবে জন্মদিন পালন নিয়ে সিনিয়র বেশির ভাগ নেতার মধ্যেই অস্বস্তি ছিল। জন্মদিনের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়ে এলেও অস্বস্তি ছিল সেই বুদ্ধিজীবীদের মধ্যেও।
জানা গেছে, ১৯৯১ পরবর্তী বিএনপি সরকারের সময় অতি উৎসাহী একদল নেতাকর্মী ও শুভান্যুধায়ীর পরামর্শে ১৫ আগস্ট তার জন্মদিন পালন শুরু হয়। এ ক্ষেত্রে তখনকার প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইংয়ের দু-একজন সদস্যের তৎপরতা বেশি ছিল। তাদের দাবি, খালেদা জিয়াকে কখনোই এ বিষয়ে খুব বেশি আগ্রহী মনে হয়নি। আবার ছেলে তারেক রহমানও কখনোই এ বিষয়ে উৎসাহ দেখাননি। তবে ২০১০ সালে শহীদ মইনুল রোডের বাড়ি থেকে খালেদা জিয়াকে উচ্ছেদ এবং এর আগে ১৯৯৭ সালে জিয়ার কবরস্থানে যাওয়ার বেইলি ব্রিজ সরিয়ে নেয়ার পরে জন্মদিনের অনুষ্ঠান পালন গতি পেয়েছে বলে তাদের মনে হয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেছেন, ম্যাডাম খালেদা জিয়া জেলে যাওয়ার আগে থেকেই ১৫ আগস্ট জন্মদিন পালন করেন না। আগেও তিনি করতে চাইতেন না। নেতাকর্মীদের জোরাজুরিতে অনেকটা বাধ্য হয়ে করতেন। গত তিন বছর কোনো কেক কাটা হয় না। ঐ দিন তার সুস্থতা কামনা করে দোয়া করা হয়। এবারো জন্মদিনে কেক কাটা বা কোনো অনুষ্ঠান করা হবে না। আমরা তার সুস্থতার জন্য দোয়া করব।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়