ডিএনসিসি মেয়র আতিক : ডেঙ্গু প্রতিরোধে সবাইকে সচেতন করতে পারছি না

আগের সংবাদ

বেহাল রেলের মেগা প্রকল্প : খুলনা-মোংলা রেল প্রকল্পের কাজ কবে শেষ হবে কেউ জানে না

পরের সংবাদ

প্রভাবশালীদের দখলে ‘কুড়ির খাল’ : ঝুঁকিতে ষাটগম্বুজ মসজিদ

প্রকাশিত: আগস্ট ৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বাগেরহাট প্রতিনিধি : বাগেরহাটে প্রবহমান ‘কুড়ির খাল’ দখল করে মাছের ঘের করেছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। ফলে, গত কয়েকদিনের বর্ষণে বিশ্ব ঐতিহ্য ষাটগম্বুজ মসজিদসহ কয়েক গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তর বলছে, এভাবে জলবদ্ধতা সৃষ্টি হলে হুমকিতে পড়বে ষাটগম্বুজ মসজিদ। ভুক্তভোগী এলাকাবাসির অভিযোগ, বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়েও তারা কোনো সুফল পাচ্ছেন না। তবে, এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলছে স্থানীয় প্রশাসন। সরজমিনে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা

বলে জানা যায়, বাগেরহাট সদর উপজেলার সুন্দরঘোনা এলাকায় কয়েকজন স্থানীয় প্রভাবশালী প্রবহমান ‘কুড়ির খাল’ দখল করে মাছের ঘের করেছেন। এতে করে গত কয়েক দিনের বর্ষণে হজরত খানজাহান আলী নির্মিত বিশ্বঐতিহ্য ষাটগম্বুজ মসজিদসহ কয়েকটি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
ষাটগুম্বুজ মসজিদের মুসল্লি শেখ আব্দুল হালিম জানান, যুগ যুগ ধরে ‘কুড়ির খাল’ দিয়ে এ অঞ্চলের পানি নদীতে চলে যায়। একটি প্রভাবশালী মহল সেই খালে অবৈধভাবে ৫-৭টি বাঁধ দিয়ে মাছের ঘের করেছে। বৃষ্টি হলেই মসজিদের তিন পাশে পানি জমে। এতে মসজিদের দেয়ালে শেওলা পরে তা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তিনি দ্রুত দখলদারদের হাত থেকে খাল মুক্ত করার দাবি জানান।
ষাটগুম্বুজ মসজিদের ইমাম মাও. হেলাল উদ্দীন মাতব্বর বলেন, মসজিদের ড্রেনেজ ব্যবস্থা খুবই ভালো। কিন্তু যে খাল দিয়ে পানি সরে যাবে সেই ‘কুড়ির খাল’ দিয়ে এখন আর পানি সরতে পারে না। খালে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করায় সামান্য বৃষ্টি হলেই ষাটগম্বুজ মসজিদের তিন পাশে এবং পার্শ^বর্তী বাগানে ব্যাপক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এতে মসজিদের দেয়ালের নিচের দিকে শেওলা পড়েছে। মসজিদের মেঝেতে শ্যাতশ্যাতে হয়ে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।
বাগেরহাট প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তরের ষাটগম্বুজ যাদুঘরের কাস্টডিয়ান মো. জায়েদ বলেন, বৃষ্টি হলেই ষাটগম্বুজ মসজিদের তিন পাশে অনেক পানি জমে। যে কারণে মসজিদের দেয়ালের নিচের দিকে ফাঙ্গাসের সৃষ্টি হয়েছে। এতে বিশ্ব ঐতিহ্য ষাটগম্বুজ মসজিদ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। জলাবদ্ধতার বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসন ও কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
সুন্দরঘোনা গ্রামের বৃদ্ধ শেখ ওয়াজেদ আলী জানান, দীর্ঘদিন ‘কুড়ির খাল’ দিয়ে এ অঞ্চলের পানি সরে যেত। খালটি কয়েকজন মিলে দখল করেছে। এখন সবার বাড়িঘরে পানি উঠে বসবাস করতে কষ্ট হচ্ছে।
মো. কায়জার খান জানান, খাল দখল করায় বৃষ্টি হলে এলাকা তলিয়ে যায়। গত কয়েকদিনের বর্ষণে এলাকায় ব্যাপক জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়ে শত শত পরিবার। তাদের রান্নাবান্না বন্ধ থাকায় শুকনা খাবার খেয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে। তলিয়ে গেছে পুকুর ও মাছের ঘের। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বিভিন্ন দপ্তরে জানিয়েও কোনো ফল হচ্ছে না।
গৃহিণী আলেয়া বেগম বলেন, ‘খাল দখল করায় সামান্য বৃষ্টি হলেই ঘর থেকে বের হওয়ার উপায় নেই। মাত্র এক কাঠা জমির পর আমার বাড়ি। সেখান দিয়ে ¯্রােত বয়ে গেছে। আমরা খুবই বিপদে আছি।
কৃষক সাইদুল মলঙ্গী বলেন, খালটি কয়েকজন প্রভাবশালী দখল করে মাছের ঘের করার পর এখন আর পানি সরে না। প্রায় ৫০ ফুট খাল দখল করে এক ফুট ছোট একটা নালা কেটে দিয়েছে। তা-ও আবার বাঁধ দিয়ে দিয়ে পানি যাতে সরতে না পারে সেই ব্যবস্থা করেছে। শেখ আবুল হোসেন বলেন, এসএ ম্যাপে সরকারি এ খালটি দেখা যায়। কিন্তু বর্তমান জরিপে সরকারি খালটির অস্তিত্ব নেই। কয়েকজন প্রভাবশালী টাকা দিয়ে সরকারি জমি নিজেদের নামে করার চেষ্টা করছে।
বাগেরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মু. মুছাব্বেরুল ইসলাম বলেন, ভারি বর্ষণ হলে বাগেরহাটের নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়। কিছু কিছু স্থানে অবৈধভাবে সরকারি খাল প্রভাবশালীরা দখল করেছে। বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। অচিরেই সব খাল অবৈধ দখলমুক্ত করা হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়