পরীমনরি ঘনষ্ঠি কে এই কবীর

আগের সংবাদ

তালিকায় হাইপ্রোফাইলদের নাম

পরের সংবাদ

রূপগঞ্জ ট্র্যাজেডি : ‘সোনার টুকরা মাইয়া কয়লা হয়ে বাড়ি ফিরতাছে’

প্রকাশিত: আগস্ট ৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : ‘কত মায়ের বুক খালি হইছেরে, আমার বুকওতো খালি পইড়া থাকবোরে মা। টাকা দিয়ে কী করমু, তোরে তো পামু না কম্পা। কী আগুন জ্বলছে, তোরে দেখাই যাইবো না। কেন যে তোরে চাকরি করতে দিতে রাজি হইছিলাম। সোনার টুকরা মাইয়া আমার কয়লা হয়ে বাড়ি ফিরতাছে। যারা আমগো বুক খালি করছে, শেখ হাসিনা যেন তাদের বিচার করেন।’ ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গের সামনে এভাবেই বিলাপ করছিলেন নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে হাসেম ফুড এন্ড বেভারেজ লিমিটেডের কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত কম্পা রানী বর্মণের (১৪) মা সুমা রানী বর্মণ।
পাশেই চিৎকার করে কান্না করে যাচ্ছিলেন কম্পার ফুফু পতি রানী বর্মণ। তাদের গগনবিদারী কান্নায় ভারি হয়ে ওঠে মর্গের বাতাস। কান্নায় ভেঙে পড়েন অন্য লাশগুলোর স্বজনরাও। কান্না করবেনই বা না কেন? ডিএনএ নমুনা দেয়ার পর বুকের ধন নয়নের মনির লাশ বুঝে পাওয়ার অপেক্ষা শেষ হয়েছে তাদের।
গতকাল শনিবার দুপুর ১২টা থেকে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে ২১টি লাশ স্বজনদের কাছে বুঝিয়ে দেয়া হয়। মর্গের মর্চুয়ারি থেকে লাশের কফিন বের করার সঙ্গেই আহাজারিতে ভেঙে পড়তে দেখা যায় বেশির ভাগ স্বজনদের। স্বজনদের এ কান্না আর চিৎকার মুহূর্তেই আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি করে সেখানে। কে, কাকে সান্ত¡না দেবে, অঙ্গার হওয়া লাশের কফিনে কেউ ‘ও ভাই, ভাইরে, ফিরে আয় বলে মাথা ঠুকছে, কেউ সন্তানের নাম ধরে কফিনে আলিঙ্গন করার চেষ্টা করছে। এর ভিন্নতা দেখা যায়নি কম্পার মা সোমা রানীর বেলায়। মর্গ থেকে লাশ বের করতেই তার আহাজারি বেড়ে যায়। শুরু থেকে স্তব্ধ থাকলেও মেয়ের লাশের কফিন দেখে কান্না চেপে রাখতে পারেননি কম্পার বাবা মাছ-বিক্রেতা পরবাচন্দ্র বর্মণও। কফিন আলিঙ্গন করে কম্পা ফিরে আয় মা বলে কান্না করতে থাকেন।
পরবা চন্দ্র বর্মণ ভোরের কাগজকে বলেন, মৌলভীবাজারের চাঁনপুরে তাদের গ্রামের বাড়ি। ৩ মেয়ে ২ ছেলের মধ্যে কম্পা তৃতীয়। স্কুল বন্ধ থাকায় রূপগঞ্জের গাউছিয়া এলাকায় ফুফু পতি বর্মণের বাসায়

বেড়াতে আসে। সেখান থেকে প্রতিবেশীদের মাধ্যমে সেজান জুস কারখানায় কাজ নিয়েছিল কম্পা। ৭ জুলাই চাকরি নিয়ে ৮ জুলাই পুড়ে মারা যায় সে। কান্না করতে করতে তিনি বলেন, আগুন লাগার আগের দিন কথা হইছে, আমারে বলে আব্বা কেমন আছ। কুরবানির সময় বাড়ি আসব। চিন্তা কইরো না আমার জন্য। এরপর আগুন লাগার খবরে কতবার ফোন করছি, মাইয়া আমার কথা কইল না।
নারায়ণগঞ্জ সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার দেলোয়ার হোসেন বলেন, গত বুধবার স্বজনদের কাছে যে প্রক্রিয়ায় ২৪ লাশ বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে, একইভাবে গতকাল ২১টি লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। হস্তান্তরের সময় লাশের দাফন-কাফনের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২৫ হাজার করে টাকা দেয়া হয়েছে। বাকি ৩টি লাশের পরিচয় শনাক্ত প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
যে ২১ লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে : কিশোরগঞ্জের সদর উপজেলার রঘুনন্দনপুর গ্রামের মৃত আব্দুল মালেকের মেয়ে মাহমুদা আক্তার, করিমগঞ্জ উপজেলার আব্দুল কুদ্দুসের মেয়ে রহিমা আক্তার, সদর উপজেলার গাগলাইল গ্রামের মঞ্জুর স্ত্রী মিনা খাতুন, সদর উপজেলার চিংড়িরচর গ্রামের মুর্শিদ মিয়ার মেয়ে আমেনা আক্তার, কটিয়াদী উপজেলার চান্দু মিয়ার মেয়ে রাবেয়া আক্তার, সদর উপজেলার চৌদ্দশত বগালেরপাড় গ্রামের মো. সেলিমের মেয়ে রহিমা, সদর উপজেলার কালিয়ারকান্দা গ্রামের চান মিয়ার ছেলে নাজমুল হোসেন, মিঠামইন উপজেলার মোহাম্মদ সেলিমের মেয়ে সেলিনা আক্তার, কটিয়াদী উপজেলার গৌরিপুর গ্রামের বাচ্চু মিয়ার মেয়ে তাসলিমা আক্তার, করিমগঞ্জের মুথরাপাড়া গ্রামের আ. কাউয়ুমের মেয়ে ফাকিমা আক্তার।
ভোলার শশীভূষণ থানার এওয়াজপুর গ্রামের আব্দুল মান্নানের ছেলে নোমান, একই জেলার দক্ষিণ আইচা থানার চরহরিশ গ্রামের হাফেজ ফখরুল ইসলামের ছেলে মো. শামীম, চরফ্যাশন উপজেলার আব্দুল্লাহপুর গ্রামের ফজলুর রহমানের ছেলে হাসনাইন, হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার মুইরাচরণ সরকারের মেয়ে শেফালী রানী সরকার, একই উপজেলার সেলিম মিয়ার স্ত্রী আমৃতা বেগম, নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলার পূর্বরাম গ্রাম মৃত জাকির হোসেনের মেয়ে শান্তা মনি। রাজশাহীর বাঘা উপজেলার তেঁতুলিয়া সিকদারপাড়া গ্রামের গকুল শিকদারের ছেলে মাহবুবুর রহমান। জামালপুরের সদর উপজেলার গোডারকান্দা গ্রামের শওকত হোসেনের ছেলে জিহাদ রানা। নোয়াখালীর দক্ষিণ হাতিয়া থানার নতুন শুকচর গ্রামের বাহার উদ্দিনের ছেলে আকাশ মিয়া।
মৌলভীবাজারের সদর উপজেলার চাঁনপুর গ্রামের পরবাচন্দ্র বর্মণের মেয়ে কম্পা রানী বর্মণ। নিলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার পানিয়ালপুকুর দোলাপাড়া গ্রামের মনকার হোসেনের ছেলে স্বপন মিয়া।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়