একাই কোকোর কবর জিয়ারত করলেন রিজভী

আগের সংবাদ

বঙ্গবন্ধু হত্যার পরিবেশ তৈরি করে পাকিস্তান ও আমেরিকা

পরের সংবাদ

জামিন আবেদন নামঞ্জুর, কারাগারে পরীমনি-রাজ : অভিযান আইনগতভাবে হয়নি, আইনজীবীর দাবি

প্রকাশিত: আগস্ট ১৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ১৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : রাজধানীর বনানী থানায় দায়ের করা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলার দ্বিতীয় দফায় দুই দিনের রিমান্ড শেষে আলোচিত চিত্রনায়িকা পরীমনি ও প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। মাদক মামলায় তাদের সহযোগী আশরাফুল ইসলাম দীপু ও সবুজ আলীর জামিনও নাকচ করেন আদালত। গতকাল শুক্রবার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ধীমান চন্দ্র মণ্ডলের আদালত শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।
এর আগে গতকাল দুপুর ১১টা ৪১ মিনিটের দিকে আসামিদের আদালতে হাজির করে হাজতখানায় রাখা হয়। এরপর ২টা ৩৮ মিনিটে শুনানি শুরু হয়। এ সময় শুনানিতে আসামিদের হাজির করার বাধ্যবাধকতা না থাকায় আসামিপক্ষের আইনজীবীরা হাজির করার আবেদন করলেও আদালত সেটি নামঞ্জুর করেন।
মাদক মামলাটির সুষ্ঠু তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত পরীমনিকে কারাগারে আটক রাখতে আবেদন করে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক গোলাম মোস্তফা বলেন, রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে মামলার বিষয়ে আসামি পরীমনি বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উপাত্ত দিয়েছেন। মামলার অভিযোগের সঙ্গে তার জড়িত থাকার ব্যাপারে পর্যাপ্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। মামলার তদন্ত

সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত তাকে জেলহাজতে আটকে রাখা একান্ত প্রয়োজন। আসামি জামিনে মুক্তি পেলে পলাতক হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এরপর রাষ্ট্রপক্ষের পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু আদালতকে বলেন, আসামির বাসা থেকে ভয়ঙ্কর এলএসডি, আইসসহ প্রচুর দেশি-বিদেশি মাদক উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া তার বাসায় যে খালি বোতল ছিল সেগুলোতে মদ ছিল। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বাসায় পৌঁছানোর পর আধা ঘণ্টা পর তিনি দরজা খুলেছেন। সেই সময়ের মধ্যেই তিনি মদগুলো ঢেলে ফেলে দিয়েছেন।
তিনি বলেন, নায়িকার সাইনবোর্ড ব্যবহার করে দেশের অনেক শিল্পপতি, কোটিপতি ও তরুণ সমাজকে ডিজে পার্টির মাধ্যমে অনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত করেছিলেন পরীমনি। এখন জামিন দিলে আসামি পলায়ন করতে পারেন। তদন্ত বিঘিœত হতে পারে। তাই মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত আসামিকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করছি।
রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তির বিরোধিতা করে আইনজীবী মজিবুর রহমান, নীলাঞ্জনা রিফাত সুরভীসহ কয়েকজন আইনজীবী পরীমনির জামিনের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন। এডভোকেট মজিবুর রহমান বলেন, র‌্যাব আইনগতভাবে অপারেশন করে নাই। আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন অর্ডিন্যান্স ১৯৭৯ এর ৬ ধারা লঙ্ঘন করে অভিযান চালানো হয়েছে। এরপর তারা আসামিকে গ্রেপ্তার করে উত্তরাতে তাদের অফিসে নিয়ে গেছে। তাকে নিজেদের কাছে প্রায় ২৪ ঘণ্টা রাখার পর থানায় হস্তান্তর করা হয়। অথচ এত ঘণ্টা আটক না করে থানায় বা কোর্টে পাঠাতে পারতেন।
জামিনের পক্ষে যুক্তি দিয়ে তিনি বলেন, পরীমনি কোনো খুনের আসামি নন। কোনো মাদকের ডিলারও নন। তাহলে তাকে কেন এত ঘণ্টা আটক রাখা হলো? এছাড়া তিনি একজন প্যানিক অ্যাটাকের রোগী। দীর্ঘ সময় পুলিশ কাস্টডিতে থেকে অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন। চিকিৎসার স্বার্থে হলেও তাকে জামিন দেয়া হোক। দরকার হলে তার পাসপোর্ট জমা নিন। তবুও জামিন দিন।
উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত জামিনের আবেদনটি নামঞ্জুর করে পরীমনি ও রাজকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। আদেশের পর তাকে প্রিজন ভ্যানে করে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগারে নেয়া হয়।
পরীমনির মামলার শুনানির পরপরই একই আদালতে বনানী থানার মাদক মামলায় প্রযোজক রাজ ও তার সহযোগী সবুজের মামলার শুনানি হয়। এ সময় আদালত তাদের জামিনও নামঞ্জুর করেন এবং কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
অন্যদিকে, রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় মডেল মরিয়ম আক্তার মৌয়ের জামিনও নামঞ্জুর করেন আদালত। গতকাল দুই দিনের রিমান্ড শেষে তাকে আদালতে হাজির করা হলে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবু সাঈদ আসামিপক্ষের আইনজীবীর জামিন আবেদন নাকচ করে মৌকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এর আগে গত ৫ আগস্ট মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় প্রথম দফায় চারদিন ও পরে ১০ আগস্ট দ্বিতীয় দফায় পরীমনি, রাজ ও তাদের সহযোগী দিপু-সবুজের দুইদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছিলেন আদালত। দ্বিতীয় দফায় রিমান্ড মঞ্জুরের পর পরীমনি আদালত থেকে বেরোনোর সময় চিৎকার করে সবার উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘আমাকে ইচ্ছা করে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে। আর মিডিয়া তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে। সাংবাদিক ভাইয়েরা আপনারা তদন্ত করেন।’
উল্লেখ্য, গত ৪ আগস্ট বিকালে পরীমনির বনানীর বাসায় প্রায় চার ঘণ্টা তল্লাশি শেষে পরীমনিসহ তিন জনকে আটক করা হয়। এ সময় তার বাসা থেকে বিদেশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মদ, এলএসডি উদ্ধার করা হয়। পরে তার দেয়া তথ্যে একই রাতে বনানীর ৭ নম্বর রোডে পরীমনির বন্ধু রাজের বাসায় অভিযান পরিচালনা করে র‌্যাব। এ সময় তার বাসা থেকেও বিদেশি মদ উদ্ধার হয়। এ ঘটনায় বনানী থানায় র‌্যাব বাদী হয়ে পরীমনি ও রাজের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের একটি ধারায় এবং রাজ ও সবুজের বিরুদ্ধে একই আইনে আরেকটি ধারায় পৃথক দুইটি মামলা দায়ের করে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়