শিগগিরই প্রয়োগ শুরু : আরো ৭ লাখ ৮১ হাজার টিকা এলো জাপান থেকে

আগের সংবাদ

বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গুলিবিদ্ধ ২ : সশস্ত্র আরসা ও আরএসও আধিপত্যের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে

পরের সংবাদ

আত্মহননের এই প্রক্রিয়া বন্ধ হোক

প্রকাশিত: আগস্ট ২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

দৃশ্যপট, সকাল পৌনে ১০টা। ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকা। মুদি, মোবাইল বিল রিচার্জ, লন্ড্রি, ইলেকট্রনিকসসহ বিভিন্ন পণ্যের বেশ কিছু দোকান খোলা। তবে বেশিরভাগ দোকানের শাটার আধখোলা। হঠাৎ বাইরে একজন চিৎকার করে উঠলেন- ‘আইছে, আইছে। প্রায় একই সঙ্গে বন্ধ হয়ে গেল সবগুলো খোলা থাকা দোকানের শাটার। প্রায় এক ছন্দে। রাস্তায় দাঁড়িয়ে ফল, সবজি বিক্রি করা ফেরিওয়ালারাও ভ্যান নিয়ে সরে গেলেন গলির ভেতর। তখনই দেখা গেল মোহাম্মদপুর থানার একটি টহল গাড়ি।
মোহাম্মদীয়া হাউজিং এলাকায় টহল দিয়ে কালভার্ট পার হয়ে সেই গাড়ি গেল লোহার গেট এলাকার দিকে। পুলিশের গাড়ি চলে যাওয়ার মিনিটখানেক পরে আবার উঠে গেল দোকানের শাটার। কিছু দোকান থেকে বেরিয়ে এলেন আটকা পড়া ক্রেতারা। ঈদের পর শুরু হওয়া ‘কঠোরতম লকডাউনের’ চতুর্থ দিন সোমবার দেখা গেল এমন চিত্র। তবে এমন ঘটনা ঘটছে প্রতিদিনই, দিনে কয়েকবার।
এই দৃশ্য নতুন কিছু নয়। ১৯৭১ সালে আমাদের জীবন যখন হাতের মুঠোয় তখনো এমন হতো। বাঙালি সারাজীবন এমন কাণ্ড করায় ওস্তাদ। কিন্তু তফাত একটাই। পাকিস্তানি বাহিনী বা পাঞ্জাবি আইতাছে এই বলে লুকিয়ে যাওয়া কিংবা এরশাদ আমলে পুলিশ-মিলিটারি দেখে পালিয়া যাওয়া আবার ফিরে আসা আর আজকের এই লুকোচুরিতে অনেক ফারাক। এখন আমাদের দুশমন আমরা নিজেরা। এখানে কোনো দৃশ্যমান দুশমন নেই। আমাদের ভেতরেই বাস করছে প্রাণঘাতী শত্রæ। তাই এভাবে লুকোচুরি করে মূলত নিজেকে নিজেরাই মেরে ফেলার পথ প্রশস্ত করছি আমরা।
শুধু বাংলাদেশ বা আমাদের জনগণকে দায়ী করে লাভ হবে না। উন্নত দেশ নামে পরিচিত অস্ট্রেলিয়া। এ দেশের প্রায় শতভাগ মানুষ লেখাপড়া জানেন। এই লকডাউনে অন্য যে কোনো দেশের তুলনায় এগিয়ে আছে এ দেশ। জনসংখ্যা মাত্র আড়াই কোটির কিছু বেশি। তাই নিয়ন্ত্রণ তেমন কঠিন কিছু না। এই লেখা যখন লিখছি তখন দ্বিতীয় সংক্রমণে কাহিল এ দেশ। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট নামের এই সাঁড়াশি আক্রমণে সিডনি এখন পর্যুদস্ত। আগে জানুন এখানে ছোট ব্যবসা নামে পরিচিত সব দোকানদার সপ্তাহে ১০ হাজার ডলার অনুদান পাচ্ছেন। কর্মচারীদের জন্য সপ্তাহে বেশ ভালো অঙ্কের ডলার বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। তারপরও গত কদিন আগে সিডনি মুখোমুখি হয়েছিল এক বিপজ্জনক বাস্তবতার। আজকাল সামাজিক মিডিয়ায় যেমন ভালো কাজ হচ্ছে তেমনি এই মিডিয়াকে পুঁজি করে দেশে দেশে চলছে নানা ধরনের উত্তেজনা। এই উত্তেজনাকে পুঁজি করে সিডনির রাজপথে নেমে এসেছিল হাজার হাজার মানুষ। বিস্মিত আমরা দেখলাম মাউন্ট পুলিশ নামের ঘোড়ার পুলিশকেও তোয়াক্কা করেনি উগ্র মানুষজন। নিরীহ ঘোড়াও তাদের আক্রমণ থেকে রেহাই পায়নি। এই ঘটনার পর হতচকিত সরকার ও সংশ্লিষ্টজনরা হতাশ। মুখ্যমন্ত্রী একজন নারী। তিনি সরাসরি বলেছেন, এই আচরণ তাকে ব্যথিত করেছে তিনি হতাশ। যেভাবেই হোক হাজার কয়েক মানুষ যে অন্যায় করেছেন তার দায় নিতে হবে সবাইকে।
এখন এই জমায়েত সংক্রমণকে কীভাবে প্রভাবিত করে কিংবা কতটা যায় তা সময়ের ব্যাপার। এ জায়গায় আমাদের দেশ ও জনগণকে স্যালুট জানাই। তাদের জন্য না আছে কোনো অনুদান না কোনো গ্যারান্টেড সাহায্য। তারপরও তারা সহ্য করছেন। এই যে ওপরের ঘটনাগুলো তার কারণ কিন্তু এদের চাওয়া-পাওয়ার ফারাক। দরিদ্র নিম্নবিত্ত মানুষের জীবন আজ বিপন্ন। তাদের দিন এনে দিন খাওয়ার জীবনে অভাব মেটানোর কোনো পথ খোলা নেই জেনেও তারা সভ্য সিডনির মানুষজনের মতো রাস্তায় নেমে নর্তন-কুর্দন করেনি। এই বাস্তবতা লন্ডন, রোম, এথেন্সসহ আমেরিকার বহু শহরে আজ স্পষ্ট। গণতান্ত্রিক সমাজের কিছু অসুবিধা আছে। মানবিকতা আর সিভিল রাইটের নামে এখানে অনেক কিছু জায়েজ। চাইলেই সরকার যা খুশি তা করতে পারে না।
তবে একটা বিশাল পার্থক্য আছে আমাদের সঙ্গে। আইন, বিচার, শাস্তি আর জরিমানা এড়াতে পারে না কেউ। তাই এই প্রতিবাদ বা সমাবেশ না পেরেছে এগোতে না পারবে আর সামনে যেতে। কিন্তু আমাদের বাস্তবতা ভিন্ন। সেখানে একবার এমন অন্যায় বা আইন ভাঙলে তার প্রতিরোধ কিংবা তা সামলানো কঠিন হয়ে পড়বে। বাস্তবে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আছেন বলে এখনো এ জাতীয় ঘটনা ঘটেনি বা ঘটবে বলে মনে হয় না। কিন্তু সাবধানতার বিকল্প নেই।
সামনে কঠিন সময়। একদিকে করোনা ঢেউয়ের পর ঢেউয়ে আঘাত হানছে। অন্যদিকে দরিদ্র নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্ত হয়ে উঠছে অধৈর্য। তাদের জীবন-জীবিকা যখন হুমকির মুখে তারা কতদিন লকডাউন মানবে? উপায় অবশ্যই আছে। সে দিন সিডনিতে এক জুম মিটিংয়ে যোগ দিয়েছিলেন জাতীয় কোভিড কমিটির অধ্যাপক ইকবাল আসলান। তিনি যা বলেছেন তাতে এটা স্পষ্ট বাংলাদেশ হারবে না। প্রধানমন্ত্রী নিজে সবকিছুর দেখভাল করছেন। সবচেয়ে বড় ব্যাপার আজ বাংলাদেশ তার নিজের পায়ের ওপর দাঁড়িয়ে কথা বলছে। তার কারো চোখ রাঙানো বা দয়া সহ্য করার দরকার নেই। সে দিনের সভায় লেখক সুভাষ সিংহ রায় বলছিলেন বাংলাদেশ কোনো অনুদান চায় না। অস্ট্রেলিয়া তার মজুত করা বাড়তি ভ্যাকসিন বাংলাদেশকে সাহায্য না বিক্রি করলেই দেশ খুশি। বলাবাহুল্য এ বিষয়ে হাইকমিশনসহ পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে যোগাযোগও হয়ে গেছে। এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।
ইতোমধ্যে জাপান দিচ্ছে, চীন দিচ্ছে আরো টিকা আসতে চলেছে দেশে। সময়কে বাগে আনতে দরকার সংযম আর নিয়ম মানা। এই নিয়ম মানাটাও নতুন কিছু নয়। গত এক বছরের বেশি সময় মানুষকে বোঝানোর পর মানুষকে শরীরের যতœ নিতে বলাটা অভ্যাসে পরিণত হওয়ার পরও কেন নিয়ম মানছে না জনগণ? তার নেপথ্য একটি কারণ অন্ধ বিশ্বাস আর মিথ্যা প্রচারণা। একদল মানুষ বিশ্বাস করে আর তা জানাতে কসুর করে না। কোথা থেকে এসব উদ্ভট আইডিয়া আসে? এই রোগ নাকি দরিদ্র মানুষজনের হয় না। আসলে তাদের ইমিউন সিস্টেম শক্ত আর ভালো বলে সহজে কাহিল হয় না। কিন্তু তাদের মাধ্যমে সংক্রমণ বাড়ছে। আক্রান্ত হচ্ছেন সাধারণ জনগণ। এটা তাদের কে বোঝাবে?
তাই এ কথা বলতে চাই, টিকা পেলেও এদিকটা সামলানো বড় দায়িত্ব। সবার আগে মানুষকে শোধরানো তারপর টিকার আওতায় আনয়ন। এটা এখন বিশ্বের সব দেশের দায়িত্ব। সভ্য দেশ সভ্য সমাজ তা বাস্তবায়নে অগ্রসর হয়েই আছে। এবং এসব দেশ ও সমাজে টিকা নেয়াটা সময়ের ব্যাপার। টিকাবিমুখ বাঙালি জনগোষ্ঠীকে কি রাষ্ট্র পারবে সামলে রেখে নিরাপত্তার পথে নিয়ে যেতে? সেখানেই আমাদের জাতির ভবিষ্যৎ নিহিত।
অজয় দাশগুপ্ত : কলাম লেখক।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়