৯৯৯-এ কলে ৮ কেজি গাঁজা উদ্ধার

আগের সংবাদ

রবীন্দ্রনাথ ও বাঁশির চিত্রকল্প

পরের সংবাদ

সাক্ষাৎকারে হাসানুল হক ইনু : জাসদ জিয়াকে সমর্থন জানায়নি

প্রকাশিত: আগস্ট ৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ঝর্ণা মনি : হাসানুল হক ইনু। রাজনীতিবিদ ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) একাংশের সভাপতি। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম নেতা। ষাটের দশকের কৃতী ফুটবলার ইনু বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে বিএসসি-ইন-কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি অর্জন করেন। ছাত্রজীবনেই রাজনীতিতে হাতেখড়ি নেয়া ইনু ১৯৬৯ সালে ছাত্রলীগের বুয়েট শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৭০ সালের ৭ জুন ছাত্রলীগের জয়বাংলা বাহিনীর মার্চ পাস্টে নেতৃত্বসহ ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ পল্টনে স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলনে নেতৃত্ব দেন। এরশাদবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ১৯৮৬ সালে তিনি জাসদের সাধারণ সম্পাদক এবং ২০০২ সালের ৩১ অক্টোবর জাসদের সভাপতি নির্বাচিত হন।
বাঙালির শোকের মাস আগস্ট নিয়ে সম্প্রতি শেরেবাংলা নগরের সরকারি বাসভবনে ভোরের কাগজের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। সাক্ষাৎকারে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষাপট, জাসদের রাজনীতি এবং আওয়ামী লীগ নেতাদের ভূমিকার ওপরও আলোকপাত করেন ইনু।
জাসদ বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষাপট তৈরি করেছে- দীর্ঘদিন ধরেই এমন বিতর্ক চলে আসছে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষাপট তৈরির দায় জাসদ এড়াতে পারে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে জাসদ সভাপতি ইনু বলেন, বাহাত্তর থেকে পঁচাত্তর পর্যন্ত সংসদীয় পরিবেশে সরকারি দল, বিরোধী দল ছিল। এমন পরিবেশে পক্ষ-বিপক্ষ থাকবে, দ্ব›দ্ব-সংঘাত থাকবে এটাই স্বাভাবিক। কোনো দেশের রাষ্ট্রনায়ক চক্রান্তকারীদের হাতে খুন হলে এর দায় বিরোধী দলের ওপর বর্তায় না। প্রশ্ন হচ্ছে চক্রান্তকারীদের সম্পর্কে বিরোধী দলের দৃষ্টিভঙ্গি কী? বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে জাসদের দ্ব›দ্ব ছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধু হত্যার ৪৮ ঘণ্টার ভেতর জাসদ নেতারা যারা আত্মগোপনে ছিলেন, তাৎক্ষণিক গোপন বৈঠকে বসে তারা সিদ্ধান্ত নেন, খুনি মোশতাকের সরকার বা সামরিক সরকার বঙ্গবন্ধুর বিকল্প হতে পারে না। সেজন্য তখনই মোশতাককে প্রত্যাখ্যান করে সাধ্যমতো উদ্যোগ নিই। জাগমুই নেতা সিরাজুল

হোসেন খান, রাশেদ খান মেনন এবং কাজী জাফরের নেতৃত্বে খন্দকার মোশতাককে প্রত্যাখ্যান করে ২০ আগস্ট প্রকাশ্যে লিফলেট বিতরণ করে জাসদ। এর খেসারত দিতে হয়েছে জাসদকে। মোশতাকের ৮৩ দিনের শাসনামলে গাইবান্ধার রুস্তমসহ শতাধিক নেতাকর্মী নিহত হয়েছে। চিহ্নিত রাজাকার মুক্তি পেয়েছে কিন্তু কারাগারে বন্দি জাসদের কেউ মুক্তি পায়নি। মোশতাকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করার জন্য রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ঘোষণা করায় জাসদের ওপর স্টিম রোলার চালানো হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, জিয়াকে জাসদ সমর্থন জানায়নি। জাসদ জিয়াকে মুক্ত করেনি বরং জিয়া সিপাহী বিদ্রোহে মুক্ত হয়েছেন। ট্রাকে সৈনিকদের উল্লাস হয়েছে, জাসদের কোনো উল্লাস হয়নি। আনুষ্ঠানিকভাবে জিয়াকে বা মোশতাককে বিবৃতি বা সমর্থন দেয়নি বরং সিপিবি মোশতাককে সমর্থন দিয়েছে।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর রাজধানীর রাজপথে জাসদ নেতাকর্মীদের উল্লাসের খবর সত্য নয় বলে দাবি করেন ইনু। এ ঘটনায় মানুষ হতভম্ব হয়ে যায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি আত্মগোপনে ছিলাম। সেখানে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সংবাদ পেয়ে হতবাক হই। এরপর রাস্তায় বের হই। রাজপথে কোনো মহলকে আনন্দ প্রকাশ করতে দেখিনি। কেউ প্রতিবাদও করেনি। ১৬ আগস্ট পত্রিকা দেখলেই বোঝা যাবে। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মোশতাকের বিরুদ্ধে মিছিল হয়েছিল।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে ইনু বলেন, মামলার বিচারে ষড়যন্ত্র উঠে আসেনি। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র হয়েছিল। একাত্তরে দেশি-বিদেশি মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী যারা পরাজিত হয়েছিল, তারাই এ হত্যাকাণ্ড পরিচালিত করেছে। জিয়া, খালেদা জিয়া ধারাবাহিকভাবে খুনিদের রক্ষা করেছে, পুরস্কৃত করেছে। হত্যাকাণ্ডের পর বঙ্গবন্ধুকে নির্বাসনে পাঠানো, তাকে মুছে ফেলার অপচেষ্টা দ্বিতীয় হত্যার পাঁয়তারা।
ইনু বলেন, এটি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড। তাই শ্বেতপত্র প্রকাশের জন্য তদন্ত কমিশন গঠন করা জরুরি। এতে সেনাবাহিনী, প্রশাসন, আওয়ামী লীগ, মন্ত্রিসভা কার কী ভূমিকা ছিল, সব উঠে আসবে। মাঝারি গোছের সেনারা হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে। তিন বাহিনীর প্রধানরা পরবর্তীতে হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ জানাননি বরং আনুগত্য মেনে নেন। বিবৃতির মাধ্যমে সমর্থন জানান। হত্যাকাণ্ডের শ্বেতপত্র প্রকাশ হলে ওমুক দায়ী, তমুক দায়ী আর বলা যাবে না। অন্যদিকে জাতির সামনে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সব ষড়যন্ত্র উন্মোচিত হবে।
তার মতে, হত্যাকাণ্ডের দুটি দিকের একটি হচ্ছে পৈশাচিকতা, নির্মমতা ও বর্বরতা। দ্বিতীয়টা হচ্ছে রাজনৈতিক দিক। খুনিরা বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যা করে কিন্তু পরেরটা আরো নির্মম। বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের আত্মাকে হত্যা করে অসাম্প্রদায়িক-গণতান্ত্রিক জাতীয় সত্তাকে হত্যার অপচেষ্টা চালায় তারা। এরই অংশ হিসেবে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারকাজ বন্ধ করে বঙ্গবন্ধুকে নির্বাসনে পাঠানো হয়। সামরিক শাসনের বলপ্রয়োগের মাধ্যমে ইতিহাস বিকৃতি করে সংবিধান থেকে চার নীতিকে ধূলিসাৎ করা হয়। সাম্প্রদায়িক শক্তি, মৌলবাদী শক্তি, একাত্তরের পরাজিত শক্তি দেশের রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হয়। খুনিদের মহিমান্বিত করে, পুরস্কৃত করে এটি পরিষ্কার হয়- একাত্তরের পরাজিত শক্তিই ১৫ আগস্ট প্রতিশোধ নেয়। খালেদা জিয়া ভুয়া জন্মদিন কেক কেটে উল্লাস করেন। তার উপদেষ্টা প্রফেসর এমাজউদ্দিন ও জাফরুল্লাহ চৌধুরী এই জন্মদিন পালনের জন্য প্রকাশ্যে একাধিকবার নিষেধ করেছেন, এরপরও খালেদা জিয়া ভুয়া জন্মদিন পালন করে প্রমাণ করেছেন তিনি বাঙালি আত্মা না, উনার আত্মা পাকিস্তানি। খুনিরা রাজনৈতিক অপরাধ করেছে পাকিস্তানি ধারায় দেশকে পরিচালিত করার জন্য।
হত্যাকাণ্ডের পর আওয়ামী লীগ নেতাদের ভূমিকার কঠোর সমালোচনা করেন ইনু। তিনি বলেন, জাতীয় চার নেতা গ্রেপ্তারের পর রাজ্জাক ভাই, তোফায়েল ভাইসহ অনেকেই গ্রেপ্তার হয়েছেন। অন্যদিকে বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভার ২১ জন মন্ত্রী খন্দকার মোশতাককে সমর্থন করেন। আনুকূল্য পাওয়ার জন্য তদবির শুরু করেন। বাকিরা নিষ্ক্রিয় ছিলেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়