ভূমিহীনদের ঘর পুনর্নির্মাণের দাবি বিএনপির

আগের সংবাদ

ঈদ ঘিরে লকডাউন শিথিল : ১৫ থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত ৮ দিন সারাদেশে বিধিনিষেধ শিথিল, আজ প্রজ্ঞাপন

পরের সংবাদ

মহামিলনের এক উৎসব রথ দ্বিতীয়া

প্রকাশিত: জুলাই ১২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুলাই ১১, ২০২১ , ৯:৫৮ অপরাহ্ণ

আষাঢ় মাসের এই শুক্লা দ্বিতীয়া তিথিতে ভক্তবৃন্দের আরাধনায় সাড়া দিয়ে দেবলোক থেকে ভগবান শ্রী জগন্নাথ দেব অগ্রজ বলরাম ও বোন সুভদ্রা দেবীকে নিয়ে রথে আরোহণের মাধ্যমে ভক্তদের কাছে ফিরে আসেন। আর এই পুণ্য তিথিতে ভক্তরা ভক্তিপূর্ণ চিত্তে এই রথের দড়িতে টান দিয়ে রথকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে গিয়ে ভগবানের কৃপা লাভ করেন। শাস্ত্রে আছে, ‘রথস্থ বামনং দৃষ্টা পুর্নজন্ম ন বিদ্যতে’। অর্থাৎ রথের মধ্যে খর্বাকৃতি বামন জগন্নাথকে দর্শন করলে তার পুনর্জন্ম হয় না। তাই রথের দড়ি ধরে রথ টানা মহাপুণ্য অর্জন হিসেবে আদিকাল থেকে স্বীকৃতি লাভ করেছে। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী এই আষাঢ় মাসের শুক্লা দ্বিতীয়া তিথিতে ভগবান জগন্নাথ দাদা বলরাম ও ভগ্নী সুভদ্রাকে নিয়ে রথে আরোহণ করে মূল মন্দির থেকে গুণ্ডিচা মন্দিরে যান অর্থাৎ যেটাকে মাসির বাড়ি হিসেবে কল্পনা করা হয় এবং সেখান থেকে ৭ দিন পর মূল মন্দিরে ফিরে আসেন। আর এতে যাওয়ার দিনকে বলে সোজা রথ এবং একই পথে নিজ মন্দিরে ফিরে আসাকে বলে উল্টো রথ। এই রথে জগন্নাথের যে বিগ্রহ আমরা দর্শন করি সেই জগন্নাথ শব্দের অর্থ হলো জগতের ঈশ্বর বা জগদ্বীশ্বর। শ্রীশ্রী জগন্নাথ দেব পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণেরই একটি বিশেষ রূপ। অর্থাৎ যিনিই গৌর, তিনিই কৃষ্ণ আবার তিনিই রথ দ্বিতীয়ায় ভগবান জগন্নাথ রূপে আবির্ভূত হয়েছেন। সত্ত্বা একই কিন্তু রূপটা ভিন্ন। আসলেই প্রকৃত সত্য এই যে, এই পুণ্য তিথিতে ভক্তরা রথে আরোহণকারী ভগবান শ্রী জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা দেবীর চরণ দর্শনের মাধ্যমে জাগতিক দুঃখ, দুর্দশা মুক্তি লাভের আশায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করেন। আর সেই অপেক্ষার পালা শেষ করে ভগবান স্বয়ং ভক্তের ভক্তির আকুলতায় সাড়া দিয়ে মূল মন্দির থেকে বের হয়ে ভক্তের সান্নিধ্যে চলে এসে মানুষরূপী সন্তানদের ওপর কৃপা বর্ষণ করেন। আর মানুষ এই কৃপা লাভ করে জাগতিক বিভিন্ন দুঃখ-দুর্দশা ভুলে গিয়ে প্রশান্তির ছোঁয়ায় মেতে ওঠেন। কথিত আছে, ভগবান জগন্নাথ তার ভক্ত রাজা ইন্দ্রদ্যুম্নের সম্মুখে আবির্ভূত হয়ে পুরীর সমুদ্রতটে ভেসে আসা একটি কাষ্ঠখণ্ড দিয়ে ভগবানের বিগ্রহ তৈরির আদেশ দেন। কিন্তু ভেসে আসা কাঠ এমনই শক্ত যে, মূর্তি তৈরি করা তো দূরের কথা, কেউ হাতুড়িই বসাতে পারল না কাঠে, উল্টো হাতুড়িই ভেঙে যায় যায় অবস্থা। এতে মহারাজ ইন্দ্রদ্যুম্ন মহাবিপদে পড়ে গেলেন। এখন কী করতে হবে তিনি ভেবেচিন্তে কোনো সিদ্ধান্তেই আসতে পারছেন না। ইন্দ্রদ্যুম্নের এই অসহায় অবস্থা দেখে ভগবান জগন্নাথ শিল্পী বিশ্বকর্মার রূপ ধরে দরিদ্র ব্রাহ্মণ সেজে তার সামনে এসে তিনিই ভগবান জগন্নাথ দেবের বিগ্রহ তৈরির ইচ্ছা পোষণ করেন। তবে তাতে একটি শর্ত থাকবে এই যে, তিন সপ্তাহ বা ২১ দিন পূর্বে কেউ তার কাষ্ঠমূর্তি নির্মাণ দেখতে পারবে না। অবশেষে এই শর্ত প্রতিপালনে রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন তাকে ভগবান জগন্নাথ দেবের মূর্তি তৈরিতে সম্মতি দেন। অবশেষে যথাসময়ে শিল্পী ঘরের দরজা বদ্ধ করে ভগবান জগন্নাথ দেবের বিগ্রহ তৈরির কাজ শুরু করলেন। কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে রাজা ও রানীসহ সবাই এ ব্যাপারে কৌতূহলী হয়ে ওঠেন। প্রতিদিন রাজা ও রানী মন সন্তুষ্টি লাভের আশায় বদ্ধ দরজার কাছে যেতেন এবং ভেতর থেকে বিগ্রহ তৈরির কাঠ খোদাইয়ের আওয়াজ শুনে আনন্দ পেতেন। এভাবে চলতে চলতে ৬-৭ দিন অতিক্রম হওয়ার পর একদিন রাজা ও রানী যখন বদ্ধ দরজার সামনে দাঁড়ানো অবস্থায় খোদাইয়ের আওয়াজ শুনতে পেলেন না তখন অত্যুৎসাহী রানী মনের কৌতূহলকে নিবৃত্ত করতে না পেরে দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করে দেখেন বিগ্রহ তৈরি অসম্পূর্ণ এবং ঘরের মধ্যে কাঠশিল্পী অন্তর্ধান। এতে বিগ্রহের হস্ত, পদ, কান ইত্যাদি তৈরি না হওয়ায় রাজা বিমর্ষিত হয়ে পড়লেন। এমন সময় নারদ মুনি এসে বললেন, যেহেতু বিগ্রহ তৈরি শুরুর দিন থেকে ২১ দিন অতিবাহিত হওয়ার আগেই রানী দরজা খুলে ভেতরে ঢুকেছে তাই শর্ত ভঙ্গ হওয়ার কারণে বিগ্রহ তৈরির এই অবস্থা। তিনি সান্ত¡না দিয়ে রাজাকে বললেন, এখন আর করার কিছুই নেই। এই অর্ধ সমাপ্ত মূর্তিই পরমেশ্বরের একটি স্বীকৃতি লাভ করবে এবং এই রূপে পূজা করলে ভগবান জগন্নাথ দেব সন্তুষ্ট হবেন। নারদ মুনি থেকে ভগবান জগন্নাথের এই আদেশ প্রাপ্তির পর রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন সেই অর্ধ সমাপ্ত বিগ্রহকে পুরীর মন্দিরে নিয়ে স্থাপন করে পূজা-অর্চনা শুরু করেন। আর এই কারণে রথ দ্বিতীয়ায় হাত, পা, কান ইত্যাদি ইন্দ্রিয়বিহীন বলরাম, সুভদ্রা দেবী ও সবশেষে ভগবান জগন্নাথ দেবের বিগ্রহ নিয়ে রথযাত্রা শুরু হয়। আবার অন্যদিকে অনেকের ধারণা, বহুদিন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বিরহে কাটানোর পর বৃন্দাবন আসাকে স্মরণ করেই রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। আজকের রথ দ্বিতীয়া তিথিতে অনুষ্ঠিত এই রথযাত্রা একদিকে যেমন ধর্মীয় তাৎপর্য বহন করে, ঠিক অন্যদিকে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে এক মহামিলনের ক্ষেত্র সৃষ্টি করে। আর জাতি এই মহামিলনের মাধ্যমে ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার মধ্য দিয়ে সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশে একটি সুন্দর ও অসাম্প্রদায়িক দেশ গঠনে এগিয়ে আসবে আমি এই প্রত্যাশাটুকু রাখছি।
সঞ্জয় চৌধুরী
শিক্ষক ও লেখক, চট্টগ্রাম থেকে।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়