নির্ধারণ হবে আশুরার তারিখ : জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভা বসছে আজ

আগের সংবাদ

সংক্রমণ ঠেকানোর কৌশল কী

পরের সংবাদ

পরী-পিয়াসা-মৌ-রাজের ফাঁদে আটকাদের অনুরোধে অভিযান : পিয়াসার আন্ডারওয়ার্ল্ড কানেকশনের তথ্য মিলছে

প্রকাশিত: আগস্ট ১০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ১০, ২০২১ , ১০:১৯ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : আলোচিত চিত্রনায়িকা পরীমনি, মডেল পিয়াসা, মৌ এবং প্রযোজক রাজের ব্ল্যাকমেইলিংয়ের শিকার ধনাঢ্য ব্যবসায়ীদের অনুরোধেই এই চক্রের বিরুদ্ধে অভিযানে নামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অপরাধ জগতেও বিচরণ ছিল এই চক্রের। অনেক শীর্ষ সন্ত্রাসী তাদের ঘনিষ্ঠ। এমনকি কারাবন্দি শীর্ষ সন্ত্রাসীদের সঙ্গেও তাদের অনেকের যোগাযোগ ছিল। ধনাঢ্যদের ব্ল্যাকমেইল করে টাকা হাতাতে এসব সন্ত্রাসীকে তারা ব্যবহার করে আসছিলেন। গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে উদ্ধার করা মোবাইল ফোন ও ডিভাইস থেকে এ সংক্রান্ত ক্লু মিলেছে বলে জানা গেছে। প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজ ছিলেন এই চক্রের হোতা। সম্প্রতি গ্রেপ্তার হওয়া পরীমনি, পিয়াসা, মৌ ছাড়াও আরো অনেক নায়িকা ও মডেল রয়েছে তার চক্রে। রাজের পরিকল্পনাতেই ফাঁদ তৈরি হতো।
পরীমনি, পিয়াসা, জিসান ও মিশু মাদক মামলায় বর্তমানে সিআইডিতে রিমান্ডে রয়েছেন। মাদকের উৎস খোঁজার পাশাপাশি তাদের ব্ল্যাকমেইলিংয়ের বিষয়েও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আজ মঙ্গলবার তাদের আদালতে পাঠিয়ে ফের রিমান্ডে নেয়া হতে পারে। এদিকে পরীমনি, রাজ ও মিশুসহ ১০ মামলা তদন্ত করতে চায় র‌্যাব। এ বিষয়ে গতকাল সোমবার পুলিশ হেডকোয়ার্টারে বাহিনীর পক্ষ থেকে চিঠি দেয়া হয়েছে।
এদিকে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার (ডিএমপি) শফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, চিত্রনায়িকা পরীমনি, ফারিয়া মাহাবুব পিয়াসা ও মরিয়ম আক্তার মৌর বাসায় যাতায়াত ছিল এমন ব্যবসায়ী বা ব্যক্তিদের কোনো তালিকা করা হচ্ছে না। গতকাল সোমবার দুপুরে ডিএমপি কমিশনার তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা জানান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) কৃষ্ণপদ রায় ও ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার ফারুক হোসেন।

ডিএমপির কমিশনার বলেন, পরীমনি, পিয়াসা ও মৌয়ের সঙ্গে বিভিন্ন ব্যক্তির ছবি বা ভিডিও ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে একটি গ্রুপ চাঁদাবাজি করছে বলে তথ্য পেয়েছে পুলিশ। তাদের কবল থেকে রক্ষা পেতে দুই-তিনজন ব্যবসায়ী ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। ভুক্তভোগীরা এসব চাঁদাবাজদের বিষয়ে তথ্য দিলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে পুলিশ। তিনি চাঁদাবাজদের কল রেকর্ড করতে ভুক্তভোগীদের পরামর্শ দেন। এসব কল রেকর্ড পরে পুলিশের কাছে জমা দিতে বলেন। পাশাপাশি এই চাঁদাবাজদের বিষয়ে স্থানীয় থানা বা ডিএমপিকে তথ্য জানাতে অনুরোধ করেন। ডিএমপি কমিশনার আরো বলেন, এখন পর্যন্ত তিনজন ব্যবসায়ী এমন চাঁদাবাজদের হাত থেকে রক্ষা পেতে ডিএমপির সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। লোকলজ্জার ভয়ে গুলশানের আতঙ্কিত একজন ব্যবসায়ী ডিএমপির কমিশনারের সহযোগিতা কামনা করেছেন। ডিএমপি কমিশনার বলেন, কারো সঙ্গে সম্পর্ক থাকা তো বেআইনি নয়- যতক্ষণ পর্যন্ত এ বিষয়ে মামলা না হয়।
চিত্রনায়িকা পরীমনি, মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসার সঙ্গে ‘সম্পর্ক থাকা’ অনেকের নামের তালিকা মেলার খবর ছড়ালেও সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া কাউকে হয়রানি করা হবে না বলে আশ্বস্ত করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালও।
জানা গেছে, শোবিজ জগতের তরুণী ও ব্যবসায়ীদের তথ্য জানতে মডেল ফারিয়া মাহাবুব পিয়াসার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন এক সময়ের আন্ডারওয়ার্ল্ড ডন ও শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলাল। তার কাছ থেকেই এই জগতের তথ্য পেতেন তিনি। আর বাইরে পিয়াসার সঙ্গে যোগাযোগ থাকত হেলালের সহযোগীদের। পিয়াসার পার্টিতে আসা বিশিষ্টজনদের ভিডিও ধারণ করে পরে তাদের ব্ল্যাকমেইল করতেন এই চক্রের সদস্যরাই। এক সময় ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর ও আদাবর এলাকা দাপিয়ে বেড়াতেন পিচ্চি হেলাল। অপরাধ জগত দাপিয়ে বেড়ানো হেলাল দুই দশক ধরে আটক হয়ে কাশিমপুর-১ কারাগারে বন্দি থাকলেও সেখানে বসেই কারাগারের বাইরে চাঁদাবাজি ও মাদক কারবারি চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
সূত্র মতে, পরীমনির বখে যাওয়া জীবন সম্পর্কে নিত্যনতুন তথ্য মিলছে। বাহারি বিদেশি মদের উৎস্য সম্পর্কে মিলছে তথ্য। তার সঙ্গে হাইপ্রোফাইল ব্যক্তিদের সম্পৃক্ততার তথ্য মিললেও তাদের ফাঁসানোর কৌশল ছিল চমকপ্রদ। মহাখালীর বাসিন্দা পরীমনির গাড়িচালক নাজির জানান, পরীমনির কথিত মামা আশরাফুল ইসলাম দিপুর ফোন পেয়ে গত বুধবার তিনি বনানীর বাসায় যান। দীপু বলেছিলেন, পরীমনি ডাক্তার দেখাতে যাবেন। কিন্তু গিয়ে পড়েন র‌্যাবের অভিযানের মধ্যে। র?্যাব তাকেও ধরে নিয়ে গিয়েছিল। ২৪ ঘণ্টা পর ছেড়ে দিয়েছে। তিনি বলেন, পরীমনি ও দীপু হরদম মদ পান করতেন। হাতিরঝিলে ঘুরে বেড়াতেন গাড়ি নিয়ে। দুই মাস আগে পরীমনির গাড়ির ড্রাইভারের চাকরি নেয়া নাজির বলেন, আর নামিদামি মানুষের গাড়ি চালাব না।
র‌্যাব সূত্র জানায়, সম্প্রতি বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে পিয়াসার ঘনিষ্ঠ মোহাম্মদ মাসুদুল ইসলাম জিসান ও শরিফুল ইসলাম মিশুকে গ্রেপ্তার করা হয়। দুজনই পিচ্চি হেলালের পুরনো সহযোগী। তবে তারা হেলালের নির্দেশে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের ভিডিও করে ব্ল্যাকমেইল করতেন কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
একাধিক সূত্রের তথ্য মতে, জিসানের আইফোন-১১ প্রো মোবাইল ফোনে প্রায় শতাধিক অশ্লীল ভিডিও ক্লিপ পাওয়া গেছে। অভিযানে যখন ফোনটি জব্দ করা হয়, তখন সেটি লক করা ছিল। এরপর ‘৬৫৫৫৯২’ পাসওয়ার্ড দিয়ে লক খুলে ফোনের ‘ফটো ভল্ট’ নামে একটি ফোল্ডারে প্রবেশ করে অশ্লীল ছবি ও ভিডিও দেখতে পায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এছাড়া মিশুর কাছে থাকা আইফোন-১২ প্রো মোবাইলটি ফোনটিও লক ছিল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ‘১১১১’ পাসওয়ার্ড দিয়ে লক খুলে ফোনের ‘ফটোস’ ফোল্ডারে প্রবেশ করে শতাধিক ছবি ও ভিডিও দেখতে পায়। তারা পুলিশকে জানান, পিয়াসার পার্টিতে গিয়েই এসব ভিডিও করা হতো। আগে থেকেই তারা জানতেন কোন দিন কারা আসবেন। এছাড়া পিয়াসাকে তারা মাদকও সরবরাহ করতেন। আবার কখনো কখনো তারাও পিয়াসার বাসায় গিয়ে মাদক সেবন করতেন।
পিয়াসার মামলার তদন্তকালে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ পিয়াসা, জিসান ও মিশুকে একত্রে জিজ্ঞাসাবাদ করে। সেখানে পিয়াসা ডিজে পার্টিতে অশ্লীলতা ও মাদক সেবনের বিষয়টি স্বীকার করলেও এসব যে ভিডিও হচ্ছে, তা জানতেন না বলে দাবি করেন।
সূত্র জানায়, পিয়াসার বাসায় আয়োজিত প্রতিটি পার্টিতে যেতেন জিসান ও মিশু। পিচ্চি হেলালের সঙ্গে তার দুই সহযোগী ও পিয়াসার তথ্য পাওয়া গেছে। তবে হেলাল তাদের ভিআইপিদের ভিডিও ধারণের নির্দেশনা দিয়েছেন কিনা, সে বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে।
মামলার তদন্তের বিষয়ে সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি ওমর ফারুক বলেছেন, তাদের বাসায় তল্লাশি চালিয়ে কিছু আলামত ও ডিভাইস উদ্ধার হয়েছে। ল্যাপটপ, ডেস্কটপ পাসপোর্ট, মোবাইল, হার্ডডিস্ক ও গাড়ি জব্দ করা হয়েছে।
রাজের দুটি গাড়ি জব্দ : সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে গত বুধবার রাতে গ্রেপ্তারের পর প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজকে মাদক মামলায় জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সিআইডির জিজ্ঞাসাবাদকালেই রবিবার রাতে রাজের বনানীর বাসায় তল্লাশি চালায় তদন্ত সংশ্লিষ্ট একটি দল। তল্লাশি অভিযানে একটি হ্যারিয়ার (ঢাকা মেট্রো-গ-১৩-৪৬১৭) ও আরএভি-৪ মডেলের একটি গাড়ি ঢাকা মেট্রো-ঘ-১৫-৬৪০১) জব্দ করা হয়। আজ সোমবার বিকালে যোগাযোগ করা হলে সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি ওমর ফারুক বলেন, রাজের বাসা থেকে আমরা গত রাতে দুটি গাড়ি জব্দ করেছি। গাড়ি দুটো কীভাবে কেনা, গাড়ি দুটির কার নামে কেনা, কোথা থেকে, কবে কেনা সেটা আমরা খতিয়ে দেখছি। এই গাড়ি কেনার অর্থ কীভাবে পেয়েছেন সেটাও আমরা খতিয়ে দেখব।
পরীমনির বাসায় মদের সাপ্লায়ার ছিলেন রাজ, এছাড়া কথিত মডেলদের দিয়ে বিভিন্ন পার্টি এবং ইনডোর প্রোগ্রামের আড়ালে বিশিষ্টজন-ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ব্লাকমেইল ও প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে। এ ব্যাপারে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আমরা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছি। সেগুলো যাচাইবাছাই করা হচ্ছে। তদন্তের স্বার্থে তা আপাতত প্রকাশ করা হচ্ছে না।
এদিকে পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী, মাদক ব্যবসা করে কোনো ব্যক্তি যদি অবৈধ সম্পদ অর্জন করেন, তাহলে তার ব্যাংক হিসাব, আয়কর বিবরণী, সম্পদের কর-সম্পর্কিত যাবতীয় রেকর্ডপত্র যাচাইবাছাই ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে ব্যবস্থা নিতে পারবে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। আমরা সে পথেই হাঁটছি। রাজ মাদকের সাপ্লায়ার সে ব্যাপারে তথ্যপ্রমাণ আমরা পেয়েছি। সঙ্গতকারণে তার তার ব্যাংক হিসাব, আয়কর বিবরণী, সম্পদের কর-সম্পর্কিত যাবতীয় রেকর্ডপত্র যাচাইয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দেয়া হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়