গণপরিবহন চালু, স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে শঙ্কা : লঞ্চ, বাস ও ট্রেনের অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরু

আগের সংবাদ

স্বাস্থ্যবিধি হটিয়ে খুলল সবই

পরের সংবাদ

রোহিঙ্গা সংগঠন এআরএসপিএইচ : মিয়ানমার সরকারের মতোই বিশ্বব্যাংকের প্রস্তাব

প্রকাশিত: আগস্ট ১১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ১১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কক্সবাজার প্রতিনিধি : বাংলাদেশের নাগরিকত্ব নয়, মাতৃভূমি মিয়ানমারে পূর্ণ নাগরিক অধিকার নিয়ে ফিরতে চায় রোহিঙ্গারা। এমন দাবি করে গত সোমবার একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের সংগঠন ‘আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস এন্ড হিউম্যান রাইটস’ (এআরএসপিএইচ)। বিশ্বব্যাংকের প্রস্তাব সম্পর্কে অবগত হয়ে কক্সবাজারে বসবাসকারী রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি হিসেবে এ সংগঠনের চেয়ারম্যান মহিব উল্লাহ স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছেন।
এতে বলা হয়, আমরা (রোহিঙ্গা) জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিক (এফডিএমএন) হিসেবে ধন্যবাদসহ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি বাংলাদেশ সরকার ও জনগণকে তারা আমাদের সীমান্ত খুলে আন্তরিকভাবে আশ্রয় দেয়।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মানবিক সংগঠনগুলোর সহযোগিতায় বিশ্বব্যাংক তাদের বাংলাদেশে শরণার্থী-নীতি পর্যালোচনার কাঠামোর অংশ হিসেবে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে সংহত করার প্রস্তাব সম্পর্কে আমরা অবগত হয়েছি। এ প্রস্তাবে বাংলাদেশ সরকারকে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব প্রদানের পরামর্শ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তবে আমরা জানাতে চাই, রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশের নাগরিক হওয়ার কোনো ইচ্ছা নেই। কারণ বাংলাদেশ আমাদের আদি বাসস্থান নয়।
এ পরামর্শ শুধু রোহিঙ্গাদের জন্য আরো সমস্যা তৈরি করবে। যারা এখানে সাময়িকভাবে বসবাস করে। আমাদের লক্ষ্য, মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিয়ে মাতৃভূমিতে ফিরে যাওয়া। তাছাড়া আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের স্বীকৃতি অনুযায়ীও রোহিঙ্গারা রাষ্ট্রহীন নয়। বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দেয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। বিশ্বব্যাংক এবং অন্য আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের কাছে দাবি জানিয়ে রোহিঙ্গা নেতা মহিব উল্লাহ কীভাবে নিরাপদে, মর্যাদায় ও নিরাপত্তার সঙ্গে এবং পূর্ণ নাগরিকত্বের অধিকার নিয়ে ফিরে যেতে পারি তা নিশ্চিত করার বিষয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা করুন।
তিনি জানান, বিশ্বব্যাংকের প্রস্তাব মিয়ানমার সরকারের প্রস্তাবের মতোই, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ভোট দেয়ার অনুমতি দেয়া হয়নি। জোর করে মাতৃভূমি থেকে বের করে দিয়েছে এবং যারা আমাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা করেছে। এসব বিষয়

এড়িয়ে গিয়ে বাংলাদেশে আমাদের নাগরিকত্ব দেয়ার বিশ্বব্যাংকের সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করছি। আমরা দেশে ফিরে সেখানে একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখতে চাই।
সরেজমিন আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা নেতা উখিয়া ১৫নং জামতলী ক্যাম্পের সৈয়দুল্লাহ, কুতুপালং ক্যাম্পের ইলিয়াস, টেকনাফ নয়াপাড়ার মো. ইসলামের কথা হয়। তারা জানান- কক্সবাজার, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ভারতসহ অন্যান্য দেশে কঠিন অবস্থানে থাকা রোহিঙ্গারা প্রত্যাবর্তনের আশায় রয়েছে। এর চেয়েও কঠিন অবস্থানে এখন মিয়ানমারে রোহিঙ্গারা রয়েছে। যাদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তার জরুরি প্রয়োজন রয়েছে। আমরা তাদের সঙ্গে একাত্মতা নিয়ে দাঁড়িয়েছি। আমরা আরাকান থেকে আসা রোহিঙ্গা। আরাকান আমাদের জন্মভূমি। আমরা মিয়ানমারের নাগরিক। রোহিঙ্গারা অন্তর্ভুক্ত না হলে মিয়ানমারে গণতন্ত্র কীভাবে থাকে?
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রোহিঙ্গারা সহিংসতা এবং মৃত্যু থেকে পালানোর চেষ্টা করে। তখন বাংলাদেশে সরকার তাদের আশ্রয় দেয়। ওই সময় রোহিঙ্গারা জাতিসংঘসহ অন্য দেশগুলোর কাছে সহায়তা চায়। সবাই অবগত যে, ক্যাম্পের অবস্থা খুবই কঠিন। এ কঠিন সময়ে রোহিঙ্গারা সেই দেশগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয়তা এবং অগ্রাধিকারগুলো বলতে সক্ষম হয়েছি। সে অনুযায়ী, সহায়তা দিয়েছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়।
এসব দেশ ও সংস্থার প্রতি অনুরোধ জানিয়ে এআরএসপিএইচ চেয়ারম্যান মহিব উল্লাহ বলেন, বাংলাদেশের ক্যাম্পে বসবাসকারী শরণার্থী হিসেবে রোহিঙ্গারা বিশ্ব সভায় নিজেদের কথা বলতে পারে না- কিন্তু বিশ্ব সংস্থার সর্বোচ্চ পর্যায়ে রোহিঙ্গা পরিস্থিতির বিষয়টি উত্থাপন করুন। তবে আমাদের জন্য এমন সমাধানের অনুরোধ করবেন না যা আমরা নিজেরাই চাইনি।
উল্লেখ্য, রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে স্থায়ী করার বিশ্বব্যাংকের এমন পরামর্শ প্রস্তাব বাংলাদেশ সরকার নাকচ করে দেয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম আবুল মোমেন বরং দ্রুত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার আহ্বান জানান। তবে বিশ্বব্যাংকও শুধু রোহিঙ্গাদের নিয়ে এমন প্রস্তাব চূড়ান্ত করেনি বলে বিবৃতি দিয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়