নির্ধারণ হবে আশুরার তারিখ : জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভা বসছে আজ

আগের সংবাদ

সংক্রমণ ঠেকানোর কৌশল কী

পরের সংবাদ

বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে পাকিস্তানিদের মিথ্যাচার : উপযুক্ত জবাব দেয়ার তাগিদ বিশ্লেষকদের

প্রকাশিত: আগস্ট ১০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ১০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে দাঁড়িয়েও পরাজয়ের শোক ভুলতে পারেনি পাকিস্তান। বাংলাদেশ জন্মের পরও দীর্ঘদিন বাংলাদেশকে পাকিস্তানের সঙ্গে কনফেডারেশন করার অপচেষ্টা করেছেন জুলফিকার আলী ভুট্টো। ভুট্টোদের সেই আশায় ছাই দিয়ে দারিদ্র্যের তকমা ঘুচিয়ে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশ। তবুও নিজেদের পরাজয়ের প্রতিশোধ স্পৃহা মাঝেমাঝেই মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে পাকিস্তানিদের। সেই ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ধারাবাহিক মিথ্যাচার করে আসছে দেশটি। সম্প্রতি ফের দেশটির বিভিন্ন গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ইউটিউবে বাংলাদেশের জাতির পিতা ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মিথ্যাচার চালাচ্ছে। মিথ্যাচারের উপযুক্ত জবাব দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষক, ইতিহাসবিদ ও বিশ্লেষকরা। এদিকে সরকারপক্ষ বলছে, পাকিস্তানের সরকার অপপ্রচার করলে এর জবাব দেয়া হবে। ব্যক্তি বিশেষ করলে সরকারের কিছু করার নেই।
শোকের মাসে মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে মিথ্যা প্রচারে লিপ্ত হয়েছে পাকিস্তানি গণমাধ্যম। বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশের জনগণ কখনো পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে চাননি, মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানি সৈন্যরা কোনো গণহত্যা করেনি, পাকিস্তানের প্রতি বিদ্বেষের কারণে ভারত ১৯৭১ সালে পাকিস্তান ভেঙেছে এবং ভারতীয় সৈন্য ও মুক্তিবাহিনী নির্বিচারে নিরীহ পাকিস্তানিদের হত্যা করেছে- এমন ইতিহাস বিকৃতিতে মেতে উঠেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাকিস্তানি টেলিভিশনের একটি অনুষ্ঠান প্রচারিত হচ্ছে যেখানে বলা হয়েছে, বঙ্গবন্ধু কখনো পাকিস্তান ভেঙে বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চাননি। তার ৭ মার্চের অবিস্মরণীয় ভাষণসহ বেতার ও টেলিভিশনের কিছু ভাষণের অংশবিশেষ উদ্ধৃত করে এতে দেখানো হয়েছে- পশ্চিম

পাকিস্তানকে তিনি ‘ভাই’ বলছেন, ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে আলোচনার কথা বলছেন কিংবা ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ বলছেন। এতে আরো বলা হয়েছে- একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদারবাহিনীর শোচনীয় আত্মসমর্পণ এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংবাদে বঙ্গবন্ধু নাকি ক্ষুব্ধ হয়ে পাকিস্তানিদের বলেছিলেন, তিনি রেডিও টেলিভিশনে ভাষণ দিয়ে বাঙালিদের উদ্দেশে পাকিস্তানের অখণ্ডতার কথা বলবেন।
জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ভোরের কাগজকে বলেন, এ ব্যাপারে আমাদের চোখে কিছু পড়েনি। যদি ব্যক্তি বিশেষ কেউ করে থাকে তাহলে কিছু বলার নেই। তবে পাকিস্তান সরকার এ ধরনের অপপ্রচার করলে আমরাও সরকারিভাবে এর জবাব দেব।
এ ব্যাপারে মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ভোরের কাগজকে বলেন, একাত্তরে কারাবন্দি বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রদ্রোহী মামলায় ফাঁসির আদেশ দিয়ে কবর পর্যন্ত খুঁড়েছিল পাকিস্তান। এরমানে বঙ্গবন্ধু অখণ্ড পাকিস্তান চেয়েছেন- এমন মন্তব্যে তাদের দ্বিচারিতা ও সর্বৈব মিথ্যাচার প্রমাণিত। অন্যদিকে সারা বিশ্ব জানে, একাত্তরের ২৫ মার্চ থেকে পাকিস্তানিরা এদেশে গণহত্যা চালিয়েছে। কাদের মোল্লার ফাঁসির সময় তাদের সংসদে নিন্দা জানিয়েছে। সবই এদের ধারাবাহিক মিথ্যাচার। আমি এখনো পুরো বিষয়টি জানি না। আগে জানব, পরে ব্যবস্থা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
পাকিস্তানের গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের এহেন কুরুচিপূর্ণ মিথাচারে ক্ষোভপ্রকাশ করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, সরকারের উচিত এখনই এর জবাব দেয়া। নতুবা এদের অপপ্রচার দিন দিন বাড়বে। এ ব্যাপারে ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন ভোরের কাগজকে বলেন, একশ বছরেও খাসলাত বদলাতে পারবে না পাকিস্তান। একাত্তরে বৃহৎ সামরিক শক্তি ছিল পাকিস্তান। আমেরিকা, চীন তাদের পক্ষে ছিল। তবুও বাংলাদেশের কাছে পরাজিত হয়েছে। এটি মানতে পারেনি। আইএসআইকে সক্রিয় রেখেছে দেশে। যুদ্ধাপরাধের বিচার বন্ধ করতে দেশে দেশে তাদের কূটনৈতিক মিশন কাজ করেছে। যতক্ষণ প্রতিশোধ না নিতে পারবে ততদিন তাদের মিথ্যাচার চালাবে। এক্ষেত্রে সরকারের কঠোর হওয়া ছাড়া বিকল্প নেই। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কঠোর না হলে তারা একদিকে এসব অপপ্রচার সত্য বলে ধরে নেবে এবং আরো বেশি অপপ্রচার চালাবে। পাকিস্তানের এমন মিথ্যাচার সহ্য করা হলে আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং মুজিববর্ষের অর্জন অর্থহীন হয়ে যাবে।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির ভোরের কাগজকে বলেন, পাকিস্তানের একমাত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষকে বিভ্রান্ত করা। ইতিহাসকে বিকৃতি করে নতুন প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করা। পাকিস্তানের ভূতেরা এখনো দেশের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঘাপটি মেরে রয়েছে। তারা এসব উসকে দিচ্ছে। স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে পাকিস্তানের মিথ্যাচার দেশের জন্য অপমানজনক। সরকারকে কঠোরভাবে এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। সর্বস্তরে প্রতিবাদ হওয়া প্রয়োজন।
শুধু পাকিস্তান নয়, পাকিস্তানের সঙ্গে সুর মিলিয়ে একই ধরনের কথা বলে সাবেক বিরোধীদল বিএনপি। দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ একাধিক শীর্ষ নেতা বিভিন্ন সময় বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। ২০১৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর লন্ডনের এক আলোচনা সভায় তারেক রহমান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে ‘রাজাকার’ ও ‘পাকবন্ধু’ বলে বক্তব্য দেন। এখানেই থেমে থাকেননি তিনি। এরই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেন তিনি। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে পাকিস্তানের বক্তব্য ও বিএনপির বক্তব্য একই সূত্রে গাঁথা বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, বিএনপি ও পাকিস্তানের সুর একই। কাদের মোল্লাকে নিয়ে পাকিস্তান যা বলেছিল, একই কথা বলেছিলেন খালেদা জিয়াও। তার ছেলে তারেক রহমানও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে মিথ্যাচার করে।
অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন বলেন, আমাদের দেশে দুটি পাকিস্তানপন্থি দল রয়েছে। বিএনপি এবং জামায়াত। এরাও পাকিস্তানকে উসকে দেয়। মুক্তিযুদ্ধ এবং বঙ্গবন্ধু নিয়ে অপপ্রচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো প্রয়োজন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়