খুলনায় মন্দির ও প্রতিমা ভাঙচুর : সম্প্রীতি পরিষদ ও বিশিষ্ট নাগরিকদের প্রতিবাদ

আগের সংবাদ

হার্ড ইমিউনিটি কতটা সম্ভব : নতুন নতুন ধরন নিয়ে শঙ্কা >> টিকার সুফল কিছুটা হলেও মিলবে : আশা বিশেষজ্ঞদের

পরের সংবাদ

নব্য জেএমবির ফোরকানসহ গ্রেপ্তার ৩ : গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় বোমা হামলার পরিকল্পনা ছিল

প্রকাশিত: আগস্ট ১২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ১২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : অনলাইনে বিভিন্ন সিক্রেট অ্যাপ ব্যবহার করে বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ দিতেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের ছাত্র জাহিদ হাসান ওরফে রাজু ওরফে ইসমাঈল হাসান ওরফে ফোরকান ভাই। বোমা বানাতে পারদর্শী হওয়ায় সংগঠনের কেউ কেউ তাকে বোমা মীজান নামেও ডাকতো। তারই বানানো বোমায় গত কয়েক বছরে ১০-১২টি পুলিশ বক্সে বোমা হামলার চেষ্টা চালায় নব্য জেএমবির সদস্যরা। সবশেষ ফোরকান ড্রোনে বোমা যুক্ত করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলার পরিকল্পনা করেছিল। পাশাপাশি বড় কোনো রাসায়নিক কোম্পানিতে চাকরি নিয়ে বড় ধরনের বিস্ফোরক তৈরির পরিকল্পনাও ছিল তার।
গতকাল বুধবার বেলা ১২টার দিকে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি) প্রধান মো. আসাদুজ্জামান। এর আগে, গত মঙ্গলবার রাজধানীর কাফরুল এলাকা থেকে দুই সহযোগীসহ ফোরকানকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার সহযোগীরা হলেন- সাইফুল ইসলাম মারুফ ওরফে বাসিরা ও রুম্মান হোসেন ফাহাদ ওরফে আব্দুল্লাহ। এ সময় তাদের কাছ থেকে বিস্ফোরক পদার্থ, ঢাকনাযুক্ত জিআই পাইপ, রিমোট কন্ট্রোল ডিভাইস, লোহার বল, সাংগঠনিক কাজে ব্যবহৃত ৩টি মোবাইল ফোন ও ১টি ট্যাব উদ্ধার করা হয়।
সিটিটিসির প্রধান বলেন, গত কয়েক বছরে ১০ থেকে ১২টি পুলিশ বক্সে বোমা হামলার চেষ্টা চালায় নব্য জেএমবি’র সদস্যরা। বোমাগুলো ছিল একই ধরনের। যারা বোমগুলো বানায় তাদের বিভিন্ন সময় অভিযানে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর নতুন করে আবার মেলে একই ধরনের বোমার খোঁজ। ফলে তদন্তে নামে সিটিটিসি। তদন্তের একপর্যায়ে উঠে আসে নব্য জেএমবির সদস্য জাহিদের নাম। তিনিই অনলাইনে বিভিন্ন সিক্রেট অ্যাপ ব্যবহার করে কর্মীদের বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ দিতেন।
গ্রেপ্তার জাহিদ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নে অনার্স সম্পন্ন করেন। ২০১৬ সালে অনলাইনে ‘হোয়াইট হাউসের মুফতি’ নামের আইডির মাধ্যমে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে নব্য জেএমবিতে তিনি যোগ দেন। রসায়নে পরদর্শী জাহিদের মেধা ও সাহসের কারণে তাকে এই সংগঠনের সামরিক শাখার সদস্য হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। অল্পদিনেই সে গ্রেনেড ও বোমা তৈরিতে অত্যন্ত দক্ষ হয়ে ওঠে এবং নিত্যনতুন কৌশলে আইইডি (ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) প্রস্তুত করে। এই সংগঠনের যারা বোমা ও গ্রেনেড তৈরি করে তাদের হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দিত জাহিদ।
সিটিটিসির কাছে মোস্ট ওয়ান্টেড জঙ্গি হিসেবে পরিচিত ছিলেন জাহিদ। জাহিদের গ্রামের বাড়ি বরগুনার পাথরঘাটায়। তিনি লেমুয়া আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ২০০৯ সালে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পান। এরপর ২০১১ সালে পাথরঘাটা সৈয়দ ফজলুল হক ডিগ্রি কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পান। পরে ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে ভর্তি হন। স্নাতক সম্পন্ন করলেও জেএমবিতে যোগদানের কারণে মাস্টার্স শেষ করেননি জাহিদ।
সিটিটিসির ধারাবাহিক অভিযানে নব্য জিএমবির শীর্ষস্থানীয় জঙ্গিরা গ্রেপ্তার অথবা নিহত হলে এই সংগঠনটি দুর্বল হয়ে পড়ে। এ সময় জাহিদ গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে চলে যায়। পুনরায় তিনি নতুন আমিরের নেতৃত্বে সংগঠনকে সংগঠিত করার উদ্যোগ নেন। এরই অংশ হিসেবে অনলাইনে আইডি খোলার মাধ্যমে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে যারা অত্যন্ত সাহসী ও সামরিক বিভাগে কাজ করতে আগ্রহী তাদের মধ্য থেকে বাছাইকৃত সদস্যদের বিভিন্ন ধরনের টাইম ও রিমোট কন্ট্রোল বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ দিতেন জাহিদ।
তিনি সংগঠনটির তৎপরতা বাড়াতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে একাধিকবার মিটিং করেছেন। শারীরিক সক্ষমতা বাড়াতে বাংলাদেশ কারাত ফেডারেশনের আওতাধীন মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়াম থেকে কারাতে প্রশিক্ষণও নেন। তিনি বড় কোনো ক্যামিকেল সাপ্লাই কোম্পানিতে চাকরি করে সেখান থেকে এক্সপ্লোসিভ তৈরির উপাদান নিয়ে আইইডি বানানোর পরিকল্পনা ছিল তার।
সর্বশেষ তিনি ড্রোন বানানোর পরিকল্পনা করেছিলেন। ড্রোনের সঙ্গে বিস্ফোরক যুক্ত করে কোনো জায়গায় আক্রমণের পরিকল্পনার পাশাপাশি সামরিক শাখার প্রধান নিযুক্ত হয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, পুলিশ বক্সে হামলার পরিকল্পনার সঙ্গেও তিনি জড়িত ছিলেন। জেএমবির আমিরের নির্দেশে যে সব হামলার ঘটনা ঘটেছে সে সব হামলার মূল সমন্বয়কের ভূমিকায় ছিলেন জাহিদ।
গ্রেপ্তার সাইফুল একজন দক্ষ বোমা তৈরির কারিগর। অনলাইনে জাহিদের কাছ থেকে বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন তিনি। বেশ কয়েকটি বোমা হামলার ঘটনায় তার সম্পৃক্ততার বিষয়ে সে স্বীকার করেছে। সাইফুল ও রুম্মান সংগঠনের ফান্ড তৈরির জন্য ইলেকট্রিক শক থেরাপির মাধ্যমে অজ্ঞান করে ছিনতাই ও ডাকাতি করার জন্য গাজীপুরের টঙ্গী থানার রেলগেট এলাকায় রুম ভাড়া নিয়েছিলেন। গ্রেপ্তারকৃত তিনজনের বিরুদ্ধে কাফরুল থানায় মামলা করা হয়েছে।
এদিকে গ্রেপ্তারকৃত তিনজনকে গতকাল বিকালে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নিভানা খায়ের জেসির আদালতে হাজির করা হয়। এরপর তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাটির সুষ্ঠু তদন্তের জন্য প্রত্যেকের দশ দিন করে রিমান্ড আবেদন করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। পরে শুনানি শেষে আদালত তাদের প্রত্যেককে চারদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়