ডিএনসিসি মেয়র আতিক : ডেঙ্গু প্রতিরোধে সবাইকে সচেতন করতে পারছি না

আগের সংবাদ

বেহাল রেলের মেগা প্রকল্প : খুলনা-মোংলা রেল প্রকল্পের কাজ কবে শেষ হবে কেউ জানে না

পরের সংবাদ

প্রতারণা ও অন্ধকার জগতে তারকা মডেল সেলিব্রেটিরা : বাসায় মদ, ইয়াবা, সিসাসহ বিভিন্ন মাদকের বার

প্রকাশিত: আগস্ট ৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

রাজধানীসহ পুরো দেশেই প্রতিদিন নানা অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তার হচ্ছেন অনেকে। অপরাধ দমনে এসব গ্রেপ্তারের ঘটনা স্বাভাবিক। তবে স¤প্রতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে মাদক ও প্রতারণাসহ নানা অপরাধের ঘটনায় সমাজের পরিচিত মুখদের গ্রেপ্তারের ঘটনা ‘টক অব দ্যা কান্ট্রি’তে পরিণত হয়েছে। এর মধ্যে যেমন আছেন ঝরে যাওয়ার তারকা, উঠতি মডেল, তেমনি আছেন চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় মুখ, চিত্রনায়িকাসহ অনেক সেলিব্রেটি। এ বিষয়টি এখন নতুন করে ভাবিয়ে তুলেছে সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, সমাজবিশ্লেষক এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। তারা বলছেন, পরিচিত মুখগুলো যেখানে সমাজের রোল মডেল হওয়ার কথা, সেখানে তারা নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, অসাধু কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে লাভবান হওয়া তাদের মুখ্য উদ্দেশ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। এজন্য শোবিজের খ্যাতিকে পুঁজি করে দ্রুত অর্থবিত্তের মালিক হতে তারা মাদক, প্রতারণাসহ নানা অপরাধ

বাড়াচ্ছেন। প্রতারণার বিনিময়ে সামাজিক মর্যাদা ও স্ট্যাটাস অর্জনের লোভে তারা সুস্থ-স্বাভাবিক জীবন বিসর্জন দিচ্ছেন।
মডেলের বাসায় মদ, ইয়াবা, সিসা : গত রবিবার রাত ১০টার দিকে রাজধানীর বারিধারার বাসা থেকে মডেল পিয়াসা এবং মোহাম্মদপুরের বাবর রোডের বাসা থেকে মডেল মরিয়ম আক্তার মৌকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। এ সময় তাদের বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ মাদক উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, মডেল পিয়াসা ও মৌ একটি সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্য। তারা পার্টির নামে উচ্চবিত্তদের বাসায় ডেকে মদ ও ইয়াবা খাইয়ে আপত্তিকর ছবি তুলে রাখতেন। পরে সেই ছবি দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিতেন।
দুই মডেলকে আটকের পর মোহাম্মদপুরের বাবর রোডে মডেল মৌয়ের বাসার নিচে সাংবাদিকদের ডিএমপি ডিবির (উত্তর) যুগ্ম কমিশনার হারুন-অর-রশীদ বলেন, তারা দুইজন একটি সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্য। তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্ল্যাকমেইলিংয়ের অনেক অভিযোগ পেয়েছি। সেসব ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে তাদের বাসায় অভিযান চালানো হয়। দুজনের বাসায় বিদেশি মদ, ইয়াবা ও সিসা পাওয়া যায়। মৌয়ের বাড়িতে মদের বারও ছিল।
তিনি বলেন, আটক দুই মডেল হচ্ছেন রাতের রানী। তারা দিনের বেলায় ঘুমাতেন ও রাতে এসব কর্মকাণ্ড করতেন। উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানদের পার্টির নামে বাসায় ডেকে এনে তাদের সঙ্গে আপত্তিকর ছবি তুলতেন ও ভিডিও করে রাখতেন। পরবর্তী সময়ে সেসব ভিডিও এবং ছবি ভিকটিমদের পরিবারকে পাঠানোর হুমকি দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করতেন এবং মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিতেন।
হেলেনা জাহাঙ্গীরের বাসায় মদ ও ক্যাসিনো সরঞ্জাম : এর আগে ২৯ জুলাই রাতে রাজধানীর গুলশান-২ এলাকার ৩৬ নম্বর রোডের ৫ নম্বর বাড়ি জেনেটিক রিচমন্ডে অভিযান চালিয়ে হেলেনা জাহাঙ্গীরকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তার বাসা থেকে ১৯ বোতল বিদেশি মদ, ২টি ওয়াকিটকি সেট ও জুয়া (ক্যাসিনো) খেলার সরঞ্জাম উদ্ধার করে র‌্যাব। পরে তার জয়যাত্রা টেলিভিশন স্টেশনেও অভিযান চালানো হয়।
ফেসবুক, ইউটিউব ও তার আইপি চ্যানেল জয়যাত্রা ব্যবহার করে পরিচিত মুখ হয়ে উঠেন হেলেনা জাহাঙ্গীর। তবে গৃহবধূ থেকে ব্যবসায়ী হয়ে সিআইপির (কমার্শিয়ালি ইম্পর্টেন্ট পারসন) স্বীকৃতি পাওয়া এ নারী স¤প্রতি তুমুল সমালোচিত হন আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ নামে একটি সংগঠনের প্রচার চালাতে গিয়ে। পরে উঠে আসে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ উপার্জন ও বিভিন্ন সুবিধা হাসিলই ছিল তার পরিচিতি মুখ হয়ে ওঠার অন্যতম উদ্দেশ্য। এসব কর্মকাণ্ডের জন্য আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক কেন্দ্রীয় উপকমিটির সদস্যপদ ছাড়াও কুমিল্লা উত্তর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টার পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয় তাকে।
মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্রিমিনোলজি এন্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. ওমর ফারুক ভোরের কাগজকে বলেন, অপরাধ জগতের যাওয়ার শুরুটাই হচ্ছে মাদক। শুধু দরিদ্র বা অসচ্ছল লোকজন মাদক ব্যবসা করছেন তা নয়। বরং রাতারাতি কোটিপতি হতে ধনী, ভদ্র পরিবার ও সমাজের পরিচিত মুখদেরও দেখছি এসব কাজে জড়াচ্ছেন। মিডিয়ার উঠতি বয়সিরা মাদকজগতে জড়ানোর বিষয়েও বহুবার খবর প্রকাশিত হয়েছে। মাদক ব্যবসার সঙ্গে তারা বিবাহবহির্ভূত পাশ্চাত্য ধাঁচের একাধিক যৌনসঙ্গীর প্রতিও আসক্ত হচ্ছেন। এতে করে ধীরে ধীরে পারিবারিক কাঠামো ধ্বংস হচ্ছে। এটি উদ্বেগজনক।
এদিকে গৃহকর্মীকে মারধরের ঘটনায় গত ৩১ জুলাই এককালের জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা একাকে গ্রেপ্তার করে হাতিরঝিল থানা পুলিশ। এরপর বেরিয়ে আসে এ নায়িকার জীবনের আরেক গল্প। এ যেন অচেনা এক একা। নিয়মিত মাদক সেবন করায় তার স্বাভাবিক জীবন প্রায় তছনছ। পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের এডিসি হাফিজ আল ফারুক জানান, একার বাসায় অভিযান চালিয়ে পাঁচ পিস ইয়াবা, ৫০ গ্রাম গাঁজা এবং অর্ধেক বোতল মদ পাওয়া গেছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি প্রায় নিয়মিত ইয়াবা সেবনের কথা স্বীকার করেন। এ কারণেই তার এই অবস্থা।
‘নায়িকাদের’ অন্য রকম জীবন : ২০১১ সালের ১৯ ডিসেম্বর মধ্যরাতে কক্সবাজারের একটি আবাসিক হোটেল থেকে পরিচালক ও চিত্রপ্রযোজক জি এম সারওয়ার, মিউজিক ডিরেক্টর হাজি জামাল, দেলোয়ার হোসেন ও চিত্রনায়িকা সিলভিয়া আজমীকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। তখন তাদের কাছ থেকে ইয়াবা ট্যাবলেট, ব্যবহৃত কনডম ও মদের খালি ক্যানসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়। গত ২০১৩ সালে ইয়াবা, মদ ও বিয়ারসহ সংগীতশিল্পী পারুল মাহবুব ও এলিজাসহ চারজন আটক হওয়ার পর বেরিয়ে আসতে শুরু করে তাদের নানা অপকর্মের লোমহর্ষক তথ্য। হালে জনপ্রিয় নায়িকা পরিমণির বিরুদ্ধেও মাদক সংক্রান্ত অভিযোগ রয়েছে। ঢাকাই সিনেমার উঠতি নায়িকাদের অনেকেই এখন ছবির লগ্নিকারী। মাত্র ২-৪টি সিনেমায় অভিনয় করে তারা এখন প্রযোজক বনেছেন। অভিযোগ রয়েছে, এসব নায়িকা লেবাসধারী অর্থলগ্নিকারীরা নায়ক বা নির্মাতাকেও ভাড়া করছেন অর্থের জোরে। তবে উঠতি বয়সি র‌্যাম্প মডেল ও মডেল-অভিনেত্রীরাই মাদক ও অনৈতিক উপায়ে অর্থ উপার্জন করছেন।
আরো জানা গেছে, রাজধানীর শোবিজ জগতের অনেকেই মাদক সেবন ও ব্যবসার পাশাপাশি আপন করেছেন অন্ধকার জগৎকে। তাদের ব্যক্তিগত জীবনের এসব অপরাধ ও সংকট সমাজে প্রতিনিয়ত বিরূপ প্রভাব ফেলছে। এদের পাল্লায় পড়ে রাজধানীর অভিজাত এলাকার ধনী পরিবারের ছেলেমেয়েরা যেমন বিপথগামী হচ্ছে, একইভাবে পিছিয়ে নেই মধ্যবিত্ত-নি¤œমধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানরাও।
র‌্যাব লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন ভোরের কাগজকে বলেন, টেলিভিশন ছাড়াও ফেসবুক, টিকটক ও ইউটিবসহ বিভিন্ন অনলাইন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মসহ মডেলিংয়ের কল্যাণে অনেকেই পরিচিত মুখ হয়ে উঠছেন। তবে আমরা দেখছি, এ পরিচিতি অনেকেই প্রতারণা ও অনৈতিক কাজে ব্যবহার করছেন। তবে অপরাধ করলে কাউকে ছাড় নয়। যেই অপরাধ করবে তাকেই শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়