শিগগিরই প্রয়োগ শুরু : আরো ৭ লাখ ৮১ হাজার টিকা এলো জাপান থেকে

আগের সংবাদ

বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গুলিবিদ্ধ ২ : সশস্ত্র আরসা ও আরএসও আধিপত্যের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে

পরের সংবাদ

গ্রামকে শহর করতে চাই : হাজী আব্দুল লতিফ মেয়র, শাহরাস্তি পৌরসভা

প্রকাশিত: আগস্ট ২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

স্বপন কর্মকার মিঠুন, শাহরাস্তি (চাঁদপুর) থেকে : স্থানীয় সরকার কাঠামোর অন্যতম শক্তিশালী সেবামূলক প্রতিষ্ঠান হলো পৌরসভা। চাঁদপুর জেলার অন্যতম পৌরসভা শাহরাস্তি। শাহরাস্তি উপজেলাটি মূলত প্রখ্যাত অলিয়ে কামেল রাস্তি শাহ্ (রহ.) এর নামানুসারে নামকরণ করা হয়। সেই অনুযায়ী পৌরসভার নামকরণ হয় শাহরাস্তি পৌরসভা। ১৯৯৮ সালের ১০ আগস্ট এ পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০১২ সালে ‘গ’ শ্রেণী থেকে ‘খ’ শ্রেণীতে উন্নীত হয় এবং ২০১৪ সালে ‘খ’ থেকে ‘ক’ শ্রেণীতে উন্নীত করা হয়। এই পৌরসভায় ওয়ার্ড রয়েছে১২টি। পৌরসভার আয়তন ৩৪ দশমিক ৫০ বর্গকিলোমিটার। এতে জনসংখ্যা প্রায় ৬২ হাজার। ভোটার ৩০ হাজার ৮৬৪ জন। শিক্ষার হার ৭১ দশমিক ৬০ ভাগ। এই পৌরসভার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো অসাম্প্রদায়িক ও সম্প্রীতির মাঝে নাগরিকরা বসবাস করে আসছেন।
হাজী আব্দুল লতিফ ২০১৬ সালে প্রথম নৌকা প্রতীক নিয়ে এ পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হন। পাঁচ বছর পর ২০২১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পৌরসভা নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে জনগণ তাকে আবার নির্বাচিত করেন। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে চাঁদপুর-৫ আসন (হাজিগঞ্জ-শাহরাস্তি) নির্বাচনী এলাকার সংসদ সদস্য মুক্তিযুদ্ধের ১নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তমের সার্বিক সহযোগিতায় এই পৌরসভাকে গ্রাম থেকে শহরে রূপান্তর করতে মেয়র হাজী আব্দুল লতিফ কাজ করে যাচ্ছেন।
হাজী আব্দুল লতিফ ভোরের কাগজকে বলেন, পূর্ববর্তী মেয়রদের বিভিন্ন ধার-দেনা ও বকেয়া পরিশোধ করাসহ শত প্রতিবন্ধকতার বেড়াজাল ছিন্ন করে বহু চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আমার আমলে পৌরসভাটি উন্নয়ন ও অগ্রগতির দিকে এগিয়ে চলছে। আমি জনগণের সেবক হয়ে কাজ করার প্রতিশ্রæতি দিয়ে মেয়র হয়েছি। পৌরবাসীর কাছে প্রতিশ্রæতিবদ্ধ বলে যতদিন মেয়র হিসেবে থাকব, তাদের ভাগ্য পরিবর্তনে নিরলস কাজ করে যাব।
তিনি আরো বলেন, আমি বাস্তবে বিশ্বাসী। অবস্থা ও সার্বিক বিবেচনায় যেটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ, সেটাকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকি। করোনা

ভাইরাসে (কোভিড-১৯) সৃষ্ট পরিস্থিতি মোকাবেলায় সংসদ সদস্যের নির্দেশ ও সহযোগিতায় আমি জনগণের মাঝে ত্রাণ, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, ডেটল, সাবান, মাস্ক, শুকনো খাবার এবং বিভিন্ন বাজার ও প্রতিষ্ঠানে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করেছি। ডেঙ্গু প্রতিরোধে ১২টি ওয়ার্ডে ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার, মশক নিধনে ফগার মেশিন ও হ্যান্ড স্প্রে মেশিনের মাধ্যমে জীবাণুনাশক ওষুধ ছিটানোর কাজ করে যাচ্ছি। আর্সেনিকমুক্ত বিশুদ্ধ পানির জন্য সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপনের জন্য আমি পৌরসভাকে ব্যক্তিগতভাবে ৭৭ শতক ভূমি বিনামূল্যে রেজিস্ট্রি দলিলমূলে দান করেছি। ওই ভূমিতে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের আর্থিক সহায়তায় সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট, ওভার হেড ট্যাংকি, পাইপলাইন নির্মাণ এবং ডাকাতিয়া নদীতে ভাসমান পাম্প বসানো হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৫ দশমিক ৫০ কোটি টাকা। প্রকল্পটির কাজ শেষ হয়ে বর্তমানে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ দিচ্ছে। এছাড়া অনেক চেষ্টা-তদবির করে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের অর্থায়নে তিনটি গভীর নলকূপ, পাম্প হাউস ও ১০ কিমি পাইপলাইন নির্মাণ করাসহ ১৮৫টি আর্সেনিকমুক্ত গভীর নলকূপ স্থাপন ও ১২টি ওয়ার্ডে ১২টি গণশৌচাগার নির্মাণ করা হয়েছে।
সম্পদের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও পৌরসভা কর্তৃক বাস্তবায়িত ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়ন কাজের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে জলাবদ্ধতা নিরসনে ড্রেন নির্মাণ ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ শুরু করি এবং ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ ও মশক নিধনে কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। স্থানসংকটে ময়লা ফেলার ডাস্টবিন করা যাচ্ছে না। পৌর নাগরিকদের ট্যাক্সের ওপর নির্ভর করে পৌরসভার উন্নয়ন করা সম্ভব নয়। পৌরসভার নিজস্ব সম্পত্তি না থাকায় কোথাও মার্কেট করা যাচ্ছে না। নেই চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা। তারপরও উন্নয়ন থমকে নেই।
হাজী আব্দুল লতিফ বলেন, বিগত পাঁচ বছরে পৌরসভার ১২টি ওয়ার্ডে রাজস্ব তহবিলের অধীন ১৯টি স্কিমের মাধ্যমে ৬৩ দশমিক ২৩ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রায় ১ দশমিক ১৫ কিমি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে এবং বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) ১০১টি স্কিমের মাধ্যমে ৫ দশমিক ১০ কোটি টাকা ব্যয় প্রায় ৬ দশমিক ১৫ কিমি রাস্তার উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন হয়েছে ও হচ্ছে। তৃতীয় নগর পরিচালনা ও অবকাঠামো উন্নতিকরণ (সেক্টর) প্রকল্পাধীন ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০ দশমিক ১৫৬ কিমি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। গুরুত্বপূর্ণ নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পাধীন সাতটি স্কিমের মাধ্যমে ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫ কিমি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়।
বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের অধীন ১৬টি স্কিমের মাধ্যমে ৬ দশমিক ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে ড্রেনেজ প্রকল্প বাস্তবায়ন ও বাস্তবায়নাধীন, ৪০ পৌরসভা প্রকল্পাধীন ১০টি স্কিমের মাধ্যমে ১ দশমিক ৭৭ কোটি টাকা ব্যয়ে চারটি পাবলিক টয়লেট নির্মাণ হয়েছে। আর্সেনিকমুক্ত গভীর নলকূপ ১০০টি, হাউস সংযোগ ৯০০টির কাজ বাস্তবায়ন হয়েছে ও বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। সরকারি টিআর প্রকল্পাধীন প্রায় ৩২ লাখ টাকার উন্নয়ন প্রকল্প কাজ এবং প্রায় ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে সোলার স্থাপন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এছাড়া মাননীয় সংসদ সদস্যের একান্ত প্রচেষ্টায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর কর্তৃক পৌরসভার আওতাধীন প্রায় ১২ কিমি সড়ক পাকাকরণের কাজ বাস্তবায়ন করাসহ মোট ৪১ দশমিক ৫০ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন হয়েছে ও বাস্তবায়নাধীন রয়েছে।
মেয়র আরো বলেন, পৌরসভা একটি মাত্র খাত এডিপি থেকে সরকারি বরাদ্দ পেয়ে থাকে। চার বছর ধরে বরাদ্দের ছাড় পাইনি। পৌরসভার তহবিল থেকে পরিষদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন, বিদ্যুৎ বিল বাবদ মাসে ১৫-১৬ লাখ টাকা দিতে হচ্ছে। কিন্তু একটি ইউনিয়ন পরিষদ এডিপি, এজিএসপি, ৪০ দিনের কর্মসূচি, এমপির বরাদ্দ, এলজিইডি, জেলা পরিষদের বরাদ্দ, উপজেলা পরিষদের বরাদ্দসহ বিভিন্ন দাতা সংস্থার বরাদ্দ পেয়ে থাকলেও পৌরসভা তা পাচ্ছে না।
পৌর এলাকায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনার আলোকে তথ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় সহজে পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে চালু করা হয়েছে ডিজিটাল সেন্টার, স্টাফদের হাজিরা সুনিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে স্থাপন করা হয়েছে ডিজিটাল ফিঙ্গারপ্রিন্ট হাজিরা মেশিন। সার্বিকভাবে পৌরসভার সব ওয়ার্ডের ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনার অংশ হিসেবে পৌর এলাকার সার্বিক উন্নয়ন প্রকল্পগুলো পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হবে। রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট, ড্রেন, স্ট্রিট লাইটিং, পানি সরবরাহ পাইপলাইন সম্প্রসারণ, পানি শোধনাগার প্ল্যান্ট স্থাপন করাসহ নানাবিধ প্রকল্পের মাধ্যমে পৌরবাসীকে নাগরিক সুবিধা দেয়ার জন্য নিরলস প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়