গণপরিবহন চালু, স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে শঙ্কা : লঞ্চ, বাস ও ট্রেনের অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরু

আগের সংবাদ

স্বাস্থ্যবিধি হটিয়ে খুলল সবই

পরের সংবাদ

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কী হবে?

প্রকাশিত: আগস্ট ১১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ১১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সরকার চলমান লকডাউনের মেয়াদ ১০ আগস্ট পর্যন্ত বর্ধিত করে পরদিন ১১ আগস্ট থেকে সব অফিস, দোকানপাট, গণপরিবহন ইত্যাদি সীমিত পরিসরে খুলে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এমনকি সব ধরনের শিল্প-কলকারখানা খুলে দিয়েছে তার আগেই। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি। করোনার কারণে প্রায় দেড় বছর হতে চলল সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে, আটকে আছে পাবলিক পরীক্ষাগুলোও। ফলে লাখ লাখ শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে, তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে তৈরি হয়েছে শঙ্কা। অসম্পন্ন ঘরের সন্তানদের অনেকেই ঝরে পড়ছে। অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের নিয়ে উদ্বিগ্ন। বখে যেতে শুরু করেছে কারো কারো সন্তান। এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে একটা রোডম্যাপ ঘোষিত হলে উদ্বেগের অবসান হতো। ৩১ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকার ঘোষণা বলবৎ আছে। পরিস্থিতির গুরুতর অবনতি না ঘটলে এরপর শিগগিরই [সম্ভব হলে ১ সেপ্টেম্বর হতে] বিশেষ ব্যবস্থা অবলম্বন করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ঘোষণা অভিভাবকদের আশ্বস্ত করতে পারত। ভরসার কথা এই যে, বর্তমান পরিস্থিতিতে করোনায় মৃত্যুহার প্রায় একই অবস্থানে থাকলেও সংক্রমণের হার না বেড়ে কিছুটা কমছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ৩০ জুলাইয়ের পর টানা ৭ দিন নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণের হার কম ছিল। কমার এ ধারা অব্যাহত থাকবে বলে সবাই আশাবাদী।
শিক্ষা অধিদপ্তরের কোনো কোনো কর্মকর্তা সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের নিচে না নামা পর্যন্ত অপেক্ষার কথা বলছেন। কবে দৃষ্ট হবে তেমন নিম্নহার, আদৌ সে নিম্নহারের দেখা নিকট ভবিষ্যতে মিলবে কিনা- সে রকম নিশ্চয়তা যেহেতু নেই, সেহেতু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বিশেষ ব্যবস্থায় খুলে দেয়ার চিন্তা মাথায় এনে রোডম্যাপ প্রকাশ যুক্তিসঙ্গত। এতে অভিভাবকরা মানসিক দুশ্চিন্তা থেকে রেহাই পাবেন। শিক্ষার্থীদের জীবনেও কিছুটা উজ্জীবতা ফিরে আসবে। ঘরে আবদ্ধ থেকে তারা হাঁসফাঁস করছে। অনলাইন ক্লাস, টেলিভিশনের পাঠ, অ্যাসাইনমেন্ট প্রভৃতি আমাদের দেশের সমাজবাস্তবতায় অকার্যকর। ছাত্রছাত্রীদেরও এসব ব্যাপারে আগ্রহ নেই, ইন্টারনেটের খরচ বহন করার প্রশ্ন তো আছেই অধিকাংশের বেলায়।
পরিস্থিতির গুরুতর অবনতি না হলে, যে বিশেষ ব্যবস্থায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার অভিমত ব্যক্ত করা হচ্ছে সে সম্পর্কে ধারণা হয়তো সবারই আছে। প্রথম ও প্রধান করণীয় হবে শিক্ষক-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের দ্রুত টিকার আওতায় আনা। দ্বিতীয় কাজ হবে খোলার পর স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলার বাধ্যবাধকতা আরোপ। প্রথমটির আয়োজন অর্থাৎ টিকার ব্যবস্থা সরকারকেই করতে হবে। দ্বিতীয় কাজ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার দায়িত্ব নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের ওপর ছেড়ে দিলেই চলবে। প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব নিজেদের স্বার্থেই পালন করবে। তাছাড়া অভিভাবকরা সন্তানের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এ ব্যাপারে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করবেন- এমনটি নিশ্চিত ধরে নেয়া যায়।
টিকার সরবরাহ অপ্রতুল আমরা জানি, সে কারণে সরকারকে অগ্রাধিকার ঠিক করেই এগোতে হবে। এই অগ্রাধিকারের তালিকায় শিক্ষার্থীদের অগ্রগণ্য ধরা বিবেকবানের কাজ হবে, কেননা এরাই জাতির ভবিষ্যৎ। ভবিষ্যতের পথ চেয়েই বর্তমানের কর্মধারা নির্ণীত হয় বা হওয়া উচিত। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার দাবি নতুন নয়, এ নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে বিভিন্ন সময়ে দাবি উঠছে। শিক্ষা নিয়ে যারা গবেষণা করেন, কিংবা যারা এ খাতটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তারা পথও দেখাচ্ছেন বিভিন্ন উপায়ে। পালাক্রমে ক্লাস নিয়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন সমস্যার প্রতিকার বিষয়ে তাদের বক্তব্য অহরহ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষেরও যে এ ব্যাপারে ভাবনা-চিন্তা নেই তা নয়, তাদের প্রস্তুতির কথাও শুনি মাঝে মধ্যে। তবে উদ্যোগ নিয়েও পিছিয়ে আসার প্রবণতা দেখি তাদের মধ্যে। সপ্তাহে দুদিনও যদি ক্লাসের ব্যবস্থা করা যায় তাহলেও অনিশ্চয়তা হতে রেহাই পায় বিশাল একটি শ্রেণি।
কেবল শিক্ষার্থী নয়, শিক্ষক-কর্মচারীরাও তাদের প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন। এদের যে অংশটি সরকারি সহায়তা পান না বা যাদের প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত নয়, তাদের দিন কাটছে চরম অর্থকষ্টে। সামান্য সহায়তাও তারা সরকারের কাছ থেকে পাচ্ছেন না, থেকে থেকে কেবল জীবিকার অবলম্বন বন্ধেরই নোটিস পাচ্ছেন। শিক্ষক-কর্মচারীদের এমন অসহায়তার খবর প্রায়ই পত্রপত্রিকায় শিরোনাম হচ্ছে। মানবেতর জীবনযাপন করছেন অনেকেই। দীর্ঘ সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ব্যবসায়িক এই গোষ্ঠীটির আয়-রোজকার বলতে কিছু নেই, পুঁজি ভেঙে খেতে খেতে এখন পুঁজিও নিঃশেষ হওয়ার পথে। এরা সবাই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, অন্য ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা যেমন প্রণোদনার ভাগীদার হতে পারেননি, তেমনি তারাও না।
লকডাউন প্রকৃত লকডাউন না হলে সেটি কোনো কাজে দেয় না। আমাদের দেশের বাস্তবতায় এ সত্যের চরম প্রকাশ দেখছি। সম্পদশালীরাও ঘরে থাকতে চান না, যাদের সম্পদ নেই তাদের তো ঘরে থাকার উপায়ও নেই। দিনের খাবার যারা দিনে জোগাড় করেন, কিংবা যারা অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মে নিয়োজিত তাদের সংখ্যাই সমাজে বেশি। সুবিধাবঞ্চিত এসব মানুষের ঘরে যদি সহায়তা পৌঁছানো যেত তাহলে হয়তো চিত্র ভিন্নরকম হতো। বাস্তবে সে সাধ্য সরকারের নেই, তাদের হাতে এমনকি সঠিক তথ্য ভাণ্ডারও নেই, যাকে ভিত্তি ধরে অসহায় মানুষদের ঘরে সহায়তা পৌঁছানো যেত। অধিকন্তু আছে দুর্নীতি, সহায়তা যাদের পাওয়ার কথা তারা পাচ্ছেন না, বড় একটি অংশ চলে যাচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগী অথবা টাউট-বাটপারদের পকেটে। এ অবস্থায় সরকারের পিছু হটা ছাড়া গত্যন্তর নেই। হতে যাচ্ছেও তেমনটি। বিধিনিষেধ শিথিল করে এবার টিকা ও স্বাস্থ্যবিধির ওপর কঠোরতা আরোপের কথা বলা হচ্ছে। প্রসঙ্গক্রমে অপটু একটি সিদ্ধান্তের কথা না বললেই নয়। গণপরিবহন বন্ধ রেখে পোশাক কারখানা ও রপ্তানিমুখী অন্য শিল্প প্রতিষ্ঠান হঠাৎ খুলে দেয়ার ঘোষণা যে কতটা অমানবিক ছিল টেলিভিশনের পর্দায় তা চাক্ষুষ করা গেছে।
টিকা নিয়েও উদ্বেগের শেষ নেই। টিকা প্রদানের সক্ষমতা বিচারে বাংলাদেশ প্রথম সারির দেশ এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। গেল ফেব্রুয়ারি মাসে টিকা প্রদানের কার্যক্রম শুরুও হয়েছিল ভালোমতো। রপ্তানিকারক দেশ ভারত তাদের নিজের দেশে সৃষ্ট একই সমস্যার কারণে প্রতিশ্রæত টিকা সরবরাহে অপারগতা প্রকাশ করলে সেই কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়ে। পুনরায় শুরু হয়েছে একই কার্যক্রম। স্বল্পতম সময়ে বিপুল সংখ্যক মানুষকে টিকা দেয়ার কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। তার জন্য ন্যূনতম বয়সসীমা ১৮ বছর করার চিন্তাভাবনা চলছে। অপর্যাপ্ত জোগানের কারণে এ কর্মসূচি যাতে আবারো ব্যাহত না হয় সেটি নিশ্চিত করা এখন সরকারের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ। টিকার ওপর নির্ভর করছে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক-কর্মচারীদের ভবিষ্যৎ, অন্য কথায় জাতিরও ভবিষ্যৎ। তাদের টিকা নিশ্চিত একান্ত জরুরি।

মজিবর রহমান : কলাম লেখক।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়