নির্ধারণ হবে আশুরার তারিখ : জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভা বসছে আজ

আগের সংবাদ

সংক্রমণ ঠেকানোর কৌশল কী

পরের সংবাদ

বাউফলে সুস্থ ব্যক্তিরাও পাচ্ছে প্রতিবন্ধী ভাতা!

প্রকাশিত: আগস্ট ১০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ১০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

অতুল পাল, বাউফল (পটুয়াখালী) থেকে : বাউফলে কারসাজি করে টাকার বিনিময় মেডিকেল সনদ নিয়ে সরকারের সামাজিক নিরপত্তা কর্মসূচির আওতায় সুস্থ-সবল ব্যক্তিরা পাচ্ছে প্রতিবন্ধী ভাতা। এমন কয়েকজন ভুয়া প্রতিবন্ধীর সন্ধান মিলছে উপজেলার কেশবপুর ইউনিয়নের ভড়িপাশা গ্রামে। ভুয়া ওই প্রতিবন্ধীরা এক বছর ধরে নিয়মিত ভাতা উত্তোলন করলেও এর দায় সংশ্লিষ্ট কেউই নিতে চাচ্ছে না।
সরেজমিন খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, উপজেলার কেশবপুর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মো. কাদের মাস্টারের ছেলে মো. মিজানুর রহমান একজন সুস্থ-সবল মানুষ। পেশায় সে একজন কৃষক। তার রয়েছে একাধিক মাছের ঘের ও কৃষি খামার। সে পাচ্ছে প্রতিবন্ধী ভাতা। একই গ্রামের মো. চান্দু হাওলাদারের মেয়ে মোসা. নুরজাহান বেগম, মো. চাঁন মিয়া ফরাজীর ছেলে আ. হক ফরাজী, মো. আফসের মল্লিকের মেয়ে মোসা. নিলুফা বেগম এবং জোনাবালী খানের মেয়ে সাদেজা বেগম পাচ্ছে প্রতিবন্ধী ভাতা। অথচ এরা কেউই প্রতিবন্ধী নয়। আ. হক ফরাজী একজন কীটনাশক ব্যবসায়ী এবং অন্যরা গৃহিণী।
স্থানীয়রা জানান, এরা কেউই প্রতিবন্ধী নয়। সবাই সুস্থ ও সবল মানুষ। স্থানীয় খলিল মেম্বার টাকা খেয়ে তাদের প্রতিবন্ধী তালিকায় নাম দিয়েছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন। সুস্থ হয়েও কেন প্রতিবন্ধী ভাতা নিচ্ছেন এমন প্রশ্ন করা হলে কোনো উত্তর দেয়নি ওই ভুয়া প্রতিবন্ধীরা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, কেশবপুর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য মো. খলিলুর রহমান বাউফল হাসপাতালের একটা চক্রকে ম্যানেজ করে কারসাজির মাধ্যমে সুস্থ মানুষকে প্রতিবন্ধী হিসেবে মেডিকেল সনদ সংগ্রহ করে। পরে উপজেলা সমাজসেবা অফিস থেকে প্রতিবন্ধী পরিচয়পত্র নিয়ে তাদের প্রতিবন্ধী ভাতার তালিকাভুক্ত করে। অভিযোগ উঠেছে, সাবেক ইউপি সদস্য খলিলুর রহমান প্রতি নামে ৫ থেকে ৭ হাজার করে টাকা নিয়েছে। এই কারসাজির সঙ্গে জড়িত রয়েছে বাউফল হাসপাতালের একটি চক্র।
স্থানীয়রা আরো অভিযোগ করেন, মো. খলিলুর রহমান ইউপি সদস্য থাকাকালে কেশবপুর অনৈতিক সুবিধা নিয়ে ইউনিয়নের প্রতিবন্ধী, বয়স্ক, বিধবাসহ অন্যান্য ভাতা তালিকায় অনেক অনিয়ম করেছে এবং অনেকের নামে বিভিন্ন ভাতার কার্ড করে নিজেই উত্তোলন করে নিয়েছে, যা প্রকৃত ভাতাভোগীরা জানেন না। ইউপি সদস্য খলিলুর রহমান শুধু কেশবপুর ইউনিয়নেই নয়, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের সুস্থ মানুষকে প্রতিবন্ধী সাজিয়ে টাকার বিনিময়ে মেডিকেল সনদ সংগ্রহ করে দিয়ে প্রতিবন্ধী ভাতার আওতায় নিয়ে এসেছে। হাসপাতালের একটি চক্র তাকে এই কাজে সহায়তা করেছে।
এ বিষয়ে সাবেক ইউপি সদস্য মো. খলিলুর রহমান বলেন, আমার কাছে প্রতিবন্ধী ভাতার জন্য এলে আমি সুপারিশ করে হাসপাতালে পাঠাই। ডাক্তাররা তাদের প্রতিবন্ধী সনদ দিলে তারা সমাজসেবা অফিসের মাধ্যমে প্রতিবন্ধী ভাতা পায়। সুস্থ ব্যক্তিদের কীভাবে প্রতিবন্ধী হিসেবে সুপারিশ করেছেন এমন প্রশ্নের কোনো উত্তর সে দিতে পারেনি।
কেশবপুর ইউনিয়নের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ সালেহ উদ্দিন পিকু বলেন, আমি নতুন চেয়ারম্যান হয়েছি। এগুলো সাবেক চেয়ারম্যানের সময় হয়েছে।
বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. প্রশান্ত কুমার সাহা বলেন, এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। বাউফল উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান জানান, প্রতিবন্ধী মেডিকেল সনদ ও ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রতিবন্ধী যাচাই-বাছাই কমিটির মাধ্যমে তালিকা আমাদের কাছে জমা দেয়া হয়। আমরা শুধু এটা বাস্তবায়ন করি। যদি কোনো অনিয়ম হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে বাউফল উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা প্রতিবন্ধী ভাতা বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি আবদুল মোতালেব হাওলাদার বলেন, তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়