পরীমনরি ঘনষ্ঠি কে এই কবীর

আগের সংবাদ

তালিকায় হাইপ্রোফাইলদের নাম

পরের সংবাদ

বরিশালে জনবল সংকটে বেহাল স্বাস্থ্যসেবা : প্রতিদিনই আক্রান্ত হচ্ছেন সম্মুখযোদ্ধা চিকিৎসক-নার্স

প্রকাশিত: আগস্ট ৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বরিশাল প্রতিনিধি : বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় দিন দিন বাড়ছে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা। পাশাপাশি করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত চিকিৎসক, নার্সসহ তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা প্রতিদিনই আক্রান্ত হচ্ছেন করোনা ভাইরাসে। এমনকি রোগীর সেবা দিতে গিয়ে করোনা আক্রান্ত হয়ে বরিশাল ও ভোলায় দুজন সিনিয়র স্টাফ নার্সসহ একজন সুপারভাইজার মারা গেছেন।
বরিশাল সিভিল সার্জন কার্যালয়ের দেয়া তথ্য মতে, গত জুলাই মাসে করোনা রোগীদের সেবা দিতে গিয়ে চিকিৎসক, নার্স, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীসহ করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৩৪০ জন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন জুলাই মাসের ১২ তারিখে। এদিন বিভাগে সর্বোচ্চ ১৮ জন সরকারি স্বাস্থ্যকর্মী করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। এমনিতেই প্রয়োজনের তুলনায় বিভাগের ৬টি জেলা হাসপাতাল, ৩৪টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রয়েছে চিকিৎসক সংকট। তার ওপর বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে হাসপাতালগুলোয় রোগীর চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন কর্তৃপক্ষ। তবে যারা সুস্থ আছেন তাদের দিয়েই রোগীর সেবা দিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. বাসুদেব কুমার দাস।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দক্ষিণাঞ্চলের চিকিৎসা সেবার নির্ভরযোগ্য একমাত্র বৃহৎ স্বাস্থ্য সেবাদানকারী বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত রয়েছেন ৯১৪ জন নার্স। এ হাসপাতালটি ৫০০ থেকে ১ হাজার বেডে উন্নীত করা হলেও প্রয়োজনীয় জনবল এখনো নিয়োগ দেয়া হয়নি এখানে।
এছাড়া বিভাগের অন্যান্য হাসপাতালগুলোতে কর্মরত রয়েছেন ১ হাজার ১৯৮ জন। সব মিলিয়ে বিভাগের ৬ জেলার হাসপাতালগুলোতে নার্সের সংখ্যা ১ হাজার ৯৬৮ জন। এছাড়া বরিশাল বিভাগের প্রায় ১ কোটি মানুষের চিকিৎসাসেবায় সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে ৭০৮ জন এবং বেসরকারিতে ৪২৩ জন চিকিৎসক রয়েছেন।
সূত্রে আরো জানা গেছে, বরিশাল বিভাগের ৩৪টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ৬টি জেলা হাসপাতাল ও ৩৩৬ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের জন্য মোট মঞ্জুরিকৃত

১ হাজার ১২৯টি চিকিৎসক পদের অনুকূলে কর্মরত রয়েছেন ৬০৫ জন। শূন্য রয়েছে ৫২৪টি পদ। বরিশালে মঞ্জুরিকৃত ২২২ পদের অনুকূলে কর্মরত রয়েছেন ১৪৪ জন। পটুয়াখালীতে ১৬৫ পদের অনুকূলে কর্মরত রয়েছেন ৯৩ জন। ভোলায় ১৮৭ পদের অনুকূলে কমরত রয়েছেন ৯১ জন। পিরোজপুরে ১৭২টি পদের অনুকূলে কর্মরত রয়েছেন ৮৯ জন। বরগুনায় ১২৫টি পদের মধ্যে ৬৩ জন কর্মরত রয়েছেন। ঝালকাঠীতে ১০৩টি পদের অনুকূলে ৬৫ জন কর্মরত রয়েছেন।
এছাড়া টেকনোলজিস্ট ২৭৪টি পদের অনুকূলে কর্মরত রয়েছেন ১১২ জন। তৃতীয় শ্রেণির জনবলের ৪ হাজার ১৬৩ জনের মধ্যে কর্মরত রয়েছেন ৩ হাজার ১৫ জন। চতুর্থ শ্রেণির ১ হাজার ২৪১টি পদের মধ্যে কর্মরত রয়েছেন ৭৯৫ জন।
বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালের স্বাধীনতা নার্সেস পরিষদ স্বানাপের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান জানান, গত ৪ আগস্ট পর্যন্ত ৩৪০ জন নার্স করোনা রোগীর সেবা দিতে গিয়ে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। যাদের মধ্যে সুপারভাইজার মাসুমা খানম (৫৯) চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১২ এপ্রিল এবং সিনিয়র স্টাফ নার্স রেহানা পারভীন (৪০) চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৩১ জুলাই শনিবার মারা যান। এছাড়া ভোলায় সিনিয়র স্টাফ নার্স মতিউর রহমান ৩০ জুলাই করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
তিনি আরো জানান, বর্তমানে শুধু শেবাচিম হাসপাতালেই ২৭ জন নার্স করোনা পজেটিভ হয়ে কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, নার্সদের সুরক্ষাসামগ্রীর কোনো ঘাটতি না থাকলেও আরো জনবল দরকার।
করোনা আক্রান্ত একজন নার্স নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, গত বছর মার্চের মাঝামাঝি সময় থেকে কোভিড আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন। দুই মাসের মতো সেবা দেয়ার পর নিজেই আক্রান্ত হন করোনা ভাইরাসে।
এদিকে শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটি ৫০০ থেকে ১ হাজার বেডে উন্নীত করা এবং করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়লেও বাড়েনি চিকিৎসক ও নার্সের সংখ্যা। জানা গেছে, এ হাসপাতালে টেকনোলজিস্টের পদ রয়েছে মাত্র ৬টি, নার্স ব্যতীত অন্যান্য পদের জনবল অর্ধেকও না থাকায় চিকিৎসা ব্যবস্থা চলছে জোড়াতালি দিয়ে। স্থায়ী চিকিৎসক ও জনবল না থাকায় বিভাগের মধ্যে একমাত্র আইসিইউ থাকা শেবাচিমে মুমূর্ষু রোগীদের সেবাও চলছে জোড়াতালি দিয়ে। হিমশিম খেতে হচ্ছে দায়িত্বরতদের, আর সেবাবঞ্চিত হতে হচ্ছে রোগীদের।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. বাসুদেব কুমার দাস জানান, করোনা রোগীদের সেবা দিতে গিয়ে এ পর্যন্ত বিভাগে ৩ জন নার্স মারা গেছেন। আক্রান্ত হয়েছেন অনেকে। বর্তমানে ঝালকাঠির সিভিল সার্জন ডা. রতন কুমার ঢালী করোনা আক্রান্ত রয়েছেন। জনবল সংকটের প্রশ্নে তিনি বলেন, এ বিষয়টি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন। তবে চিকিৎসকসহ জনবল সংকটের বিষয়টি মন্ত্রণালয়সহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়