মির্জা ফখরুল : করোনা নিয়ন্ত্রণে কারফিউ কোনো সমাধান নয়

আগের সংবাদ

করোনার দাপটে ডেঙ্গুর হানা : রাজধানীর হাসপাতালে দিন দিন বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা

পরের সংবাদ

মাহমুদউল্লাহর অবসর নিয়ে অস্পষ্টতা

প্রকাশিত: জুলাই ১৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুলাই ১৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : প্রায় ১৬ মাস পর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে টেস্ট ক্রিকেটে ফিরেছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। আর প্রত্যাবর্তন ম্যাচের প্রথম ইনিংসে অপরাজিত ১৫০ রান করেছেন তিনি। তবে দুর্দান্ত এই প্রত্যাবর্তনের পরেই মাহমুদউল্লাহ জানিয়েছেন সাদা পোশাকে আর খেলবেন না। এরপর তার অবসর নেয়ার ইস্যুতে নানা গুঞ্জন চলছে। কারণ তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) কাউকে টেস্ট ছেড়ে দেয়ার বিষয়টি জানাননি। শুধু সতীর্থদের নিজের অবস্থান জানিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ। তাই গত পরশু জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট জয়ের পর তাকে ঘিরে আনন্দ উৎসব চলে। হারারেতে ম্যাচসেরার পুরস্কার নিতে এসেও মাহমুদউল্লাহ অবসর নিয়ে কিছু বলেননি। বরং হারারে টেস্টে নিজের ও দলের পারফরমেন্স নিয়েই কথা বলেছেন তিনি। ফলে তার অবসর নিয়ে অস্পটতা রয়েই গেছে। বিসিবি সভাপতি বলেছেন, জিম্বাবুয়ে আসার আগে মাহমুদউল্লাহ লিখিতভাবে জানিয়েছেন, তিনি বাংলাদেশের হয়ে তিন সংস্করণের ক্রিকেটেই খেলতে চান। কাজেই তার টেস্ট না খেলার সিদ্ধান্ত অগ্রহণযোগ্য।
অনেকে বলেছেন লিখিত দিয়েছেন বলেই মাহমুদউল্লাহ সে সিদ্ধান্ত বদলাতে পারবেন না, তা কিন্তু নয়- ব্যাপারটা তার একান্ত নিজস্ব। কারো কারো প্রশ্ন একজন সিনিয়র ক্রিকেটার হয়ে, একজন অধিনায়ক হয়েও খেলার মধ্যে তিনি ড্রেসিংরুমে অবসরের বোমা ফাটাতে পারেন না। হোক আবেগের বশবর্তী হয়ে কিংবা অন্যকোনো কারণে। তাকে আরেকটু ভেবে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত ছিল।
পরশু ম্যাচসেরার পুরস্কার নেয়ার পর মাহমুদউল্লাহকে জড়িয়ে ধরেন সাকিব আল হাসান। এমনকি পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেসব ছবি দিয়ে মাহমুদউল্লাহর প্রতি নিজেদের ভালোবাসা প্রকাশ করেছেন তারা। সতীর্থদের বিভিন্ন পোস্টে ভালোবাসায় সিক্ত হন মাহমুদউল্লাহ।
টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুল হক শিরোপা হাতে মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে ফেসবুকে ছবি পোস্ট দিয়ে ক্যাপশনে লিখেছেন, রিয়াদ ভাই এটা অনেক বড় সম্মানের। আপনার অবদান ও ভালোবাসার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
ওয়ানডে দলপতি তামিম ইকবাল নিজের ফেসবুক পেজে লিখেছেন, লাল বলের ক্রিকেটে আপনার সেবার জন্য ধন্যবাদ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ভাই। সীমিত পরিসরের ক্রিকেটে দারুণ কিছু সময় কাটানোর অপেক্ষায় আছি।
মাহমুদউল্লাহকে জড়িয়ে ধরে একটি ছবি পোস্ট করে মুশফিকুর রহিম লিখেছেন, আপনার ৫০তম টেস্টে ম্যাচে ম্যান অব দ্য পুরস্কার এবং ম্যাচ উইনিং পারফরমেন্সের জন্য অভিনন্দন। দারুণ জয় পেয়েছি।
নিজের অভিষেক টেস্টের কথা মনে করিয়ে রুবেল হোসেন লিখেছেন, রিয়াদ ভাই সব সময় আমার কাছে বড় অনুপ্রেরণা। আমরা একসঙ্গে টেস্ট অভিষেক করেছিলাম। ভবিষ্যতে আর একসঙ্গে সাদা জার্সিতে খেলা হবে না ভেবে খারাপ লাগছে। তবে আশা করছি, ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে আরো দীর্ঘ সময় পাব ইনশাআল্লাহ।
হারারে টেস্টে সেঞ্চুরি করা নাজমুল হোসেন শান্ত লিখেছেন, আমি যে কোনো দলে খেলি না কেন, তার মতো একজন রতœকে ড্রেসিংরুমে পেয়েছি। আপনার থেকে অনুপ্রেরণার পাশাপাশি অনেক কিছু শিখেছি। টেস্ট ক্রিকেটে দেশকে যে সেবা দিয়েছেন সেজন্য ধন্যবাদ। সৃষ্টিকর্তা আপনার মঙ্গল করুক।
অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজ লিখেছেন, ঈশ্বরীয় পুণ্যের অধিকারী এক দুর্দান্ত খেলোয়াড় আপনি! বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে, আপনি টেস্ট ক্রিকেট ছাড়ছেন। খেলোয়াড়, ভক্তরা আপনাকে এ ফরম্যাটের ক্রিকেটে মিস করবে। আমি আপনার থেকে অনেক কিছু শিখেছি। আরো শিখতে মুখিয়ে আছি। আপনি যে নতুন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করছেন তা উপভোগ করুন।
লিটন দাস লিখেছেন, ‘একটি টেস্ট ম্যাচ জেতা সব সময়ই গর্বের। রিয়াদ ভাইয়ের সঙ্গে খেলতে পারা আমার জন্য দারুণ ব্যাপার। সাদা জার্সিতে আপনাকে আমরা অবশ্যই মিস করব।
পেসার আবু জায়েদ রাহী মাহমুদউল্লাহকে নিয়ে আবেগঘন পোস্ট দিয়েছেন, ‘একজন ভালো নেতা এবং একজন দারুণ ক্রিকেটার। আপনি সব সময় আমার পক্ষে ছিলেন এবং আমাকে আরো ভালো ক্রিকেটার হতে সাহায্য করেছেন। বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেটে আপনার অবদান সব সময় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। আমরা আপনাকে সাদা জার্সিতে মিস করব।
এদিকে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ এখন পর্যন্ত টেস্ট খেলেছেন ৫০টি। ৯৪টি ইনিংসে ব্যাট করে রান করেছেন দুই হাজার ৯১৪। সেঞ্চুরি করেছেন পাঁচটি। হাফসেঞ্চুরি ১৬টি। তার ব্যাটিং গড় হলো ৩৩.১১। ১৫০ রান এক ইনিংসে তার সর্বোচ্চ। টেস্টে তিনি ৪৩টি উইকেট শিকার করেছেন। মাহমুদউল্লাহ ওয়ানডে খেলেছেন ১৯৭টি। ব্যাট করার সুযোগ পেয়েছেন ১৭১টি ম্যাচে। ওয়ানডেতে তিনি এখন পর্যন্ত চার হাজার ৪১০ রান করেছেন। একদিনের ক্রিকেটে তার সেঞ্চুরি তিনটি, আর হাফসেঞ্চুরি ২৫টি। ব্যাটিং গড় ৩৫.০। ওয়ানডেতে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ ১২৮ রান করেছেন। ওয়ানডেতে তিনি উইকেট শিকার করেছেন ৭৬টি।
অন্যদিকে টি-টোয়েন্টিতে মাহমুদউল্লাহ ম্যাচ খেলেছেন ৮৯টি। ব্যাট করার সুযোগ পেয়েছেন ৮১টি ম্যাচে। ক্রিকেটে সংক্ষিপ্ত সংস্করণে ২৩.৯ গড়ে রান করেছেন এক হাজার ৫০৬। টি-টোয়েন্টিতে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ ৬৪ রান করেছেন তিনি। হাফসেঞ্চুরি করেছেন চারটি। কোনো সেঞ্চুরি নেই। চার-ছক্কার এই খেলায় তিনি উইকেট নিয়েছেন ৩১টি।
মাহমুদউল্লাহ সাদা পোশাকে বাংলাদেশের হয়ে ৫০ ম্যাচ খেলেই ১২ বছরের টেস্ট ক্যারিয়ারের ইতি টানার ইঙ্গিত দিয়েছেন ৩৫ বছর বয়সি এই ক্রিকেটার।
২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে কিংসটাউন অভিষেকেই প্রথম ইনিংসে ৩ উইকেট নিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ। দ্বিতীয় ইনিংসে তুলে নেন ৫ উইকেট। ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট, প্রথম ৫ উইকেটের ম্যাচে বাংলাদেশও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে টেস্টে হারায় প্রথমবারের মতো। বোলিং পারফরমেন্স দিয়ে অভিষেক টেস্টে তাক লাগিয়ে দিলেও মাহমুদউল্লাহর ব্যাটিং সামর্থ্যটা বেশিদিন চাপা থাকেনি। অথচ ক্যারিয়ারের শুরুর পাঁচ টেস্টে মাহমুদউল্লাহ ব্যাটিং করেছেন আট নম্বরে। লোয়ার অর্ডারে তার ব্যাটিং দেখেই ২০১০ সালের দিকে ভারতীয় কিংবদন্তি সুনীল গাভাস্কার মাহমুদউল্লাহকে সেই সময়ের সেরা আট নম্বর ব্যাটসম্যান বলেছিলেন। কারণও আছে। আটে নেমে ভারতের বিপক্ষে ২০১০ সালের ঢাকা টেস্টে ৯৬ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন তিনি। পরের টেস্টেই তিনি পেয়ে যান ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি। সেটাও সেই আটে নেমে ২০১০ সালের নিউজিল্যান্ড সফরে হ্যামিল্টনের কঠিন কন্ডিশনে। ১৯০ বল খেলে ১১৫ রান করেছিলেন।
২০১৮ সালে ঢাকা টেস্টের প্রথম ইনিংসে বেশ অস্বস্তিতে পড়েছিল। বিপদের সময় সাকিব আল হাসানকে নিয়ে মাহমুদউল্লাহ গড়েন ১১১ রানের জুটি। পরে লিটন দাসকে নিয়ে আরো ৯২ রান যোগ করেন। ১৩৬ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস আসে মাহমুদউল্লাহ। তার ব্যাটে ভর করে প্রথম ইনিংসে ৫০৮ রান তোলে বাংলাদেশ। ইনিংস ও ১৮৪ রানে সে ম্যাচ জিতে বাংলাদেশ।
মাহমুদউল্লাহ তার টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরটি করেছিলেন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হ্যামিল্টনে। নয় বছর পর সে মাঠেই মাহমুদউল্লাহ খেলেন তার ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংসগুলোর একটি। বাংলাদেশ আগে ব্যাট করে ২৩৪ রানে অলআউট হয়। নিউজিল্যান্ড প্রথম ইনিংসে ৬ উইকেটে ৭১৫ রান করে ইনিংস ঘোষণা করে। মাথায় ৪৮১ রানের বিশাল বোঝা নিয়ে বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে। বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে খেলতে নেমে ১২৬ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। এরপর সৌম্য সরকার ও মাহমুদউল্লাহ মিলে গড়েন ২৩৫ রানের বিরাট জুটি। সৌম্য ১৪৯ রানে আউট হলেও মাহমুদউল্লাহ লড়ে গেছেন শেষ পর্যন্ত। ছোট ছোট জুটি গড়ে বাংলাদেশকে ইনিংস হার এড়ানোর খুব কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি।
শেষ পর্যন্ত ৪২৯ রানে থামে বাংলাদেশের ইনিংস, মাহমুদউল্লাহ খেলেছেন ২২৯ বলে ১৪৬ রানের দুর্দান্ত ইনিংস। বাংলাদেশ ইনিংস ও ৫২ রানে হারলেও ব্যক্তিগত অর্জনের দিক থেকে মাহমুদউল্লাহর সেঞ্চুরি ছিল মনে রাখার মতো।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়