জন্মদিন : প্রমথ চৌধুরীর সাহিত্যচিন্তা

আগের সংবাদ

বঙ্গবন্ধুর চোখে বঙ্গমাতা

পরের সংবাদ

নতুন রাস্তা নির্মাণ এবং নাব্য সংকটে কমেছে নৌপথ : চলনবিল এলাকায় কদর নেই ডিঙি নৌকার

প্রকাশিত: আগস্ট ৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মো. আকছেদ আলী, ভাঙ্গুড়া (পাবনা) থেকে : এক সময় পাবনা, নাটোর ও সিরাজগঞ্জ জেলার ৯টি উপজেলার ৮৫৫ বর্গমাইল এলাকাজুড়ে চলনবিলের বিস্তৃতি থাকলেও ক্রমশই তা কমছে। নদ-নদী, খাল-বিলের নাব্য সংকট ও চলনবিলের বিভিন্ন এলাকার ওপর দিয়ে অসংখ্য নতুন রাস্তা ঘাট নির্মাণ হওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজতর হলেও চলনবিল তার স্বকীয়তা হারিয়েছে। তাছাড়া চলনবিলের নদীগুলোর মাধ্যমে প্রতি বছর ২২২.৫ মিলিয়ন ঘনফুট পলি বিলে প্রবেশ করে এবং ৫৩ মিলিয়ন ঘন ফুট পলি নদী পথে বিল থেকে বেড়িয়ে যায়। অবশিষ্ট ১৬৯.৫ মিলিয়ন ঘনফুট পলি প্রতি বছর বিলে স্থিত হয়ে বিলের গড় উচ্চতা ০.৫ ইঞ্চি বাড়ায়।
অনেক রাস্তা নির্মাণ হওয়ায় এবং ক্রমশই বিলের উচ্চতা বাড়ায় নৌপথ যেমন কমছে তেমনি কমছে নৌযানের সংখ্যাও। আনুমানিক ৫০ বছর আগেও গভীর, বিপদসঙ্কুল চলনবিলের পানির ঢেউয়ের সঙ্গে যুদ্ধ করে নৌপথে যাতায়াত করত মানুষ। আষাঢ়-শ্রাবণে বিলজুড়ে দাপিয়ে বেড়াতো নৌকা। কিন্তু সা¤প্রতিক বছরগুলোতে বিলে পর্যাপ্ত পানি না হওয়ায় নৌযানের সংখ্যা দ্রত হ্রাস পাচ্ছে।
চলনবিল অধ্যুষিত এ এলাকার বিলগুলোতে আগে আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে বন্যার পানিতে থৈ থৈ করত। এ সময় কদর বাড়ত ছোট ছোট ডিঙি নৌকার।
এ বছর বর্ষাকাল প্রায় শেষ হয়ে এলেও চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুর, গুরুদাসপুর, তাড়াশ, সিংড়াসহ বৃহৎ চলনবিলের অন্যান্য অনেক এলাকার ছোট ছোট বিলে এখনো প্রবেশ করেনি বন্যার পানি। কোন কোন বিলে পানি প্রবেশ করলেও তা যথেষ্ট নয়। তাই চলনবিল এলাকায় কদর কমছে ডিঙি নৌকার। তবে কিছু কিছু মানুষ এখনো ডিঙি নৌকা তৈরি ও বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
ভাঙ্গুড়ার জগাতলা গ্রামের ডিঙি নৌকা ব্যবসায়ী আব্দুল মান্নান জানান, পানি স্বল্পতার কারণে এ বছর ডিঙি নৌকা খুব কম বিক্রি হচ্ছে। নৌকার হাটগুলোতে সামান্য ডিঙি নৌকা উঠলেও দেখা মিলছে না ক্রেতার। ১২ হাত মেহগনি কাঠের টিনের বডির ডিঙি নৌকা ৫ থেকে সাড়ে ৫ হাজার টাকায়, কড়ই কাঠের ১১ হাত ডিঙি নৌকা ৩ হাজার টাকায়, শিমুল কাঠের ১০ হাত ডিঙি নৌকা ২ হাজার ৬শ টাকায়, লাটিম কাঠের ১০ হাত ডিঙি নৌকা ১ হাজার ৮শ থেকে ২ হাজার টাকায়, আম কাঠের ১১ হাত ডিঙি নৌকা ৩ হাজার ৫শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ডিঙি নৌকা তৈরির উপযোগী প্রতি সিএফটি মেহগনি কাঠ ৩৫০ টাকা, কড়ই কাঠ ২৪০ টাকা, শিমুল কাঠ ১৮০ টাকা, লাটিম কাঠ ১৪০ টাকা, আম কাঠ ২৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সাধারণত ১১ হাত একটি নৌকা তৈরি করতে ৬ থেকে ৭ সিএফটি কাঠ, ১শ টাকার লোহা প্রয়োজন হয় এবং মিস্ত্রিকে ৬শ টাকা পারিশ্রমিক দিতে হয়। ক্রেতা সংকটের কারণে এ বছর কাক্সিক্ষত পরিমাণ ডিঙি নৌকা বিক্রি হচ্ছে না বলেও জানান তিনি। হান্ডিয়ালের জাকির সেলিম জানান, মাছ ধরা, নদী পারাপার, ছেলেমেয়েদের স্কুল কলেজে যাতায়াত, আমন ধান ক্ষেতে ধানের ওপর জমে থাকা কচুরিপানা অপসারণে, গরুর খাদ্য হিসেবে কচুরিপানা কাটার কাজে ডিঙি নৌকা বেশি ব্যবহৃত হয়। অনেকে ডিঙি নৌকা কিনে ভাড়ায় মানুষ পারাপার করে জীবিকা নির্বাহ করেন। এবার এখনো বন্যা না হওয়ায় পথ ঘাট শুকনো থাকায়, জলাশয়গুলোতে পর্যাপ্ত পানি না হওয়ায় ডিঙি নৌকার কদর নেই।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়