শিগগিরই প্রয়োগ শুরু : আরো ৭ লাখ ৮১ হাজার টিকা এলো জাপান থেকে

আগের সংবাদ

বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গুলিবিদ্ধ ২ : সশস্ত্র আরসা ও আরএসও আধিপত্যের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে

পরের সংবাদ

বিরল রোগে আক্রান্ত ৩ সন্তানকে বাঁচাতে হতদরিদ্র বাবার আকুতি

প্রকাশিত: আগস্ট ২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি : বিরল রোগে আক্রান্ত হয়ে বিনা চিকিৎসায় দিন পার করছে হরিপুর উপজেলার এক হতদরিদ্র পরিবারের ৩ শিশু। অন্যান্য শিশুর মতো স্বাভাবিক জীবন ছিল তাদের। স্কুলে যেত, দুরন্তপনা করে বেড়াত, আবার বাবার কাজেও সহযোগিতা করত। কিন্তু হঠাৎ বিরল কোনো রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসার অভাবে আজ প্রতিবন্ধী তিন ভাই।
প্রথম বড় ভাই রমাকান্ত (১৪) দ্বিতীয় শ্রেণিতে ছাত্র থাকা অবস্থায় এই রোগে আক্রান্ত হয়। তার পরে দ্বিতীয় ভাই জয়ন্ত (১২) বড় ভাইয়ের বয়সে এই রোগে আক্রান্ত হয়। আর তৃতীয় ভাই হরিদ্র (৮) সেই রোগে আক্রান্ত হওয়ার পথে। তিন ছেলেকে নিয়ে পরিবারটি এখন পথে বসেছে। এই তিন শিশু ঠাকুরগাঁও হরিপুর উপজেলার ৩নং বকুয়া ইউনিয়নের কাদশুকা গ্রামের বাদুল সিংহের সন্তান। শেষ সম্বল বিক্রি করে দিনমজুর বাবা এখন সবার কাছে সহযোগিতার প্রার্থনা করছেন শিশুগুলোকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য। বুধবার ওই ৩ শিশুর বাসায় গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির বারান্দায় তারা বসে রয়েছে। মা বাড়ির কাজে ব্যস্ত। বাবা মানুষের জমিতে দিনমজুরের কাজে গেছেন। মা বাসার কাজের পাশাপাশি সন্তানদের নিয়ে ব্যস্ত থাকছেন সবসময়। সস্তানরা নিজেরা চলাফেরা করতে পারে না। তাদের সব কাজেই মাকে সহযোগিতা করতে হচ্ছে। তিন সন্তানকে নিয়ে এক প্রকার সমস্যায় রয়েছে তাদের মা। খাওয়া-দাওয়া থেকে শুরু করে গোসল, পায়খানা-প্রসাব সব কিছুতেই মা ছাড়া শিশুগুলো অচল। দিনমজুরের কাজ করে বাবা যা পান তাই দিয়ে সন্তানের খাওয়া-দাওয়া ও পরিবারের খরচ চালান। শিশুগুলোর চিকিৎসা করাবেন এমন কোনো বাড়তি টাকা-পয়সাও নেই দিনমজুর এ অভাগা বাবার কাছে। কোনো প্রকার সরকারি সহযোগিতাও পায় না এ পরিবারটি। এক প্রকার ক্ষোভ নিয়েই দিনমজুর বাবা বাদুল জানালেন কী হবে এসব ছবি তুলে? কেউ তো আমাদের দিকে তাকায় না। শিশুগুলোকে নিয়ে আছি মহাবিপদে।
এলাকাবাসী জানায়, জন্মের পরেই শিশুগুলো ভালো ছিল। কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই হাত-পা শুকিয়ে যাচ্ছে শিশুগুলোর। বড় ছেলেকে চিকিৎসা করাতে গিয়ে তাদের বাবা সর্বস্বান্ত হয়ে গেছেন। শেষে ডাক্তার জানান এই রোগের কোনো চিকিৎসা নেই। তাই পরের দুই ছেলের আর কোনো চিকিৎসা করাননি তাদের বাবা। আর চিকিৎসা করানোর মতো টাকাও নেই অসহায় দিনমজুর বাবার। তাই এভাবেই কষ্ট করে দিন চলছে তাদের। কারো কোনো সহযোগিতাও পাইনি পরিবারটি।
শিশুগুলোর মা কাজলী রানী জানায়, স্বপ্ন ছিল এই তিন সন্তান পরিবারের অভাব দূর করবে। পড়ালেখা করে বড় হয়ে বাবা, মাকে দেখবে। কিন্তু কি এক অজানা অসুখে আমার তিন সন্তান এখন প্রায় পঙ্গু।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, এটি একটি বিরল জেনেটিক রোগ। এ জাতীয় রোগকে ‘ডুচেন মাসকুলার ডিসট্রফি’ (ডিএমডি) বলা হয়। এই রোগের এখন পর্যন্ত কোনো চিকিৎসা আবিষ্কার হয়নি। এই রোগ সাধারণত ছেলেদের হয়ে থাকে। তবে তার তৃতীয় ছেলেটি এখনো সেভাবে এই রোগে আক্রান্ত হয়নি। প্রাথমিকভাবে চিকিৎসা করা গেলে তার তৃতীয় সন্তানটি সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে পারবে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মনিরুল হক খান সেখানে উপস্থিত হয়ে একটি হুইলচেয়ার উপহার দেন পরিবারটিকে। এ সময় তিনি বলেন, এটি একটি বিরল রোগ। তাই চিকিৎসার জন্য পরিবারটিকে সহযোগিতা করা হবে। এছাড়াও সরকারি যেসব সুযোগ-সুবিধা আছে সেগুলো পাইয়ে দিতেও পরিবারটিকে সহযোগিতা করা হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়