অশ্রুডানায় সূর্য খোঁজার পালা

আগের সংবাদ

শূন্য অর্থনীতি থেকে উন্নয়নের রোল মডেল

পরের সংবাদ

দখল দূষণে হারিয়ে যাচ্ছে চলন বিল

প্রকাশিত: আগস্ট ১৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ১৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মো. আকছেদ আলী, ভাঙ্গুড়া (পাবনা) থেকে : দেশের সর্ববৃহৎ বিলাঞ্চল চলন বিল। এক সময় নাম শুনলেই ভয়ে গা শিউরে উঠত। উত্তর জনপদের এ বিলের ঢেউয়ের গর্জনে ঘুম ভাঙত বিলপাড়ের বাসিন্দাদের। কিন্তু এখন আর আগের মতো বিলে ঢেউ নেই। কারণ প্রতি বছর লাখ লাখ ঘনমিটার পলি পড়ে ও প্রভাবশালীদের দখলদারিত্বে মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে এ চলন বিল। ইতোমধ্যে বিলে দেখা দিয়েছে পানির সংকট। এতে হুমকির মুখে পড়েছে চলন বিলের মাছ ও কৃষকের আমন ধান।
স্থানীয় মৎস্য অফিস ও মৎস্যজীবীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পাবনা, সিরাজগঞ্জ ও নাটোর জেলাজুড়ে বিস্তৃত এ চলন বিল। বিশেষ করে সিংড়া উপজেলার অধিকাংশ স্থানজুড়ে এর অবস্থান। এক সময় এ বিলের ঐতিহ্য ও দেশীয় মাছ সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করত। চোখ-মন ছুঁয়ে যেত অতিথি পাখির কলকাকলিতে। আবার প্রশান্ত বিলের বুকের নৈসর্গকতায় দুচোখ ভরে যেত। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন ও বিলের মাঝে যত্রতত্রভাবে পুকুর খননের কারণে সংকুচিত হয়ে ঐতিহ্যবাহী চলন বিল তার যৌবনকে হারিয়ে ফেলেছে। এ বছর সময় মতো অধিক বৃষ্টিপাত না হওয়ায় বিলে দেখা দিয়েছে পানির সংকট। এতে হুমকির মুখে পড়েছে চলন বিলের মাছ ও কৃষকের আমন ধান। সাতবাড়িয়া গ্রামের কৃষক নুর ইসলাম ও দুলাল হোসেন জানান, তারা প্রতি বছর বন্যার সময় বিলে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। কিন্তু এ বছর বিলে পানি কম থাকায় মাছের দেখা মিলছে না বললেই চলে। এতে বিল পাড়ের বাসিন্দাদের সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে।
ভাঙ্গুড়া হাজি জামাল উদ্দিন সরকারি ডিগ্রি কলেজের প্রাণিবিদ?্যা বিভাগের প্রভাষক মো. আব্দুর লতিফ বলেন, বর্ষার সময় চলন বিলের অধিকাংশ লোক মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। আর বর্ষা পরবর্তী সেই বিলে হয় ধান চাষাবাদ। কিন্তু এ বছর বিলে পানি সংকট থাকায় দেখা দিয়েছে মাছের অভাব। তাই মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতে না পেরে অনেককেই সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে বেকারত্ব। তাছাড়া বন্যা না হলে জমির উর্বরতা অনেকাংশে কমে যাবে। চলন বিলের কৃষিতে বিপ্লব ও উন্নয়ন হ্রাস পাবে। চাষাবাদে দেখা দেবে মন্দাভাব। আগে আষাঢ়-শ্রাবণ মাসেই চলন বিলে পানির ঢেউয়ের শব্দ শোনা যেত। কিন্তু এ বছর চলন বিলে পানি কম থাকায় বিলের মুক্ত জলে অতিরিক্ত দাবদাহে মাছের ডিম নষ্ট হয়ে গেছে। এতে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ, কাঁকড়া, শামুকসহ ছোট পোকামাকড় বিলুপ্তির পথে।

হুমকির মুখে পড়েছে জীববৈচিত্র্য। তিনি চলন বিলের মা মাছ রক্ষায় নদী-নালা খনন ও প্রভাবশালীদের হাত থেকে বিলকে রক্ষার পরামর্শ দিয়েছেন।
তিনি আরো বলেন, সত্তর দশকেও এ বিলে পর্যাপ্ত পরিমাণে মাছ পাওয়া যেত। হাত দিয়েই মাছ ধরা যেত। এক সময় চলন বিলে ১৩০ প্রজাতির মাছ পাওয়া যেত। পরিবেশবিষয়ক এক গবেষণায় বলা হয়েছে ৫১ প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হতে চলেছে। বিলুপ্ত হওয়া মাছের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ভেদা, শংক, ফাঁদা, চার প্রকারের পুঁটি, পানি রুই, বাচা, গজার প্রভৃতি।
ভাঙ্গুড়া উপজেলা মৎস?্য কর্মকর্তা এনামুল হক বলেন, চলন বিল নিয়ে এখন আর গর্ব করার কিছু নেই। কারণ দখলদারদের দৌরাত্ম্য আর যত্রতত্রভাবে বিলের মাঝে পুকুর খননে এ ঐতিহ্যবাহী বিল তার যৌবন হারাতে বসেছে।
তিনি আরো বলেন, এ বছর সময়মতো বৃষ্টিপাত কম হয়েছে। তাই মাছের ডিমগুলো রেণুতে আসেনি। এছাড়া আষাঢ় মাসজুড়ে অতিরিক্ত দাবদাহে চলন বিলের মাছ ও ডিম নষ্ট হয়ে গেছে। আর চলন বিলের পানির উৎস অধিক বৃষ্টিপাত ও উজানে ঢলের পানি। যেহেতু বৃষ্টিপাত কম সেহেতু চলন বিলে প্রয়োজনের তুলনায় এখন পর্যন্ত পানির সংকট রয়েছে। তবে এখনো সময় রয়েছে, যদি পানি বৃদ্ধি পায় তবে মাছের সাময়িক যে সমস্যা রয়েছে তা সমাধান হবে বলে তিনি আশা করেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়