ডিএনসিসি মেয়র আতিক : ডেঙ্গু প্রতিরোধে সবাইকে সচেতন করতে পারছি না

আগের সংবাদ

বেহাল রেলের মেগা প্রকল্প : খুলনা-মোংলা রেল প্রকল্পের কাজ কবে শেষ হবে কেউ জানে না

পরের সংবাদ

পিনাক ট্র্যাজেডির ৭ বছর : দোষীদের বিচার না হওয়ায় ক্ষোভ

প্রকাশিত: আগস্ট ৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

শিবচর (মাদারীপুর) প্রতিনিধি : পিনাক-৬ লঞ্চডুবিতে সরকারি হিসেবে ৪৯ জন যাত্রীর লাশ উদ্ধার ও ৫৩ জন নিখোঁজ হলেও ৭ বছরেও শেষ হয়নি এ দুর্ঘটনার বিচার কাজ। দুর্ঘটনায় জড়িত সন্দেহে করা দুই মামলার আসামিরা রয়েছে জামিনে। ৭ বছর অতিবাহিত হলেও দোষীদের বিচার না হওয়ায় নিহত ও নিখোঁজদের স্বজনদের মাঝে বিরাজ করছে তীব্র ক্ষোভ। নিখোঁজ অর্ধশতাধিক পরিবারের কাউকেই দেয়া হয়নি কোনো অনুদান। অজ্ঞাত হিসেবে ২১ জনের লাশ দাফন হলেও মেলেনি তাদের পরিচয়। আজও সন্ধান মেলেনি লঞ্চটির।
২০১৪ সালে ঈদুল ফিতরের পর ৪ আগস্ট ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত আড়াই শতাধিক যাত্রী নিয়ে শিবচরের কাওড়াকান্দি ঘাট থেকে ছেড়ে যাওয়া পিনাক-৬ লঞ্চটি পদ্মার উত্তাল ঢেউয়ের কবলে পড়ে মাওয়ার অংশে ডুবে যায়। সরকারিভাবে ওই ঘটনায় ৪৯ জন যাত্রীর লাশ উদ্ধার করা হয়। নিখোঁজ থাকেন ৫৩ জন। নিহতদের মধ্যে অনেকে সপরিবার ও নিখোঁজদের অনেকে সপরিবার রয়েছে। শিবচর পৌর এলাকার মো. নুরুল হক মিয়ার ঢাকার শিকদার মেডিকেলে ডাক্তারি পড়–য়া মেয়ে নুসরাত জাহান হিরা ও রাজধানীর বীরশ্রেষ্ঠ নুর মোহাম্মদ কলেজের ছাত্রী ফাতেমাতুজ জোহরা স্বর্ণা এবং তারই ভায়রার মেয়ে চীনের জইনুস মেডিকেল কলেজের ছাত্রী শরীয়তপুরের গঙ্গানগর এলাকার জান্নাতুল নাঈম লাখী ওই দুর্ঘটনায় মারা গেলেও উদ্ধার হয়েছে দুজনের মরদেহ। ছোট বোন ফাতেমাতুজ জোহরা স্বর্ণা এখনো নিখোঁজ। এছাড়া শিবচর উপজেলার বন্দরখোলা গ্রামের প্রায় অশীতিপর বৃদ্ধা রিজিয়া বেগমের এক ছেলে মিজানুর রহমান, পুত্রবধূ রোকসানা বেগম, আড়াই বছর বয়সের নাতি মাহিন এবং ১১ বছর বয়সি নাতনি মিলিসহ একই পরিবারের চারজন নিখোঁজ হন।
দুর্ঘটনার পর মুন্সীগঞ্জের লৌহজং থানা ও মেরিন কোর্টে দুটি মামলা হয়। আসামিরা গ্রেপ্তার হলেও বর্তমানে আদালত থেকে জামিনে রয়েছেন। দুর্ঘটনায় উদ্ধার করা ৪৯টি লাশের মধ্যে ২৮টি লাশ পরিবারকে বুঝিয়ে দেয়া হয়। ২১ জনকে শিবচর পৌরকবর স্থানে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়। রেখে দেয়া হয় ওই ২১ জনের ডিএনএ টেস্টের নমুনা। তবে ৭ বছরেও কেউ শনাক্ত করতে আসেননি লাশগুলো।
যেসব পরিবারে এখনো স্বজনরা নিখোঁজ রয়েছেন তাদের ভাগ্যে জোটেনি কোনো সরকারি অনুদান। যদিও ২৮ পরিচয়ধারী নিহতদের তাৎক্ষণিকভাবে ২০ হাজার টাকা করে ও পরিবর্তী সময়ে ঘোষিত ১ লাখ ৫ হাজার টাকা করে অনুদান দেয়া হয়। উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হারিয়ে অনেক অসহায় পরিবারকে এখন কাটাতে হচ্ছে মানবেতর জীবনযাপন। ৭ বছরে কেউ-ই তাদের খোঁজ নেননি।
নিহত হিরা ও স্বর্ণার বাবা ওই লঞ্চের যাত্রী নূরুল ইসলাম মিয়া বলেন, লঞ্চের মালিকসহ ঘাটসংশ্লিষ্টদের দায়িত্বে অবহেলার কারণে লঞ্চটি ডুবে যায়। আমার মেয়েসহ অনেক যাত্রী নিহত ও নিখোঁজ হয়। ৭ বছরেও দোষীদের কোনো বিচার হলো না। গ্রেপ্তার হলেও তারা জামিনে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমরা এ ঘটনার দ্রুত বিচার চাই।
বিআইডব্লিউটিএর কাঁঠালবাড়ী ঘাট পরিদর্শক আক্তার হোসেন বলেন, পিনাক-৬ লঞ্চডুবির পর এ নৌপথে ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। আগে একজন পরিবহন পরিদর্শক তিনটি ঘাটের দায়িত্ব পালন করতেন। পিনাক দুর্ঘটনার পরে প্রতিটি ঘাটে একজন করে কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়াসহ অনেক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, পিনাক-৬ লঞ্চডুবিতে অনেকে প্রাণ হারিয়েছেন। অনেকে নিখোঁজ রয়েছেন। এমন দুর্ঘটনা যাতে আর না ঘটে তার জন্য লঞ্চের চালকদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঘাট ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন করা হয়েছে। কোনোভাবেই লঞ্চে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী বহন করতে দেয়া হচ্ছে না।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়