পরীমনরি ঘনষ্ঠি কে এই কবীর

আগের সংবাদ

তালিকায় হাইপ্রোফাইলদের নাম

পরের সংবাদ

সারাদেশে গণটিকা : নারীদের উপস্থিতি বেশি

প্রকাশিত: আগস্ট ৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : করোনা ভাইরাসের সংক্রমণরোধে সারাদেশে গণটিকাদান কর্মসূচি পালিত হলো স্বতঃস্ফূর্তভাবে। গতকাল শনিবার সকাল থেকেই এ কর্মসূচিতে সাড়া দিয়ে টিকাদান কেন্দ্রগুলোতে সাধারণ মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। কোথাও কোথাও পুরুষের চেয়ে নারীদের উপস্থিতি ছিল বেশি। এ সম্পর্কে আমাদের প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো রিপোর্ট-
রংপুর : রংপুর বিভাগের আট জেলায় ১ হাজার ৯৭০টি কেন্দ্রে টিকা দেয়া শুরু হয়। রংপুর সিটি করপোরেশন এলাকার ৩৩টি ওয়ার্ডের ৮৪টি কেন্দ্রে ১৯ হাজার ৮০০ জনকে এই টিকার আওতায় আনার লক্ষ্য নেয়া হয়।
নগরীর বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, টিকা নিতে আসা সাধারণ মানুষের উপস্থিতি আশাব্যঞ্জক। সারিবদ্ধভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকা নেয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন বৃদ্ধ নারী-পুরুষরাও। এই গণটিকাদান কর্মসূচি যেন তাদের মাঝে উৎসাহ-উদ্দীপনা সৃষ্টি করে করেছে। রাধাবল্লভ বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রে টিকা নেয়া আবু বক্কর ও ছোফেদা বেগম তাদের অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, প্রথমে ভয় লাগলেও টিকা নেয়ার পর তাদের কিছুই মনে হচ্ছে না।
এদিকে টিকাদান কর্মসূচি সফল করতে বিভাগীয় কমিশনার আবদুল ওয়াহাব ভূঞা, সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, স্বাস্থ্য বিভাগীয় পরিচালক (প্রশাসন) ডা. ওবারুল ইসলাম, জেলা প্রশাসক আসিব আহসান নগরীর নিউ জুম্মাপাড়াসহ বেশ কয়েকটি কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। তারা জানান, সবাইকে টিকার আওতায় আনার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে সরকার। রংপুরেও পর্যাপ্ত টিকা মজুত আছে।
টিকা নেয়ার পর বৃদ্ধের মৃত্যু : রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলায় করোনার টিকা নেয়ার পর এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের কেন্দ্রে টিকা নিয়ে বাড়ি যাওয়ার পরপরই আলেফ উদ্দিন নামের ৬৫ বছর বয়সি ওই বৃদ্ধ মারা যান।
এ বিষয়ে সিভিল সার্জন হিরম্ব কুমার বলেন, দুপুর ১২টার দিকে আলেফ উদ্দিন টিকা নেন। আধা ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে থাকার পর তিনি বাড়িতে যান। বাড়ি যাওয়ার ১ ঘণ্টা পর আলেফ উদ্দিন মারা যান। তার হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট ছিল আগে থেকেই। তবে কী কারণে মারা গেছেন, তা খতিয়ে দেখা হবে বলে তিনি জানান। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে।
বরিশাল : সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বরিশাল সিটি করপোরেশনের ১৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয় থেকে গণটিকাদান কার্যক্রম উদ্বোধন করেন সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- ১৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র গাজী নঈমুল হোসেন লিটুসহ অন্যরা। এ সময় সিটি মেয়র বলেন, নগরীতে ৬৪টি কেন্দ্রে টিকা প্রদান শুরু হয়েছে। আমাদের তদারকি রয়েছে। যে কোনো স্থান থেকে রেজিস্ট্রেশন করে সিটি করপোরেশনের যে কোনো কেন্দ্রে করোনার টিকা গ্রহণ করতে পারবেন যে কেউ। সিটি করপোরেশন এলাকা ও জেলার-উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়েনে মোট ১৫১টি কেন্দ্রে

করোনা ভাইরাসের গণটিকা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সিটি করপোরেশন এলাকায় ৩০ ওয়ার্ডে ৬৪টি কেন্দ্র এবং প্রতিটি কেন্দ্রে ৩টি করে বুথ চালু করা হয়েছে।
অপরদিকে বরিশালের ১০টি উপজেলায় ৮৭টি ইউনিয়নের ৮৭টি কেন্দ্রে টিকাদান কার্যক্রম চলে। জেলার সদর উপজেলার কাশিপুর ও রায়পাশা কড়াপুর ইউনিয়নের করোনা ভাইরাস টিকা প্রদান কেন্দ্র পরিদর্শন করেন বরিশাল জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার ও সিভিল সার্জন ডা. মনোয়ার হোসেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- বরিশাল সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ সাইদুর রহমান রিন্টু, ভাইস চেয়ারম্যান এডভোকেট মাহবুবুর রহমান মধু, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রেহানা বেগম, রায়পাশা কড়াপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. হাবিবুর রহমান খোকন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) গৌতম বাড়ৈ, বরিশাল সদর উপজেলা (ভারপ্রাপ্ত) নির্বাহী অফিসার ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) নিশাত তামান্না, সহকারী কমিশনার সুব্রত বিশ্বাস দাস প্রমুখ।
খুলনা : খুলনা মহানগর ও জেলায় ১৬১টি কেন্দ্রে ৩০৭টি বুথে এ টিকা দেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে খুলনা সিটি করপোরেশন এলাকায় ৯৩ ও উপজেলায় ৬৮টি কেন্দ্র রয়েছে । এসব বুথে একদিনে ৬১ হাজার ৪০০ জনকে টিকা দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত টিকা প্রদান করা হয়।
শনিবার সকাল সাড়ে ৯টায় নগরীর বসুপাড়া এলাকায় ২৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়ে এই ‘টিকাদান কর্মসূচির অনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন খুলনা জেলা প্রশাসক মো. মনিরুজ্জামান তালুকদার। সভাপতিত্ব করেন ২৫নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. আলী আকবর টিপু। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম ডি এ বাবুল রানা, স্থানীয় সরকার খুলনার উপপরিচালক মো. ইকবাল হোসেন।
খুলনার সিভিল সার্জন ডা. নিয়াজ মোহাম্মদ জানান, টিকা প্রদানকারী কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) ৩১টি ওয়ার্ডে ৯৩টি বুথ ও জেলার ৬৮টি ইউনিয়ন পরিষদে ২০৪টি বুথে টিকা প্রদান কার্যক্রম চলছে।
রাজশাহী : রাজশাহীতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেছেন নিবন্ধন করা ব্যক্তিরা। শনিবার সকাল থেকে নগরী ও জেলায় শুরু হয় এ গণটিকা প্রদান কার্যক্রম। এতে কেন্দ্রে এসে স্বাচ্ছন্দ্যে টিকা নিয়েছেন। আবার অনেকে কর্মরত অফিসের চাপে নিতে বাধ্য হয়েছেন। নগরীর গণটিকা প্রদানের কেন্দ্রগুলো ঘুরে দেখা গেছে, টিকা গ্রহণে বেশ আগ্রহী সাধারণ মানুষ। প্রতিটি কেন্দ্রে নারী-পুরুষের দীর্ঘ লাইন তৈরি হয় সকাল থেকেই। দায়িত্বরত আনসার সদস্যরা সুশৃঙ্খলভাবে পর্যায়ক্রমে টিকা প্রদানের কক্ষে ঢুকান। তবে বাইরে লাইনে ছিল বেশ ভিড়। কোনো দূরত্ব বজায় রাখতে দেখা যায়নি। টিকা নিয়ে চলে যান নিজ নিজ বাসায়।
টিকা গ্রহণের পর সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বলেন, স্বেচ্ছায় তারা টিকা নিয়েছেন। টিকা গ্রহণের ব্যাপারে কোনো ভীতি কাজ করছে না। নিবন্ধনের জন্যও কোনো বিড়ম্বনায় পড়তে হয়নি তাদের। তাছাড়া অনেক কেন্দ্রে টিকা দেয়ায় তাদের বাড়তি কোনো ভোগান্তি হচ্ছে না। স্বাস্থ্যকর্মীরা জানান, স্বাভাবিক অবস্থায় টিকার জন্য এসে বসছেন এবং টিকা গ্রহণ করে নিজে থেকেই তারা চলে যাচ্ছেন। টিকাগ্রহীতাদের কোনো সমস্যা হয়নি। নারীরাও স্বতঃস্ফূর্তভাবে টিকা নিয়েছেন।
এ বিষয়ে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. এফ এ এম আঞ্জুমান আরা বেগম বলেন, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ৩০টি ওয়ার্ডে ৮৪টি কেন্দ্রে একযোগে সকাল থেকে টিকা কার্যক্রম শুরু হয়। প্রতিটি কেন্দ্রে ৩০০ জনকে টিকা দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়। আগামী ১২ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিন চলমান এ টিকা কার্যক্রমের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ টিকা মজুত রয়েছে।
রাজশাহীর সিভিল সার্জন ডা. কাউয়ুম তালুকদার বলেন, রাজশাহী জেলার ৭৩টি ইউনিয়নেই গণটিকা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রে তিনটি করে বুথে টিকা দেয়া হচ্ছে। প্রতিটি বুথে ৬০০ জন করে টিকা পাবেন। টিকাদানে বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী ও নারীদের অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে।
ময়মনসিংহ : ময়মনসিংহেও ইউনিয়ন পর্যায়ে গণটিকা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সকাল থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকা নিচ্ছেন সাধারণ মানুষ। জেলার ১৪৬টি ইউনিয়ন, ১টি সিটি করপোরেশন ও ২টি পৌরসভার ৫৪৩টি বুথে সকাল থেকে একযোগে এই টিকা কার্যক্রম চলছে। এছাড়া জেলার স্থায়ী ১৬টি সেন্টারের ৪৬টি বুথেও টিকা কার্যক্রম চলমান আছে।
সিভিল সার্জন ডা. মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ৫৪৩টি বুথে ১ লাখ ৮ হাজার ৬০০ টিকা বিতরণ করা হয়েছে। প্রত্যেক বুথ থেকে ২০০ জনকে টিকা দেয়া হবে। আশা করা যাচ্ছে, বিতরণকৃত টিকার সবই দেয়া হবে। মানুষের মধ্যে টিকা নেয়ার আগ্রহ রয়েছে।
সিটি করপোরেশনের মহাবিদ্যালয় কেন্দ্রে সোহেলী জাহান নামে এক নারী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এমন উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। এই বিপদের সময় টিকা পেয়ে আমরা দারুণ খুশি। আমরা সারাক্ষণ বাসায় থাকি। ছেলেমেয়ে রয়েছে। তাই তাদের সুরক্ষার কথা চিন্তা করে আগেই চলে এসেছি টিকা নিতে। সিটি করপোরেশনের মেয়র ইকরামূল হক টিটু বলেন, ৩৩টি ওয়ার্ডের ৬৬টি বুথে বয়স ২৫ ঊর্ধ্ব ৩০০ জন করে মোট ১৯ হাজার ৮০০ জনকে টিকা প্রদান করার কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। এ কার্যক্রম টানা তিন দিন চলবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়