ডিএনসিসি মেয়র আতিক : ডেঙ্গু প্রতিরোধে সবাইকে সচেতন করতে পারছি না

আগের সংবাদ

বেহাল রেলের মেগা প্রকল্প : খুলনা-মোংলা রেল প্রকল্পের কাজ কবে শেষ হবে কেউ জানে না

পরের সংবাদ

দম ফেলার ফুসরত নেই চাঁই তৈরির কারিগরদের

প্রকাশিত: আগস্ট ৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মো. মাজেম আলী মলিন, গুরুদাসপুর (নাটোর) থেকে : চলনবিল বেষ্টিত গ্রামটির নাম বিলহরিবাড়ি। জনসংখ্যা প্রায় ৫ হাজার। যোগাযোগ ব্যবস্থা পশ্চাদপদ। তার ওপর আত্রাই নদী গ্রামটিকে বিভাজন করেছে। নেই কোনো পাকারাস্তা ঘাট। তবুও করোনা আর লকডাইনেও থেকে নেই মাছ ধরার উপকরণ (চাঁই) তৈরির কাজ। জীবন জীবিকার তাগিদে কাজ করছেন ভরা মৌসুমে দিনরাত। আয় ভালো হওয়ায় পড়ালেখাও করছে এসব পরিবারের ছেলেমেয়ে।
নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার বিয়াঘাট ইউনিয়নে গ্রামটি অবস্থিত। উপজেলা সদর থেকে ৮ কিলোমিটার উত্তরে গ্রামটির অবস্থান। মূলত আত্রাই নদী আর চলনবিলের উন্মুক্ত জলরাশির মাছকে ঘিরে গড়ে উঠেছিল গ্রামটি।
ওই গ্রামটিতে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি বাড়িতেই মাছ ধরার উপকরণ (চাঁই) তৈরিতে ব্যস্ত নারী-পুরুষ। কেউ বাঁশ চেরাই করছেন, কেউ চেরাই করা বাঁশের শলাকা তৈরি করছেন, কেউ কেউ সেই শলাকা নাইলনের সুতোয় সেলাই করে তৈরি করছেন চাঁই। যেন দম ফেলার ফুসরত নেই কারোর।
আশরাফ আলী, মফিজ উদ্দিন ও আহসান নামে তিনজন গ্রামবাসী জানালেন, চাঁই তৈরির প্রধান উকরণ হচ্ছে বাঁশ-নাইলনের সুতো। বাজার থেকে এসব বাঁশ কিনে তা নির্দিষ্ট আকারে কেটে ৩-৭ দিন পানিতে ডুবিয়ে রাখতে হয়। সেই বাঁশ থেকে চিকন শলাকায়ই তৈরি হয় চাঁই।
ওই গ্রামের ইউপি সদস্য কালাম মোল্লা জানান, যেসব পরিবারে দৈন্যতা রয়েছে সেসব পরিবারের সদস্য চুক্তিভিত্তিকভাবে চাঁই তৈরি করে থাকেন। প্রতিটি চাঁই তৈরির জন্য মজুরি পেয়ে থাকেন ৪০-৫০ টাকা করে। দিনে ১০-১২টি চাঁই তৈরি করা যায়। এতে করে মাসে ১০-১২ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করে থাকে এসব পরিবার। গ্রামের অপেক্ষাকৃত সচ্ছল এবং এ ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত অনেক মানুষ এ পেশায় লগ্নি করে থাকেন।
কথা হয় রিনা বেগম ও ছালেহা নামে দুই নারীর সঙ্গে, তাদের ভাষ্য, ২০০৭ সালের দিকে তাদের বিয়ে হয়। বাবার বাড়িতে অভাব-অনটন ছিল। কিশোরী বয়সে নতুন বউ হয়ে স্বামীর সংসারে এসেছিলেন তারা। কিন্তু অভাব পিছু ছাড়েনি তাদের। সংসারে সচ্ছলতা ফেরাতে শ্বশুর-শাশুড়ির কাছ থেকে চাঁই বুনোনোর পেশাটি রপ্ত করেছেন তারা।
এখন তাদের সংসারে ছেলে-মেয়ে রয়েছে। নিজেরা কষ্টে থাকলেও সন্তানদের স্কুলে পড়ছে। অবসরে বাবা-মায়ের পাশাপাশি তারাও চাঁই বুনোনের কাজে সহায়তা করে থাকে। বেঁচে থাকার সংগ্রামে চাঁই তৈরির ওপর নির্ভশীল ওই গ্রামের মানুষ। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে যখন কাজ থাকে না।
বিয়াঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোজাম্মেল হক জানান, একটা সময় ছিল, গ্রামটির মানুষ অভাবের সঙ্গে যুদ্ধ করত। গেল প্রায় এক দশক ধরে চাঁই তৈরির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় তাদের ভাগ্য বদলে গেছে। গ্রামের পরিশ্রমী ওই মানুষগুলো করোনার মধ্যে বসে নেই। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে নিজেদের ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন দিনরাত।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়