একাই কোকোর কবর জিয়ারত করলেন রিজভী

আগের সংবাদ

বঙ্গবন্ধু হত্যার পরিবেশ তৈরি করে পাকিস্তান ও আমেরিকা

পরের সংবাদ

সাক্ষাৎকার : সৈয়দ দিদার বখত > সাংবাদিকদের ছোট ভাই ভাবতেন বঙ্গবন্ধু

প্রকাশিত: আগস্ট ১৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ১৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ঝর্ণা মনি : সৈয়দ দিদার বখত। দেশবরেণ্য সাংবাদিক, সাবেক তথ্য ও সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী। বাংলাদেশের সংস্কৃতির উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রেখেছেন তিনি। পঁচাত্তরে সংবাদ সংস্থা এনার বিশেষ প্রতিনিধি ছিলেন তিনি। পনের আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আচার্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনুষ্ঠানটি কভার করার কথা ছিল তার। তখন তিনি থাকতেন মোহাম্মদপুরের সলিমুল্লাহ রোডে। ১৪ আগস্ট রাত ১২টার দিকে বাসায় ফিরেন তিনি। ভোরে বিকট আওয়াজ শুনে কি ঘটেছে তা দেখতে রাস্তায় যান তিনি। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের সংবাদে অন্যদের মতোই শোকে বিহ্বল হয়ে পড়েন সৈয়দ দিদার বখত। আজো ভুলতে পারেননি সেই দিনটির কথা। পিতৃহারানোর দিনের কথা স্মরণ করে শোকার্ত হয়ে উঠেন তিনি।
শোকের মাস আগস্ট উপলক্ষে ভোরের কাগজকে দেয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে কলঙ্কিত দিনটি নিয়ে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র, ওই সময়ের পরিবেশ, বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণ করেন তিনি।
বঙ্গবন্ধু নিজেই ষড়যন্ত্রের কথা জানতেন উল্লেখ করে সৈয়দ দিদার বখত বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়েছে। কিন্তু ষড়যন্ত্র উন্মোচিত হয়নি। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র ছিল। সাংবাদিকতার সুবাদে বিদেশি সাংবাদিকদের সঙ্গে আমার কথাবার্তা হতো। পিপিআই, হিন্দুস্তান টাইমস, আকাশবাণী সাংবাদিকদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হতো। একদিন হিন্দুস্তান টাইমসের সাংবাদিক

আমার কাছে জানতে চাইলেন, দেশের খবর কি? তিনি জানালেন, বঙ্গবন্ধুকে হটানোর ষড়যন্ত্র চলছে। আমি বললাম, প্রশ্নই আসে না। বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। কিন্তু ভাবলাম, উনি তো আকাশ থেকে আর বলেননি, কিছু জানেন বলেই কথাটা বলেছেন। ষড়যন্ত্রের কথা বঙ্গবন্ধু নিজেও জানতেন। কিন্তু কখনো বিশ্বাস করতে পারেননি। এটি তার দুর্বলতা ছিল। তিনি ভেবেছিলেন, কোনো বাঙালি তাকে আঘাত করতে পারে না। তিনি বলেন, এই হত্যাকাণ্ড বাঙালি জাতির সবচেয়ে কলঙ্কময় অধ্যায়। সারাজীবন বাঙালিকে এই কলঙ্ক নিয়ে চলতে হবে।
পেশাগত সম্পর্কের বাইরেও বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে পারিবারিক সম্পর্ক ছিল সৈয়দ দিদার বখতের। পেশাগত কারণে বঙ্গবন্ধুর অনুষ্ঠান কভার করতেন তিনি। অন্যদিকে তার বড় ভাই বিখ্যাত কবি ও সাংবাদিক সিকান্দার আবু জাফর ছিলেন বঙ্গবন্ধুর বন্ধু। বড় ভাইয়ের মাধ্যমেও বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করেছেন একাধিকবার। পরে সাংবাদিক হিসেবে একাধিকবার অনুষ্ঠান কভার করেছেন। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে গোপালগঞ্জ গিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাংবাদিকদের সম্পর্ক কেমন ছিল- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সাংবাদিকদের সঙ্গে তার অত্যন্ত সুসম্পর্ক ছিল। সবাইকে ছোট ভাই ভাবতেন। সাংবাদিকদের সব সময় প্রাধান্য দিতেন।
বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তার ব্যক্তিগত স্মৃতি উল্লেখ করে সাবেক এই ছাত্রনেতা বলেন, ১৯৬৪ সালে আমি তখন খুলনা বিএল কলেজে বিএ পরীক্ষার্থী। তখন ছাত্র ইউনিয়ন করতাম। বিএল কলেজ ছাত্র সংসদের ছিলাম। তিনি খুলনা গিয়েছিলেন, তখন আমার বাবার সঙ্গে দেখা করতে আমার বোনের বাসায় যান। আমি বঙ্গবন্ধুকে বললাম, আপনাকে ভীষণ শ্রদ্ধা করি। বঙ্গবন্ধু পিঠ চাপড়ে দিয়ে বললেন, তুই তো আমার দল করিস না। তবে বিশ্বাস করি, তুই একদিন আমার দলে আসবি। এর আগে ১৯৬২ সালে বিএল কলেজে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে আমরা সংবর্ধনা দিয়েছিলাম। সেখানে বঙ্গবন্ধু উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে ছাত্রনেতাদের মধ্যে একমাত্র আমি বক্তৃতা করেছিলাম। আমার বক্তৃতা শুনে বঙ্গবন্ধু অত্যন্ত খুশি হয়ে বললেন, তোমরা পাশে থাকো। তাকে কথা দিয়েছিলাম, সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনে পাশে থাকব।
কলঙ্কিত ওই দিনের স্মৃতি তুলে ধরে তিনি বলেন, ১৫ আগস্ট আমার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর অনুষ্ঠান কভার করার কথা ছিল। সুবেহ সাদিকের সময় বিকট আওয়াজে ঘুম ভেঙে গেল। সবাই বাইরে বের হয়েছিলাম। ইত্তেফাকের ফটোগ্রাফার আলম দৌড়াতে দৌড়াতে এলো। জানালো বঙ্গবন্ধুকে খুন করা হয়েছে। আলম বঙ্গবন্ধুর পার্সোনাল ফটোগ্রাফারও ছিল। বললাম সম্ভব নয়। আলম আমাকে খোঁজ নিতে বলল। ওকে বসতে বললাম। কিন্তু ও বলল, বসার সময় নেই। আলম ছবি তোলার জন্য বেরিয়ে গেল। দৈনিক ইত্তেফাকের আরেক ফটোগ্রাফার এসে আমাকে একই কথা জিজ্ঞেস করলেন।
আমি তখন দ্রুত রেডি হয়ে আসাদগেট হয়ে সোজা ৩২ নম্বরের রাস্তা দিয়ে মোটরসাইকেল নিয়ে বের হলাম। ২৭ নম্বর মোড় থেকেই চেকিং শুরু হলো। আমাকে বাধা দেয়া হলে আমি অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড দেখিয়ে বললাম অফিস যাব। তখন আমাকে ৩২ নম্বরের দিকে যেতে নিষেধ করে অন্য রাস্তা দিয়ে যেতে বলা হলো।
যাওয়ার মতো অবস্থা ছিল না। কলাবাগানের দিকে একটি ট্যাংক দেখতে পেলাম। মানুষ ভীত-সন্ত্রস্ত। গলিতে কিছু মানুষ থাকলেও মেইন রাস্তায় মানুষ ছিল না। অফিসে গিয়ে শুনি নানাজন নানা কথা বলছে। মেজর ডালিম রেডিওতে বারবার ঘোষণা করছে। প্রেস ক্লাবেও গিয়ে দেখি একই ঘটনা। সবকিছু থমথমে ছিল। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের দিন এত বেশি শোকাহত হয়েছি, যা এখনো ভুলতে পারি না।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়