নির্ধারণ হবে আশুরার তারিখ : জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভা বসছে আজ

আগের সংবাদ

সংক্রমণ ঠেকানোর কৌশল কী

পরের সংবাদ

ধানের বীজতলা পচনে শঙ্কিত শ্রীপুরের চাষিরা

প্রকাশিত: আগস্ট ১০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ১০, ২০২১ , ১:০৮ পূর্বাহ্ণ

নাসির উদ্দিন জর্জ, শ্রীপুর (গাজীপুর) থেকে : ফলন ভালো হওয়ার আশায় গাজীপুরের চাষিরা ব্রি-৫১ ধানের জাত আবাদের প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। কিন্তু বীজতলা পচে যাওয়ায় অধিকাংশ কৃষকের সেই আশা গুড়েবালি। পচে যাওয়ার মধ্যেও যেসব চারা ভালো রয়েছে সেগুলো রোপণের পর ধান বের হওয়ার সময় একই রোগে আক্রান্ত হয়ে গাছ মরে যাওয়া নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। গত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতা থাকলেও অল্প জমিতে ভালো ফলনের আশায় বেশিরভাগ চাষি ব্রি-৫১ জাতের ধান আবাদের প্রস্তুতি নিয়েছেন।
ব্রি-৫১ ধানের বীজতলা রোগাক্রান্ত হয়ে পচে যায়। শুধু যে বীজতলা আক্রান্ত হয় তাই-ই নয়। ভালো চারা জমিতে রোপণের পর গাছে ধান বের হওয়ার সময়ও গাছ আক্রান্ত হয় বলে জানান, শ্রীপুর উপজেলার টেংরা গ্রামের চাষি জাহাঙ্গীর আলম।
তিনি জানান, এ রোগের কারণেই ব্রি-৫১ ধান করতে তারা নিরুৎসাহিত হন। কিন্তু অন্যান্য জাতের ধানের চেয়ে ফলন ভালো হওয়ায় আবাদের লোভও সামলাতে পারেন না। বীজতলা বা ধান গাছে পচন ধরলে চারা বা ধান গাছ হলুদ ও ধূসর বর্ণ ধারণ করে মাটিতে মিশে যায়।
ব্যক্তিগত এবং ঋণ নেয়া ৫ একর ৩৫ শতক জমি আবাদ করবেন এবার। সেই লক্ষ্যমাত্রায় বীজতলা তৈরি করেছিলেন। কিন্তু বীজতলা পচন রোগে আক্রান্ত হওয়ায় অনেক চারা নষ্ট হয়েছে। বাইরে থেকে ধানের চারা ক্রয় করে জমিতে রোপণ করতে হবে। এতে ধানের বীজ ভালো হবে কিনা তা ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিতে হবে।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা পরিদর্শনে এসে ওষুধ প্রয়োগের পরামর্শ দেন বলে জানিয়েছেন টেংরা উত্তরপাড়া গ্রামের লেহাজ উদ্দিন। সে অনুযায়ী গত ২৫ জুলাই ওষুধ প্রয়োগ করেও কোনো উন্নতি দেখছেন না। বরং আরো নষ্ট হচ্ছে। এখন ধানের চারা কিনে রোপণ করা ছাড়া কোনো উপায় নেই তার। দুই একর জমিতে ধান আবাদের লক্ষ্যে ব্রি-৫১ এবং রঞ্জিত জাতের ধানের বীজতলায় বীজ রোপণ করেছিলেন। কিন্তু তার দুটি জাতের চারাই পচে গেছে। ৩০ কেজি ধানের বীজতলায় তিন কেজি ইউরিয়া সার প্রয়োগ করেছিলেন। ধানের চারা প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পর সব জ্বলে-পুড়ে গেছে।
অন্যদের মতো কৃষক মুজিবুর রহমানের বীজতলায়ও পচন ধরার কারণে এবার অন্য জায়গা থেকে ধানের চারা সংগ্রহ করে রোপণ করতে হবে। তিনি জানান, এ বছর ১ একর ৭০ শতক জমিতে ধানের চারা রোপণের জন্য বীজতলা তৈরি করেন।
ধানের চারা প্রাপ্ত বয়স্ক হলেই পাতা মরে চারা গাছ ছোট হয়ে আসে। ব্রি-৫১ জাতের ধানের চারা দিয়ে রোপণ করতে না পারলে রঞ্জিত ধানের চারা দিয়ে ১ একর জমি আবাদ করবেন। চারার সংকট হলে অন্য জায়গা থেকে সংগ্রহ করতে হবে বলে জানিয়েছেন চাষি সাহাব উদ্দিন।
তিনি জানান, ব্রি-৫১ এবং রঞ্জিত দুটি জাতের বীজতলা রোপণ করেন প্রায় দেড় মাস আগে। কিন্তু ব্রি-৫১তে পচন ধরলেও রঞ্জিত ধানের বীজতলা অক্ষত রয়েছে। গত কয়েক বছর একই নিয়মে বীজতলা তৈরি করে আসছেন। দেড় মাস আগে গোবর দিয়ে ৪-৫টি চাষ করে বীজতলা তৈরি করেন। ধানের বীজগুলো গত বছর নিজের জমি থেকেই সংগ্রহ করেছিলেন।
চাষি পারভেজ মোশারফ জানান, বীজতলায় ইউরিয়া সার প্রয়োগের পর ধানের চারা নষ্ট হয়ে যায়। ধানের চারা বড় হওয়ার জন্য ইউরিয়া সার প্রয়োগ করেন। এলাকার অধিকাংশ বীজতলায় পচন ধরেছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেয়া তথ্যমতে, জেলায় এবার রোপা আমনের লক্ষ্যমাত্রা কমপক্ষে ৪২ হাজার হেক্টর। শ্রীপুরে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৩ হাজার ৫৩৫ হেক্টর জমিতে।
শ্রীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ এ এস এম মূয়ীদুল হাসান সাংবাদিকদের বলেন, প্রণোদনা ও রাজস্বসহ অন্যান্য প্রকল্পের আওতায় কৃষকদের উফশী নতুন জাতের ভ্যারাইটি বীজ দেয়া হয়েছে। সবাই তাদের পরামর্শমতে আদর্শ বীজতলা তৈরি করেছেন। কিছু কিছু জায়গায় গত কয়েকদিন আগে বৃষ্টির কারণে বীজতলার অনুপযোগী নিচু জমিতে পানি জমে থাকায় ও অতিরিক্ত ইউরিয়া প্রয়োগের কারণে চারার গোড়ায় পচন ধরেছে। পরবর্তীতে তাদের পানি সরিয়ে ফেলা ও কীটনাশক এবং ছত্রাকনাশক প্রয়োগের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব বীজতলায় চারা না রেখে যেন জমিতে রোপণ করে ফেলে সে পরামর্শও দেয়া হয়েছে। আশা করা হচ্ছে পরামর্শ মেনে চললে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়