হেফাজতের সহিংসতা : এজাহারনামীয় এক আসামি গ্রেপ্তার

আগের সংবাদ

বোল্টের সিংহাসনে বসলেন জ্যাকবস

পরের সংবাদ

ছাড়পত্র জটিলতায় ঝুলছে দিয়াবাড়ি-কাউন্দিয়া ব্রিজ! কবুতর, হাঁস-মুরগি পারাপারেও দিতে হয় টোল

প্রকাশিত: আগস্ট ১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : কাউন্দিয়া ইউনিয়ন রাজধানীর উপকণ্ঠ সাভার উপজেলার অন্তর্গত হলেও এর সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ ঢাকার মিরপুরে। পুলিশি ঝামেলা এবং জমি রেজিস্ট্রি করা ছাড়া অন্যকোনো প্রয়োজনে তাদের সাভারে না গেলেও হয়। ঢাকা-১৪ (মিরপুর-দারুস সালাম) আসনের সংসদ সদস্য এই এলাকার দায়িত্বে। কাউন্দিয়ার এমন অনেক বাসিন্দা আছেন জীবদ্দশায় কোনো দিনও তিনি সাভারে যাননি। তাদের সার্বিক যাতায়াত ও যোগাযোগ মিরপুরে। তবে রাজধানীর পাশের এই এলাকাটি সড়ক পথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হিসেবে পরিচিত। তুরাগ নদীর তীরে গড়ে ওঠা দুই লাখ মানুষের বসতি এই জনপদে সারা বছর যাতায়াত করতে হয় নৌকাযোগে। একটি ব্রিজের অভাবে দুই লাখ মানুষের জীবন জীবিকা ধুঁকছে। বারবার উদ্যোগ নেয়া হলেও আটকে আছে এর নির্মাণ প্রকল্প।
এদিকে কবুতর, হাঁস, মুরগি ও পশুপাখি পারাপারের জন্যও এই পথের দুই পারেই গুনতে হয় টাকা! এ নিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে ইজারাদারদের বাকবিতণ্ডার ঘটনা

নিত্যদিনের। জনপ্রতিনিধিদের কাছে অভিযোগ করেও মিলছে না প্রতিকার।
জানা গেছে, একাধিকবার সমীক্ষা করে দরপত্র আহ্বান করা হলেও রহস্যজনক কারণে ব্রিজটি হচ্ছে না। কাউন্দিয়া-দিয়াবাড়ি ব্রিজ নির্মাণের দাবিটি একাধিকবার জাতীয় সংসদেও উত্থাপিত হয়েছে। গুরুত্ব বিবেচনায় ২০১৭ সালে দিয়াবাড়ি-কাউন্দিয়া ব্রিজ নির্মাণের জন্য ১০০ কোটির টাকার প্রকল্প একনেকে পাস হয়। এলজিইআরডি এর নকশা প্রণয়ন করে। কিন্তু ঢাকা শহর রক্ষা বাঁধের উপর দিয়ে নির্মিত সড়ক চারলেনে উন্নীত করা হলে কোন স্থানে ব্রিজ নির্মাণকাজ হবে এ নিয়ে বিতর্ক বাঁধে। বেঁড়িবাধের আশপাশের জমি এক সময় পানি উন্নয়ন বোর্ডের থাকলেও পরে তা সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের মালিকানায় চলে যায়। আবার ব্রিজের প্রকল্পটি চলে যায় স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ে। ব্রিজ নির্মাণে পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রের প্রয়োজন হলেও চিঠি চালাচালিতে তা আটকে আছে।
এ প্রসঙ্গে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক বলেছেন, সরকারি কাজে প্রয়োজনে হলে তারা জমি দিয়ে থাকেন। দিয়াবাড়ি-কাউন্দিয়া ব্রিজ নির্মাণে জমি দরকার হলে তারা দিবেন।
ঢাকা-১৪ আসনে সম্প্রতি উপনির্বাচনে বিজয়ী সংসদ সদস্য আগা খান মিন্টু বলেছেন, ব্রিজটি নির্মাণ করা খুবই দরকার। মানুষের কষ্ট বেড়েই চলছে। একনেকে প্রকল্প পাস হওয়ার পরও অদৃশ্য কারণে নির্মাণকাজ শুরু হয়নি। রাস্তা বড় করা এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং সড়ক ও জনপথের ছাড়পত্র না হওয়ায় প্রকল্প আটকে আছে বলে তিনি শুনেছেন। মিন্টু বলেন, তিনি শপথ নেয়ার পরই করোনার কারণে কঠোর লকডাউন শুরু হয়েছে। ব্রিজটি নির্মাণের লক্ষ্যে তিনি চেষ্টা করবেন বলেও জানান।
তবে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী আবদুস সবুর বলেছেন, বিষয়টি তার জানা নেই। বিধি মতে কাগজ পেলে তিনি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিবেন বলে জানান।
এদিকে ব্রিজ না থাকায় মিরপুর থেকে কাউন্দিয়া যেতে লোকজনকে নৌকাযোগে পারাপার হতে প্রতিনিয়ত বিড়ম্বনা ও চাঁদাবাজির শিকার হতে হচ্ছে। তুরাগ নদী পাড়ি দিতে যেমন নৌকা ভাড়া গুনতে হয় তেমনিভাবে দিতে হয় কথিত টোল। জহির নামে এক ব্যক্তি যুগ যুগ ধরে কথিত ইজারার নামে শিশু বাচ্চা থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত সবার কাছ থেকে এই টাকা তুলছেন। হাঁস-মুরগি নিয়ে নদী পারাপার হতে হলেও এজন্য তাকে টাকা দিতে হয়। নদীতে চলা নৌকা থেকেও তিনি টাকা তোলেন। পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে তিন মাস পর পর তিনি ইজারা নবায়ন করেন বলেও দাবি করেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে হাজি জহির নামে পরিচিত এই ব্যক্তির সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডাব্লিউটিএ) থেকে ২০১৪-১৫ সালে তিনি এই ঘাট ইজারা নিয়েছেন। লোকজন পারাপারের জন্য দুই টাকা করে নির্ধারণ থাকলেও তারা তা দিতে চান না। এক টাকা করে দিতে চান। এ অবস্থায় জহির হাইকোর্টের রিট করলে এরপর থেকে তিনি ইজারাদার বহাল আছেন। প্রতি মাসে এজন্য তাকে হাইকোর্টে যেতে হয় এবং ইজারার রাজস্বের টাকা বিআইডাব্লিউটিএ অফিসে জমা দেন বলে জানান তিনি। সাত বছর ধরে টাকা তুলছেন দাবি করে জহির বলেন, কবুতরসহ পশুপাখি পারাপারের জন্যও তিনি টাকা নিতে পারবেন বলে ইজারার কাগজে উল্লেখ রয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়