ভূমিহীনদের ঘর পুনর্নির্মাণের দাবি বিএনপির

আগের সংবাদ

ঈদ ঘিরে লকডাউন শিথিল : ১৫ থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত ৮ দিন সারাদেশে বিধিনিষেধ শিথিল, আজ প্রজ্ঞাপন

পরের সংবাদ

জনগণ দাঁড়াবে কোথায়

প্রকাশিত: জুলাই ১২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুলাই ১২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশ নিকট প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের থেকে নিম্নাঞ্চলে অবস্থিত। স্বভাবতই উঁচুতে থাকার সুযোগ-সুবিধায় ভারত আমাদের নদী অববাহিকায় ওপর থেকে পানি আটকে দিয়ে আমাদের খরার মুখে ফেলে। আবার অতিবৃষ্টি ও পানির প্লাবন বৃদ্ধি পেলে নিজেদের সুরক্ষার অতিপ্রায়ে সøুইস গেট খুলে দিয়ে আমাদের প্লাবিত করে। বন্যায় আমাদের মরণ দশা ঘটে। নদী তীরবর্তী অঞ্চলগুলোর মানুষের চরম দুর্দশায় পতিত হতে হয়। ঘটে প্রাণহানি, ফসলহানি হতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি। উঁচুতে থাকা প্রতিবেশী দেশ ভারতের এমন আচরণ আমরা গত অর্ধশতক ধরে দেখে আসছি। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বহু দেন-দরবারের পরও ভারত-রাষ্ট্র তাদের অবস্থানের সামান্য পরিবর্তন করেনি।
সাম্প্রতিক করোনাকালে ভারতের পাঁচটি রাজ্যের বিধানসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষায় হয়েছে কুম্ভমেলাও। স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করে নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে কেন্দ্রের শাসক দল করোনা মহামারিকে বিন্দুমাত্র তোয়াক্কা না করে দেশবাসীকে ঠেলে দিয়েছিল মৃত্যুঝুঁকির মুখে। ভারতের নির্বাচন কমিশন করোনাকালে নির্বাচন অনুষ্ঠান আয়োজনে চরম দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে, সেজন্য নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে মানুষ হত্যার মামলা করা যায় বলে রায় দিয়েছেন চেন্নাইর হাইকোর্ট। আপাতদৃষ্টিতে ভারতের নির্বাচন কমিশন স্বাধীন বলা হয়, মনে করাও হয়। কিন্তু সামগ্রিক বিবেচনায় অনায়াসে বলা যায় ভারতের সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি যেমন বাবরি মসজিদ মামলার রায় প্রদানের পর অবসর গ্রহণের পর বিজেপির রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে প্রমাণ করেছেন তিনি নিরপেক্ষ ছিলেন না। ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অনুগত এবং মোদির ইচ্ছাপূরণে বাবরি মসজিদের একপেশে রায় দিয়ে কলঙ্কিত করেছেন নিজেকে এবং দেশটির সর্বোচ্চ আদালতের পদটিকে। অনুরূপ ভারতীয় নির্বাচন কমিশন নিয়ে একই অভিযোগ উঠেছে। রাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গ ইতোমধ্যে শাসক দলের অনুগত হয়ে পড়েছে। গণতন্ত্রের ছাল-বাকলে বাস্তবে ভারতীয় গণতন্ত্র ফ্যাসিবাদ অভিমুখে।
গুম, খুন, আটক হতে ভিন্নমতের ওপর খড়গ অব্যাহত গতিতে চলছে। একক সংখ্যাগরিষ্ঠ পাওয়া বর্তমান শাসক দল নির্বাচিত নিশ্চয়, জনগণের ভোটেই তারা একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করেছে এতে সন্দেহ নেই। ইতিহাসের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাব বিশ্বের সেরা দুই ফ্যাসিবাদী শাসক হিটলার এবং মুসোলিনও জনগণ দ্বারা নির্বাচিত হয়েই ক্ষমতায় বসেছিলেন। তথাকথিত বুর্জোয়া গণতন্ত্রের মাহাত্ম্য এসব ঘটনাই প্রমাণ করে ওই ব্যবস্থা কতটা ভঙ্গুর, অগণতান্ত্রিক এবং জনআকাক্সক্ষাবিরোধী।
উঁচু-নিচুর কথা বলেছি, ওপর থেকে সব কিছু অনায়াসে যেমন নিচ অভিমুখে নেমে আসে। বিধানসভা নির্বাচন, কুম্ভমেলা পরবর্তী ভারতের করোনা পরিস্থিতি চরম পর্যায়ে পৌঁছে। পথে-প্রান্তরে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু, অক্সিজেনের অভাবে হাসপাতালগুলোতে অগণিত মানুষের প্রাণহানি ঘটে। মৃতদেহ দাহ বা কবর দেয়ার জায়গার সংকুলন না হওয়ায় মৃতদেহ নদীতে ভাসিয়ে দেয়ার ঘটনাও নিশ্চয় আমাদের স্মরণে আছে। লাশ পোড়ানোর স্থান ও কাঠের অভাবে শ্মশানে সারি সারি মৃতদেহ পড়ে থাকার দৃশ্য। আত্মীয়রা নিরুপায়ে মৃতদেহ নদীতে ভাসিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছিল। ওই রকম পরিস্থিতি যখন ভারতেজুড়ে বিরাজ করছিল, আমরা তখন ছিলাম অনেক নিরাপদে। কিন্তু ওই যে উঁচু-নিচুর বাস্তবতায় দুই রাষ্ট্রের ভৌগোলিক অবস্থান। তাই উঁচু থেকে নিচে খোলা দরজা পেয়ে কোনো বাধার সম্মুখীন না হয়ে ভারতীয় ভাইরাস সীমান্ত পেরিয়ে ঢুকে পড়েছে বাংলাদেশে। বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থানে তিন দিকে ভারতের পশ্চিম বাংলা, ত্রিপুরা, মিজোরাম, আসাম, মেঘালয়। পাঁচ রাজ্য আর দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর ও মিয়ানমার। ওই পাঁচ রাজ্যের সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে ভারতীয় ভাইরাস শুরুতে সীমান্তবর্তী জেলা ও অঞ্চলগুলোতে আগ্রাসী তৎপরতা শুরু করলেও অচিরেই ওই ভাইরাসে সারাদেশ এখন চরমভাবে আক্রান্ত। মানুষের বহনযোগ্য ওই ভাইরাস সীমান্ত খোলা থাকার কারণে অনায়াসে ঢুকে আমাদের মৃত্যুমুখী করেছে। প্রতিদিন গড়ে ২ শতাধিক মৃত্যু এবং প্রায় ১২ হাজার মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। দেশ যেন ক্রমেই মৃত্যুপুরীতে পরিণত হতে চলেছে।
প্রশ্ন উঠতেই পারে ভারতের করোনা সংক্রমণের অতিমারি থেকে নিজ দেশ ও জনগণের সুরক্ষায় রাষ্ট্র ও সরকারের ভূমিকা নিয়ে। রাষ্ট্র ও সরকারের নির্লিপ্ত-নির্বিকার থাকার সুযোগে ভারতীয় ভাইরাস বাংলাদেশকে সহজে আক্রান্ত করতে পেরেছে। এই অভিযোগ করা নিশ্চয় অমূলক বলা যাবে না। দেশে প্রতিদিন ২ শতাধিক মানুষের মৃত্যু এবং ১২ হাজারের অধিক আক্রান্তের জন্য কি কেবল করোনাই দায়ী? রাষ্ট্র ও সরকারের ব্যর্থতাকে দায়ী করা অযৌক্তিক-অন্যায় হবে? ভারত দুর্যোগ থেকে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। গণহারে টিকা প্রদানে এবং কঠোর লকডাউন দিয়ে। বাংলাদেশ তো মোট জনসমষ্টির ৩ শতাংশ মানুষকেও টিকার আওতায় আনতে পারেনি। ব্যক্তিগতভাবে প্রথম টিকা পেলেও দ্বিতীয় টিকা পাইনি, টিকার অভাবে টিকা কার্যক্রম হওয়ার কারণে। দেশের প্রতিটি মানুষ এখন মৃত্যুঝুঁকির কবলে। কেবল বাস্তবতাবর্জিত নির্দেশনা দিয়ে সরকার তার দায়িত্ব শেষ করেছে। দৃশ্যত আমরা দুই আমলাতন্ত্র এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা, অপতৎপরতাই দেখে আসছি। এমনকি সাংসদদের নিজ নিজ সংসদীয় এলাকায় উপস্থিত থেকে জনগণকে সচেতন ও তাদের দুর্দশা মোচনে কোনো ভূমিকা রাখতেও দেখা যায়নি। মনে হয় করোনা আতঙ্কে তারা কোনো গুহায় আত্মগোপন করে আছে। তাই ক্ষমতায় সরকার থাকলেও সরকারের কোনো দৃশ্যমান তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়নি। আমলাতন্ত্রের হাতে দেশ সঁপে দিয়েছে, নাকি বাধ্য হয়েছে? এই প্রশ্নও জনগণের মধ্যে বিরাজ করছে।
একটি জনসম্পৃক্ত রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় অথচ করোনাকালীন সময়ে জনস্বার্থে সরকারের ন্যূনতম ভূমিকার বিপরীতে গণবিরোধী আমলাতান্ত্রিকতা প্রত্যক্ষ করে আসছি। তাই প্রশ্ন জাগে সরকার আছে? না নামে আছে, কাজে নেই? লকডাউন দিয়ে করোনা নিয়ন্ত্রণ করে মানুষকে করোনার হাত থেকে বাঁচাবে এটা যেমন সত্যি পাশাপাশি মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা দিয়ে বাঁচানোর দায়িত্ব রাষ্ট্র ও সরকারের অবধারিত কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। দেশের চিকিৎসাব্যবস্থা করোনার শুরুতেই কী পরিমাণে ভঙ্গুর সেটা প্রমাণিত হওয়ার পরও স্বাস্থ্য খাতে কোনো উন্নতি ঘটাতে ব্যর্থ হয়েছে, বিপরীতে স্বাস্থ্য খাতে চলছে বেসুমার দুর্নীতি-অনিয়ম। একটি জনসম্পৃক্ত সরকার নিশ্চয় এমন অমানবিক, জনস্বার্থ পরিপন্থি সিদ্ধান্ত নিতে পারত না। আমলাতন্ত্রের দৌরাত্ম্যপনায় মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। দেয়ালে পিঠ ঠেকেছে। তবে শেষ পরিণতি কী হয় বুঝা যাবে তখনই, যখন আর তা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। বেপরোয়া লুণ্ঠন, দুর্নীতিতে করোনাকালে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে। পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হয়ে উঠবে যদি সরকার জনগণকে করোনা মহামারি ও অনাহার থেকে বাঁচাতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে ধারাবাহিক ব্যর্থতার নির্লিপ্ততা অক্ষুণ্ন রাখে।
মযহারুল ইসলাম বাবলা : নির্বাহী সম্পাদক, নতুন দিগন্ত।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়