শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি : চলতি সপ্তাহেই শতভাগ শিক্ষক টিকার আওতায়

আগের সংবাদ

উৎসবের গণটিকায় বিশৃঙ্খলা

পরের সংবাদ

কার্ড নিয়ে চেয়ারম্যান ও আ.লীগ নেতাদের দ্ব›দ্ব : শেরপুরে ভিজিএফের চাল পায়নি ৩৯১ পরিবার

প্রকাশিত: আগস্ট ৯, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ৯, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

নাহিদ আল মালেক, শেরপুর (বগুড়া) থেকে : শেরপুরের শাহবেন্দগী ইউনিয়নের গরিবদের জন্য বরাদ্দ দেয়া ঈদুল আজহা উপলক্ষে ৩৯১ জনের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কার্যক্রম ভালনারেবল গ্রুপ ফিডিং (ভিজিএফ) কর্মসূচির চাল আজও বিতরণ করা হয়নি। ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যানের সঙ্গে কার্ড ভাগাভাগি নিয়ে বিরোধের জের ধরে ৩৯১ জন দুস্থের চাল পরিষদের অস্থায়ী কার্যালয়ের গোডাউনে বস্তাবন্দি করে রাখা হয়েছে। ঈদের পর ১৭ দিন পার হলেও গরিবদের এসব চাল বিতরণ করা সম্ভব হয়নি। এমনকি কবে নাগাদ এসব চাল বিতরণ করা হবে তাও কেউ বলতে পারছেন না। ফলে গোডাউনে পড়ে থাকা দুস্থদের ভিজিএফের চাল খাচ্ছে ইঁদুর আর পোকা। অথচ সংশ্লিষ্টদের সেদিকে কোনো নজর নেই।
শাহবন্দেগী ইউনিয়নের মেম্বার (ইউপি সদস্য) মাহমুদুল হাসান লিটন বলেন, যে গোডাউনে চালগুলো রাখা হয়েছে সেটি একটি পরিত্যক্ত গোডাউন। তাই ওই গোডাউনটি এখন ইঁদুর আর পোকার বসতঘর। আর সেখানেই ভিজিএফের চালগুলো ফেলে রাখা হয়েছে। প্রায় ১৫ দিন ধরে তালাবদ্ধ ওই ঘরটি খোলা হয় না। এ অবস্থায় গরিবের চালগুলো আস্তে আস্তে ইঁদুর আর পোকায় খেয়ে ফেলবে। এছাড়া আর কয়েক দিন পার হয়ে গেলেই বিষয়টি চাপা পড়বে। আর তখনই দুস্থদের ওই সব চাল রাতের আঁধারে উধাও হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে ভুয়া মাস্টার রোল তৈরি ও বিতরণ দেখিয়ে ওই সব ভিজিএফের চালগুলো লোপাটের পাঁয়তারা চলছে বলেও অভিযোগ করেন তারা।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ঈদুল আজহা উপলক্ষে ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় এই উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে ২৪ হাজার ৯৮০টি পরিবারের জন্য ১০ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় শাহবন্দেগী ইউনিয়নে ২ হাজার ৪৯৮টি পরিবারের অনুকূলে ২৪ দশমিক ৯৮০ টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু এই চাল বিতরণের কার্ড ভাগাভাগি নিয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরোধ তৈরি হয়। এতে করে বরাদ্দ পাওয়া ভিজিএফের চাল সম্পূর্ণ বিতরণ করা সম্ভব হয়নি। ফলে ৪ হাজার কেজি চাল পরিষদের গোডাউনেই পড়ে রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শাহবন্দেগী ইউনিয়নের একাধিক মেম্বার (সদস্য) অভিযোগ করে বলেন, ঈদুল আজহা উপলক্ষে এই ভিজিএফের চাল বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে। বিতরণের মাস্টার রোলে যাদের নাম রয়েছে তাদের বেশির ভাগ দুস্থ মানুষই চাল পাননি। এছাড়া একই ব্যক্তির কাছ থেকে একাধিক স্বাক্ষর ও টিপসই নিয়ে চাল উত্তোলন দেখিয়ে তা কালোবাজারে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। পরবর্তী সময়ে সরকারদলীয় নেতাদের ভাগের অংশ থেকেও চেয়ারম্যান, সচিব ও দুজন মেম্বার মিলে জোরপূর্বক চাল বিতরণ শুরু করলে আ.লীগ নেতাদের বাধার মুখে চাল বিতরণ বন্ধ হয়ে যায় বলে জানান তারা।
শাহবন্দেগী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আল আমিন মণ্ডল এ প্রসঙ্গে বলেন, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতারা ভিজিএফের ৭০০ কার্ড দাবি করে বসেন। তবে তাদের ৪০০ কার্ড দেয়া হয়। কিন্তু দুস্থদের মধ্যে এসব কার্ড বিতরণ করা হয়নি। তাই কেউ চাল নিতে আসেননি। এই কারণে ওই সব কার্ডের চাল পরিষদের গোডাউনেই পড়ে আছে। চেয়ারম্যান অভিযোগ করে বলেন, বিগত সময়ে দলীয় নেতাকর্মীদের যেসব কার্ড দেয়া হয়েছিল তা কালোবাজারে বিক্রি করে দেয়া হয়। এবারো সেই কাজই করা হয়। তাই কার্ড পাওয়া দুস্থ ব্যক্তিদের না এনে দুয়েকজন নেতা তাদের ভাগের ভিজিএফের সব চাল নিতে এলেও তাদের দেয়া হয়নি। একপর্যায়ে চাল না পেয়ে বাধার সৃষ্টি করেন তারা। পরবর্তী সময়ে তাদের কার্ডের চালগুলো রেখে বাকি চাল গরিব মানুষের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। এই চাল বিতরণে কোনো অনিয়ম-দুর্নীতি হয়নি বলেও দাবি করেন তিনি। শাহবন্দেগী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান রিপন এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ভিজিএফের চাল বিতরণে চেয়ারম্যান নিজেই নয়ছয় করেছেন। মাস্টার রোল ভুয়া নাম তালিকা করে এই চাল বিতরণ দেখিয়েছেন। আমরা কেবল চেয়ারম্যানের ওই সব অনিয়ম-দুর্নীতির প্রতিবাদ জানিয়েছি মাত্র। এছাড়া দলীয় ভাগ হিসেবে তাদের কোনো ভিজিএফের কার্ডই দেয়া হয়নি। তাই কার্ড বিতরণ না করার অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।
ইউনিয়নের সচিব ইকবাল হোসেন দুলাল বলেন, সামান্য জটিলতার কারণে চাল বিতরণ করা সম্ভব হয়নি। তবে অচিরেই পরিষদের বৈঠক ডেকে বিষয়টি সমাধানের পাশাপাশি ওই সব চাল বিতরণ করা হবে।
শেরপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শামছুন্নাহার শিউলী বলেন, দ্রুত চালগুলো বিতরণের জন্য ইউনিয়ন পরিষদে মিটিং ডাকতে বলা হয়েছে। সেখানে সিদ্ধান্ত নিয়ে চালগুলো বিতরণ করা হবে বলে জানান তিনি।
শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ময়নুল ইসলাম বলেন, ঈদের ২ দিন আগে ভিজিএফের চালগুলো বিতরণ শুরু করা হয়। কিন্তু সেখানে চেয়ারম্যান-মেম্বারদের মধ্যে বিরোধ রয়েছে। পাশাপাশি স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গেও চেয়ারম্যান দ্ব›েদ্ব জড়িয়ে পড়েন। পরবর্তী সময়ে চাল বিতরণে বিশৃঙ্খলার খবর পেয়েই আমি ঘটনাস্থলে যাই। পাশাপাশি সৃষ্ট জটিলতা নিরসন করে চাল বিতরণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়