ডিএনসিসি মেয়র আতিক : ডেঙ্গু প্রতিরোধে সবাইকে সচেতন করতে পারছি না

আগের সংবাদ

বেহাল রেলের মেগা প্রকল্প : খুলনা-মোংলা রেল প্রকল্পের কাজ কবে শেষ হবে কেউ জানে না

পরের সংবাদ

পাওনাদারদের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন গরু ব্যবসায়ীরা

প্রকাশিত: আগস্ট ৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আবুল কালাম আজাদ, পাবনা থেকে : দেশের কুরবানি পশুর একটা বড় অংশ সরবরাহ হয় পাবনা জেলা থেকে। গঠন আকৃতি আর রঙের কারণে পাবনার গরুর চাহিদা বেশি সবসময়ই। কিন্তু এবার রাজধানী ঢাকায় কুরবানির গরু নিয়ে বিক্রি করতে না পারায় চরম দিশাহারা হয়ে পড়েছেন পাবনার সদর, সাঁথিয়া, বেড়া, আটঘরিয়া, চাটমোহর ও সুজানগরের গরু ব্যবসায়ীরা। মহামারি করোনা ও সরকার ঘোষিত লকডাউনের কারণে হাটে ক্রেতারা না আসায় অবিক্রীত গরু এখন তাদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকে পাওনাদারদের ভয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা যায়, এবারের ঈদুল আজহায় পাবনায় ২১ হাজার খামারি প্রায় ৩ লাখ কুরবানির পশু বিক্রির উদ্দেশ্যে তৈরি করেছিল। এসব গরু ব্যবসায়ী পাবনা থেকে নিয়ে রাজধানী ঢাকা, চিটাগাং, সিলেট ও নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে দুটো লাভের আশায় বিক্রির জন্য নিয়েছিলেন। কিন্তু এবার তাদের আশায় যেন গুড়ে বালি। ধারদেনা ও ঋণ করে লাখ লাখ টাকার গরু কিনে নিয়ে গিয়ে ৪-৫ দিন গরুর পায়ের নিচে শুয়ে-বসে থেকেও সিকি পারসেন্ট গরুও বিক্রি হয়নি। এছাড়া ফিরতি পথে দ্বিগুণ ট্রাক ভাড়া দিয়ে আবার বাড়িতে আনতে হয়েছে অবিক্রীত গরুগুলো। এতে প্রতিটা গরু ব্যবসায়ীর চরম আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।
পাবনা সদর উপজেলার চকউগ্রগড় গ্রামের গরু ব্যবসায়ী আওয়াল হোসেন জানান, ‘তিনি এবার গরু ধারদেনা ও বাকিতে ১৮টি বড় গরু রাজধানী ঢাকায় নিয়ে গিয়েছিলেন। তার মধ্যে ১১টিই ফেরত এসেছে। অনেকেই অনলাইনে গরু কেনায় এবার রাজধানীর হাটে কাস্টমারই নেই। দু-একজন এলেও গরুর দাম কয় অর্ধেক। যে গরুর দাম সোয়া লাখ দেড় লাখ, সেটার দাম কয় ৬০ হাজার টাকা। এজন্য এবার গরু বিক্রি হয়নি। এখন যাদের কাছ থেকে বাকিতে গরু নিয়েছিলাম তারা বাড়ির ওপর টাকার জন্য চাপ দিচ্ছে। এছাড়া ফেরত গরুর প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজার টাকার গোখাদ্য লাগে। কিযে করি কোনো কিছুই ঠাহর পাচ্ছি না।’
জোয়ারদহ গ্রামের আলম প্রামানিক জানান, তিনি চিটাগাংয়ে ৪৫টি গরু ৩০ লাখ টাকা দিয়ে কিনে গিয়েছিলেন। যার ট্রাক ভাড়াই লেগেছিল সাড়ে ৩ লাখ টাকা। তার মধ্যে লসে ১৫টি বিক্রি করেছেন আর ৩০টি গরু অবিক্রীত ফেরত এনেছেন। ফেরার সময় আবার দ্বিগুণ ট্রাক ভাড়া দিয়ে আসতে হয়েছে। যাদের কাছ থেকে বাকিতে গরু কিনেছিলেন তারা টাকা চাচ্ছে। কিন্তু টাকা দিতে পারছি না।
হামিদপুর গ্রামের চায়ের দোকানদার মহসিন মিয়া জানান, ‘শখের বশে দোকান ফেলে বাহিতে সাড়ে ৩ লাখ টাকা দিয়ে দুডে ষাঁড় কিনে ঢাহার হাটে গেছিলেম। ৪ দিন গরুর পায়ের নিচে শুয়ে-বসে অমানুষিক কষ্ট করেও গরু বেচপের পারলেম না। আবার দ্বিগুণ খরচ করে ফেরত আনলেম। এহন পানাদাররা তাকে টাহার জন্যি খোঁজতেছে। সে টাহা দিবের না পারে পোলা বেড়াচ্ছে। এ নিয়ে তার সংসারেও বউ-ছাউলপলদের সাথে ঝগড়া হচ্ছে। কি করবোনে ভাববের পারতিছিনে। বিষ খাওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকপি নানে।’
এ ব্যাপারে এলাকার মাতবর আলহাজ মিজানুর রহমান খান জানান, ‘গরুর ব্যবসিকদের মুখের দিকে তাকান যাচ্ছে না। তারা ঢাকায় গরু বেচপের না পেরে চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন। এখন যদি সরকার সহযোগিতা না করে তাহলে তাদের বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে হবে।’
একই এলাকার আব্দুস ছাত্তার মাস্টার বলেন, ‘স্থানীয় হাটে বাড়ির গরু বিক্রি করে বেশ লাভ পেয়েছি। কিন্তু এরা একটু বেশি লাভের আশায় ঢাকায় গিয়ে এখন করুণ দশা। সরকারিভাবে এদের পাশে একটু দাঁড়ানো দরকার।’
পাবনা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আল মামুন মণ্ডল বলেন, এবার হাটে চাহিদার চেয়ে কুরবানির পশুর সাপ্লাই বেশি ছিল। যার কারণে ব্যবসায়ীরা চড়া দাম পাননি। তবে বড় গরুর চেয়ে এবার মাঝারি ধরনের গরুর চাহিদা বেশি ছিল। ব্যবসায়ীরা প্রথমদিকে গরু না বিক্রি করেই এমন লসে পড়েছেন। পরে আর কাস্টমার পাননি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়