শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি : চলতি সপ্তাহেই শতভাগ শিক্ষক টিকার আওতায়

আগের সংবাদ

উৎসবের গণটিকায় বিশৃঙ্খলা

পরের সংবাদ

নিবন্ধনধারী শিক্ষকদের নিয়োগ প্রসঙ্গে

প্রকাশিত: আগস্ট ৯, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ৯, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

২০০৫ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে গঠিত হয় বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। উদ্দেশ্য ছিল শিক্ষার গুণগতমান নিশ্চিত করা ও যোগ্য শিক্ষক দ্বারা বেসরকারি শিক্ষাক্ষেত্রকে আরো এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।
উল্লেখ্য, এনটিআরসিএর প্রতিষ্ঠাকালে তাদের নীতিমালার মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্যটি এমন, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক হতে হলে অবশ্যই এনটিআরসিএর প্রদত্ত সনদ থাকতে হবে এবং ইতোপূর্বে যেসব শিক্ষক পাঠদানের অনুমতি পেয়েছে তাদের প্রশিক্ষণের আওতায় এনে সমন্বয় করা হবে। ২০০৬ সালের ৩০ জুলাই গেজেট পাস করে এনটিআরসিএর কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়।
এনটিআরসিএর সব নিবন্ধনধারী শূন্য পোস্টের বিপরীতে নির্বাচিত হয়েছে। যদিও গেজেট অনুসারে শূন্যপদের অতিরিক্ত ২০ শতাংশ সনদ দেয়ার কথা ছিল। ধরে নিলাম এনটিআরসিএ এ সুযোগটা কাজে লাগিয়ে শুধু সনদ দিয়েই যাচ্ছে এবং সনদে লিখে যাচ্ছে নিয়োগযোগ্য। আরো একটু বিশ্লেষণ করলে হয়তো বিষয়টা পরিষ্কার হবে। এনটিআরসিএ তখন শুধু যোগ্য প্রার্থী বাচাইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। প্রকৃতপক্ষে নিয়োগ প্রক্রিয়া ছিল কমিটির হাতে। কমিটি নানা অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতি করে নিকট আত্মীয় বা দর কষাকষির মাধ্যমে নিজের খুশির একজনকে সুযোগটি দিত। এতে নিবন্ধনধারীর নম্বর কোনো বিষয় ছিল না, কেননা পরীক্ষা নেয়ার নাম করে কৌশলে মনোনীত প্রার্থীকে এগিয়ে রাখত। সভাপতি, থানা শিক্ষা অফিসার এমনি প্রতিষ্ঠান প্রধান সবাই ছিল পুঁজি ছাড়া ব্যবসার ধান্ধায়। বিষয়টি তাহলে কী দাঁড়াল? নিয়োগ পাওয়ার জন্য সনদ শুধু একটি শর্তমাত্র, মূল যোগ্যতা ছিল লোকচক্ষুর অন্তরালে।
কথাগুলো আমার সেখানে না, যেভাবেই হোক নিয়োগ তো হয়েছে। তাহলে প্রকৃত সনদধারীর সংখ্যা এখনো ৬ লাখ ৩৪ হাজার ১২৭ জন থাকে কীভাবে? যদি ধরে নেই কমিটির হাতে কোনো প্রকৃত সনদধারীর নিয়োগ সম্পূর্ণ হয়নি। তাহলে যাদের শিক্ষা মন্ত্রণালয় এমপিও দিল তারা কীভাবে এতগুলো পথ পাড়ি দিয়ে দাম্ভিকতার সঙ্গে আজো শিক্ষাক্ষেত্রকে কলুষিত করছে?
২০১৬ সালে কমিটির হাত থেকে ক্ষমতা আসে এনটিআরসিএর হাতে। হাঁফ ছেড়ে বাঁচে চাকরিপ্রত্যাশী নিবন্ধনধারী। কিন্তু বিধিবাম, সেই আশায় গুড়েবালি দিয়ে জুয়া খেলার এক রমরমা ব্যবসায় মেতে উঠে এনটিআরসিএ। দীর্ঘ ১-১৫তমদের জন্য মাত্র তিনটি গণবিজ্ঞপ্তি। অথচ গেজেটে কী ছিল? সে কথা না হয় বাদই দিলাম, প্রতি গণবিজ্ঞপ্তিতেই নিয়োগ দিচ্ছেন নির্দিষ্ট সংখ্যক নিয়োগপ্রত্যাশীদের। তবু কেন কমছে না নিবন্ধনধারীর সংখ্যা? উত্তরটা সহজ। উত্তরটা হচ্ছে- যেসব নিয়োগপ্রত্যাশী উচ্চ নম্বরধারী একবার আবেদন করে নিয়োগের সুপারিশ পাচ্ছেন। দ্বিতীয়বার আবার ঘুরেফিরে তারাই নতুন করে সুপারিশপ্রাপ্ত হচ্ছেন। এতে নতুন সুপারিশ অনুসারে ইনডেক্সধারী ব্যক্তি যোগদান করলে তার পূর্বের শূন্যপদটি নতুন করে শূন্য হচ্ছে। আর যোগদান না করলে দখলকৃত পদটি শূন্যই থেকে যাচ্ছে। আর এভাবে সৃষ্টি হচ্ছে কৃত্রিম শিক্ষক সংকট। প্রতিবারই এনটিআরসিএর গ্রাহক বা জুয়াড়ি হচ্ছেন বঞ্চিত নিবন্ধনধারীরা। তাহলে কথা হলো ইনডেক্সধারীদের কেন গণবিজ্ঞপ্তির নামে বদলি বিজ্ঞপ্তি দেয়া হচ্ছে?
এনটিআরসিএর তথ্য মতে, প্রায় ৬০ হাজার জাল সনদধারী আছে, যারা দিব্যি চাকরি করে যাচ্ছে। কিন্তু প্রকৃত সনদধারীদের কেন এ বেহাল দশা? প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিজিটাল ও গুণগত শিক্ষার মান নিশ্চিত করতে যোগ্য শিক্ষক দ্বারা বেসরকারি শিক্ষাক্ষেত্রকে এগিয়ে নিতে গড়ে তুলেছেন অনলাইন প্লাটফর্ম শিক্ষক বাতায়ন। ২০২১ সালের মধ্যে তিনি ৯ লাখ শিক্ষককে শিক্ষক বাতায়নের অন্তর্ভুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছা এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে যোগ্য ও দক্ষ শিক্ষকের বিকল্প নেই। ১-১২তমদের সনদে যেহেতু লেখা আছে- ঐব/ঝযব রং বষরমরনষব ঃড় নব ধঢ়ঢ়ড়রহঃবফ. শিক্ষক নিবন্ধন সনদ চাকরির সনদ, একাডেমিক সনদ নয়। তাই সনদ যার, চাকরি তার। সুতরাং এনটিআরসিএর এ পাহাড় সমান অনিয়ম ও অভিযোগ থেকে মুক্তির পথ একটাই প্যানেলভিত্তিক নিয়োগের ব্যবস্থা গ্রহণ করা। ইনডেক্সধারীদের বদলি নিয়ে ভাবার সময় এখনই। মুজিববর্ষ হোক অভিশাপ মুক্ত, শোষণ-নিপীড়ন থেকে মুক্তি পাক জাতির মেরুদণ্ড। জাতির জনকের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বঞ্চিত শিক্ষকদের প্যানেলভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে জাতিকে অভিশাপ মুক্ত করা হোক। কেটে যাক কৃত্রিম শিক্ষক সংকট। মানসম্মত ও গুণগত শিক্ষা ছড়িয়ে পড়ুক কচিকাঁচার দ্বারপ্রান্তে। শিক্ষার্থীদের সঠিক শিক্ষা গ্রহণে সহায়তা করতে প্যানেলভিত্তিক নিয়োগ সরকারের একটি বড় চ্যালেঞ্জ এবং সময়ের দাবি।

আমির আসহাব : আরমানীটোলা, ঢাকা-১১০০।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়