হেফাজতের সহিংসতা : এজাহারনামীয় এক আসামি গ্রেপ্তার

আগের সংবাদ

বোল্টের সিংহাসনে বসলেন জ্যাকবস

পরের সংবাদ

রপ্তানিমুখী শিল্প-কারখানা খুলবে আজ : চাকরি বাঁচাতে ঢাকামুখী জনস্রোত

প্রকাশিত: আগস্ট ১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যেই গার্মেন্ট-শিল্প-কারখানা খুলে দেয়ায় দেশের সব প্রান্ত থেকে ঢাকামুখী মানুষের ঢল নেমেছে। বৃষ্টি ও বৈরী আবহাওয়া, পথের ভোগান্তি নিয়েই যে যেভাবে পারছে ঢাকায় ফিরতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। মানুষের চাপে রাজধানীর প্রবেশপথ গাবতলী, আবদুল্লাহপুর, সাইনবোর্ড-যাত্রাবাড়ী ও বাবুবাজার ব্রিজ এলাকায় জনসমাগম বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কঠিন আকার ধারণ করে। বৃষ্টি ও বৈরী আবহাওয়ায় মধ্যেও হাজার হাজার মানুষ ঝুঁকি নিয়ে মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া-বাংলাবাজার এবং মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরিঘাট পার হয়ে ঢাকায় ফিরছে। ফেরিগুলোতে ছিল মানুষের উপচে ভিড়। মানুষের ভিড়ের চাপে জরুরি যানবাহনগুলোও পার হতে পারেনি। চাকরি বাঁচাতে জীবনবাজি রেখে ঢাকা ফিরছে পোশাকশ্রমিকরা।
জানা গেছে, গার্মেন্টসসহ শিল্পকারখানা আজ রবিবার থেকে খুলে দেয়ার ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে ফোনে সব কর্মীকে কাজে যোগ দিতে বলা হয়েছে। তাই লাখ লাখ কর্মী তাদের চাকরি বাঁচাতে ঢাকায় ফিরতে মরিয়া হয়ে ওঠে। পথের ভোগান্তি সঙ্গী করেই যে যেভাবে পারছে সেভাবেই কর্মস্থলে ফিরছে।
গতকাল শনিবার দেশের সড়ক-মহাসড়ক ও ফেরিঘাটগুলোতে ভয়াবহ চিত্র ফুটে উঠেছে। শিল্প-কারখানা খুলে দেয়ার সুযোগে অন্য সেক্টরের বিভিন্ন বেসরকারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও অফিস খোলার ঘোষণা দিয়ে কর্মীদের কাজে যোগ দিতে নির্দেশ দিয়েছে। গণপরিবহন বন্ধ

থাকায় লোকজন সিএনজি অটোরিকশা, ভাড়ায় চালিত ব্যক্তিগত গাড়ি, মাইক্রোবাস, পিকআপ ভ্যান, রিকশা ও হেঁটে ঢাকায় এসে পৌঁছেছেন।
দেশের প্রধান দুই ফেরিঘাট শিমুলিয়া এবং পাটুরিয়াতে ঢাকামুখী মানুষের চাপ ছিল কয়েকগুণ। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উভয় ফেরিঘাট এলাকায় যাত্রীর ভিড় বাড়তে থাকে। প্রতিটি ফেরিতেই মানুষের উপচে পড়া ভিড় ছিল। সামাজিক দূরত্ব না মেনে গাদাগাদি করে হাজার হাজার যাত্রী মাদারীপুরের বাংলাবাজার এবং রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ফেরিঘাট থেকে নদী পার হয়ে পাটুরিয়া এবং শিমুলিয়ায় আসে। ফেরির র‌্যাম খোলার সঙ্গে সঙ্গে অপেক্ষামাণ যাত্রীরা হুমড়ি খেয়ে পড়ে। কে কার আগে ফেরিতে উঠবে, তা নিয়ে প্রতিযোগিতা শুরু হয়। যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকলেও পুলিশ মানুষের চাপ সামাল দিতে পারেনি। ফেরিতে ওঠামাত্র গায়ে গা লেগে দাঁড়িয়ে থাকছে।
ঘাট পার হয়ে অতিরিক্ত ভাড়ায় মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার, রিকশা, ভ্যান, পিকআপে ঢাকার প্রবেশপথে চলে আসে। পাটুরিয়া ফেরিঘাট থেকে গাবতলী পর্যন্ত প্রাইভেটকারে ভাড়া এক হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা ভাড়া গুনতে হচ্ছে। গার্মেন্টকর্মী দেলোয়ার হোসেন জানান, রবিবার থেকে গার্মেন্ট খুলবে। কাজে যোগ দেয়ার জন্য গ্রামে থেকে দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে ভেঙে ভেঙে গাবতলী পর্যন্ত এসেছি।
নাজমা বেগম নামে অন্য এক গার্মেন্টকর্মী জানান, তিনি তেজগাঁও এলাকার একটি গার্মেন্টে কাজ করেন। ফোনে জানানো হয়েছে ১ তারিখ থেকে কারখানা খুলবে। তাই তিনি ফরিদপুরের মধুখালী থেকে ভেঙে ভেঙে পাটুরিয়া হয়ে গাবতলী এসেছেন। ভাড়াও গুনতে হয়েছে কয়েকগুণ বেশি।
এভাবে হাজার হাজার মানুষ গতকাল দেশের সব জেলা-উপজেলা ও গ্রাম থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা হয়। মানুষের চাপে রাজধানীর সবগুলো প্রবেশ পথেই সকাল থেকে মানুষের ঢল নামে। শিমুলিয়া ঘাট হয়ে পুরান ঢাকার বাবুবাজার ব্রিজ এলাকা দিয়ে ঢাকায় ফেরা মানুষের ভিড় ছিল সবচেয়ে বেশি। শিমুলিয়া ঘাট থেকে কয়েক গুণ বেশি ভাড়া দিয়ে ছোট ছোট পরিবহনের মাধ্যমে গ্রামের রাস্তা ধরে কেরানীগঞ্জের কদমতলী মোড়ে চলে আসে। এরপর তারা রিকশায়, ভ্যানে এবং পায়ে হেঁটে বাবুবাজার ব্রিজ পার হয়ে ঢাকায় প্রবেশ করে। সকাল থেকে শুরু হওয়া মানুষের চাপ বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আরো বাড়তে থাকে।
ঢাকার অন্যতম প্রবেশপথ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড-যাত্রাবাড়ীর এলাকায় মানুষের ভিড় লেগেই ছিল। হাতে-মাথায়-কাঁধে জিনিসপত্র এবং নারী-শিশুসহ ঢাকামুখী মানুষ অনেক ভোগান্তি নিয়ে ফিরেছে। যানবাহন না পেয়ে তারা পায়ে হেঁটেই রওয়ানা হয়। অনেকে রিকশাভ্যানে গাদাগাদি করেই রওয়ানা হয়। সাইনবোর্ড থেকে যাত্রাবাড়ীর রাস্তায় সারাদিনই মানুষের মিছিল ছিল। সাইনবোর্ড এলাকা থেকে নারায়ণগঞ্জের দিকের রাস্তাতেও একই অবস্থার সৃষ্টি হয়। শরিফুল ইসলাম নোয়াখালী থেকে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে মাথাপিছু এগারো’শ টাকা ভাড়ায় সাইনবোর্ড পর্যন্ত আসতে পেরেছে। সুলতানা রহমান জানান, গার্মেন্টস খেলার খবর পেয়েই তিনি কুমিল্লা থেকে সকালে রওয়ানা দিয়ে ঢাকায় পৌঁছেছেন।
সাইনবোর্ড চেকপোস্টে যাত্রাবাড়ী থানার পুলিশ ইন্সপেক্টর আয়ান মাহমুদ জানান, বিধিনিষেধের পর থেকে আজ (গতকাল) মানুষের সবচেয়ে বেশি ভিড় ছিল। মানুষ ¯্রােতের মতো ঢাকায় ঢুকছে। আমরা কাউকে আটকাতে পারছি না। গার্মেন্টস ও শিল্প-কারখানা খুলে দেয়ায় সবাই এখন একসঙ্গে ঢাকায় ফিরতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।
গাবতলীতেও গতকাল ঢাকামুখী মানুষের প্রবল চাপ ছিল। মানুষের পাশাপাশি ব্যক্তিগত গাড়ি ও মোটরসাইকেলের চাপও বেড়েছে। দফায় দফায় বৃষ্টি উপেক্ষা করে গাবতলী থেকে পায়ে হেঁটে লোকজন গন্তব্যে রওয়ানা হয়।
রাজধানীর আবদুল্লাহপুর প্রবেশপথ দিয়েও সকাল থেকে টঙ্গী ব্রিজ পার হয়ে এবং আশুলিয়ার দিক থেকে একযোগে আসায় আবদুল্লাহপুর মোড়ে মানুষের ঢল নামে। মানুষের সঙ্গে মোটরসাইকেল ও ভাড়া গাড়িতে লোকজন ঢাকায় ফিরছে। চেকপোস্টে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তারা নানা ধরনের অজুহাত দেখাচ্ছে। পুলিশের সঙ্গে তর্কাতর্কিও হয়। আবদুল্লাহপুর থেকে অনেকে ঢাকার ভেতরের গন্তব্যে যাওয়ার যানবাহন না পেয়ে পায়ে হেঁটেই যাত্রা শুরু করেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়