গণপরিবহন চালু, স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে শঙ্কা : লঞ্চ, বাস ও ট্রেনের অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরু

আগের সংবাদ

স্বাস্থ্যবিধি হটিয়ে খুলল সবই

পরের সংবাদ

মহামারিকালে মেকআপ শিল্পীদের বিবর্ণ জীবন

প্রকাশিত: আগস্ট ১১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ১১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

শরীফা বুলবুল : মঞ্চে কিংবা পর্দায় ঝলমল আলোয় ভাসা অভিনয়শিল্পীদের স্বাভাবিক রূপ-সৌন্দর্যকে আরো উজ্জ্বল আরো প্রাণবন্ত করে তোলা মেকাপশিল্পীদের নিজেদের জীবন এখন বিবর্ণ হয়ে গেছে। অনিশ্চয়তা গ্রাস করেছে তাদের জীবন ও জীবিকা। গত দেড় বছরের করোনার তাণ্ডবে মঞ্চের আলো নিভে গেছে। একই সঙ্গে থমকে গেছে পর্দার কার্যক্রমও। দীর্ঘদিন ধরেই বেকার জীবন কাটাতে বাধ্য হচ্ছেন মেকাপশিল্পীরা। আবার কেউ কেউ জীবন বাঁচাতে বেছে নিচ্ছেন ভিন্ন পেশা। কেউ আবার স্যাটেলাইট চ্যানেলে চাকরির খোঁজখবর করছেন। কবে এই বেকার জীবনের অবসান হবে, কবে আবার জীবিকা ফিরবে তা ভেবে চোখে অন্ধকার দেখছেন তারা। সরকারের সহায়তা চেয়েছেন অনেকেই।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কেবল রাজধানী ঢাকা শহরেই রয়েছে শতাধিক মেকাপশিল্পী। এর বাইরে বহু মেকাপ শিল্পী ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছেন দেশজুড়ে। কেউ কেউ পেশাজীবন শুরু করেছেন সেই সত্তর দশক থেকে। যারা জীবনের পুরোটা সময়ই এই পেশায় নিজেদের উৎসর্গ করে দিয়েছেন। তাদের কয়েক দশকের এই পেশাগত জীবনে এমন দুর্যোগ দেখেননি। বিভিন্ন নাটকের দলে দৈনিক ভিত্তিতে কাজ করা এসব শিল্পী এখন কঠিন মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে মেকাপের কাজে যুক্ত রয়েছেন মেকাপ শিল্পী মোহাম্মদ আলী বাবুল। এ কাজ ছাড়া তিনি আর কিছু শেখেননি। জানতে চাইলে শিল্পী মোহাম্মদ আলী বাবুল ভোরের কাগজকে বললেন, গত দেড় বছর অনেক দুরবস্থায় আছি। অনাহারে অর্ধাহারে দিন যাচ্ছে। স্ত্রী মারা যাওয়ায় বাধ্য হয়ে দুপুর আর রাতে বাকিতে খাওয়ার জন্য একটা হোটেলের সঙ্গে চুক্তি করে নিয়েছি। নানা ধরনের রোগে ধরেছে, বুকের মধ্যে প্রচণ্ড ব্যথা, ডাক্তার বলেছে পরীক্ষা করাতে। টাকার অভাবে পরীক্ষা করাতেও পারছি না। ওষুধ কেনার পয়সা নেই।  
গেরিলা সিনেমা ও মৃত্তিকা মায়ার জন্য জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত এই শিল্পী আরো বলেন, এই পেশা আমার নিজের সন্তানের মতোই। এটাকে

আঁকড়ে ধরে বেঁচে আছি। ছয় হাজার টাকা ঘরভাড়া। তাও ঠিক মতো দিতে পারছি না। দৈনিক কাজ হলে পয়সা পাই, কাজ না হলে পয়সাও নেই। অনেকে কাজ করিয়ে টাকাও দেন না। এভাবেই চলছে দুঃখের জীবন। করোনার শুরুর দিকে শিল্পকলা আর থিয়েটার স্বজন থেকে কিছু সহায়তা পেয়েছি। এবার কেউ খোঁজও নেয়নি। জানি না সামনের দিনগুলো চলব কিভাবে। সরকার ফিরে চাইলে প্রাণে বেঁচে যাব। নইলে মরণ অনিবার্য।
বাবুলের মতোই করোনায় বিবর্ণ হয়ে গেছে জনী সেনের জীবনও। তিরিশ বছরেরও অধিক সময় ধরে এ পেশায় জড়িয়ে রেখেছেন নিজেকে। যিনি একাধারে ছয়টি নাট্য গ্রুপের সঙ্গে কাজ করেন। এ ছাড়া ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইউল্যাবেও মেকাপ শিল্পের কাজ করেন।  তিনি বলেন, দৈনিক ভিত্তিতে কাজ করি। গত দেড় বছর ধরে পুরোপুরিই বেকারত্বের বোঝা টানছি। ধার দেনা করেই বেঁচে আছি। প্রতি মাসে ১০ হাজার বাড়ি ভাড়া, জমে জমে অনেক হয়ে গেছে। এতো টাকা কোথায় পাই, কার কাছে যাই? গত বছর করোনা শুরুর দিকে থিয়েটার স্বজন এবং লোক নাট্যদল বনানী কিছু সহায়তা দিয়েছিল। এরপর আর কেউ খোঁজও নেয়নি। সরকার তো আমাদের দেখে না। অথচ জীবনটা এ পেশাতেই কাটিয়ে দিলাম।
তিনি বলেন, একেবারে দেয়ালে পীঠ ঠেকে গেছে। অন্য পেশায় যাওয়া ছাড়া গতি দেখছি না। কিন্তু এতদিনের পেশা ছাড়তে মন কাঁদছে। আমাদের এ চোখের জলে কারো হৃদয় ভিজবে?
দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে জড়িয়ে রয়েছেন চট্টগ্রামের শাহীনুর সারোয়ার। যিনি একাধারে মেকাপ ও নাট্যশিল্পী। করোনার ধাক্কায় এই শিল্পীর জীবন বড্ড নাজুক হয়ে পড়েছে। তবু নিজের কষ্টের কথা কাউকে বলতে বিব্রতবোধ করছেন।
তিনি বলেন, অভিনয় আমার নেশা, মেকাপ করা আমার পেশা। গত দেড় বছর ধরেই কাজ বন্ধ থাকায় ঘরেই বসে আছি। মাঝে লকডাউন শিথিল হলে সিটিভির ঈদের অনুষ্ঠান এবং মঞ্চের কাজ করেছি। এরপর থেকে একেবারে গৃহবন্দি, সেই সঙ্গে আয়ও বন্ধ। অনন্যেপায় হয়ে আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে ধারদেনা করে কোনোভাবে টিকে আছি। কারো কাছে কিছু চাইতেও পারি না। ভীষণ বিব্রত বোধ করি।
নিবেদিতপ্রাণ এই শিল্পী বলেন, গত বছর চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমি থেকে একটি ত্রাণের প্যাকেট এবং ঢাকা থেকে থিয়েটার স্বজন সহায়তা করেছে। এ ছাড়া করোনাকালীন আর কোনো সহায়তাও পাইনি। তবে দেয়ালে পীঠ ঠেকে যাওয়া এই আমি চাই সরকারই সংস্কৃতিকর্মীদের পাশে দাঁড়াক। আমরা হেরে গেলে সংস্কৃতিই তো টিকে থাকবে না।
মেকাপ শিল্পী লুৎফর রহমান জাহাঙ্গীর নাটকের জন্য সারাজীবন অকৃদারই রয়ে গেলেন। তিনি একাধারে নাটক এবং মেকাপশিল্পী। তিনি বলেন, গত বছর করোনাকালে শিল্পকলা একাডেমি আর থিয়েটার স্বজন সহায়তা করলেও এ বছর কেউ একবার খবরও নেয়নি। অথচ জীবন থমকে গেছে করোনার থাপ্পড়ে। চিন্তা করছি এই পেশা থেকে বিদায় নেব। কয়েকটা চ্যানেলের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছি। জীবনের বোঝা টেনে টেনে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি, আর সহ্য হচ্ছে না।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়