মাইনুল হোসেন খান নিখিল : রেশনিং সিস্টেমে বিনামূল্যে খাবার দেবে যুবলীগ

আগের সংবাদ

বিশ্ব মিডিয়ার চোখে ‘রেহানা মরিয়ম নূর’

পরের সংবাদ

চা শ্রমিকদের অবহেলিত জীবন

প্রকাশিত: জুলাই ১১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুলাই ১১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

দেড়শ বছরের অধিক সময়ে অনেক কিছু পরিবর্তন হয়েছে। তবে চা শ্রমিকদের ভাগ্য পরিবর্তনে ছোঁয়া লাগেনি। কষ্টে ভরপুর জীবনে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ধরে কাজ করে গেলেও অনেক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। টিলায় টিলায় পাতা তুলেই পার করে দেয় বছরের পর বছর। তবুও তারা কাক্সিক্ষত সুবিধা ভোগ করতে পারে না। মাটির তৈরি ছোট ঘরে গাদাগাদি করে জীবন অতিবাহিত করে। যার দুঃখ-দুর্দশার করুণ চিত্র ‘টু লিভস এন্ড এ বাড’ উপন্যাসে আমরা দেখতে পাই। উপন্যাসে লেখক মুলক রাজ আনন্দ ইংরেজ সাহেব কর্তৃক নির্যাতিত এবং নিষ্পেষিত সমাজের বাস্তব চিত্র আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন। যদিও উপন্যাসে চা-কে অলঙ্কৃত করে বলা হয়েছে ‘দুটি পাতা একটি কুঁড়ি’!
প্রতিবাদ করলেও তাদের দিন বদলের হাওয়া লাগেনি। আজ থেকে শতবর্ষ আগে শোষণের প্রতিবাদে জেগে উঠেছিল। ১৯২১ সালের ২০ মে শোষিত শ্রমিকরা ‘মুল্লুকে চল’ ডাক দিয়ে চা বাগান ছেড়ে চাঁদপুরের মেঘনা ঘাটে জড়ো হয়েছিল। তাদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালায় ব্রিটিশ সেনারা। মেঘনার জলে ভাসতে থাকে নিরপরাধ চা শ্রমিকের শত শত লাশ। যারা পালিয়ে বেঁচে যায় তাদের ওপর নেমে আসে চরম নির্যাতন। তারপর প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করে তাদের আরো কোণঠাসা করে রাখা হয়। গড়ে ওঠে মলিনতায় ভরপুর এক শোষিত সমাজ। যেন দুঃখ তাদের জিয়নকাঠি।
১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে চা বাগানগুলো বিধ্বস্ত হয়ে যায়। স্বাধীনতার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পরিত্যক্ত চা বাগানগুলো পুনর্গঠনের চেষ্টা করেন। তাই ‘বাংলাদেশ টি ইন্ডাস্ট্রিজ ম্যানেজমেন্ট কমিটি (ইঞওগঈ)’ গঠন করে মালিকদের কাছে হস্তান্তরের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। এছাড়াও চা শ্রমিকদের বিনামূল্যে বাসস্থান, বেবি কেয়ার সেন্টার, রেশন প্রদান, প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণ, এমনকি সুপেয় পানির ব্যবস্থা নিশ্চিত করেন। অবহেলিত চা শ্রমিকদের ভোটাধিকার প্রয়োগের অধিকারও দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। কিছুকাল অতিবাহিত হওয়ার পর আবারো অবহেলিত গোষ্ঠীতে পরিণত হয়। সেখানে যেমন রয়েছে সুপেয় পানির অভাব, তেমনি স্যানিটেশনের দুরবস্থা, রয়েছে স্বাস্থ্যের ঝুঁকি। ২০১৮ সালে সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন এন্ড রিসার্চ বাংলাদেশ চা শ্রমিক নারীদের সমীক্ষায় প্রায় ১৫ শতাংশ নারী জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত। শিক্ষা নিয়ে ভাবার ফুরসত তাদের নেই। তাই পারিবারিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য শিশুরা স্কুলে যাওয়ার বদলে শিশুশ্রমে জড়িয়ে পড়ে।
বাংলাদেশ চা বোর্ডের তথ্যমতে, ২০১৯ খ্রিস্টাব্দে রেকর্ড পরিমাণ ৯৬.০৭ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদিত হয়। ২০০৯ সালে যেখানে চায়ের উৎপাদনে পরিমাণ ছিল ৫৯.৯৯ মিলিয়ন কেজি। দিন দিন চায়ের উৎপাদন বাড়লেও শ্রমিকদের মজুরি সে হারে বাড়েনি। অথচ তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমেই সমৃদ্ধ হতে থাকে আমাদের চা শিল্প। ১৯৮৯ সালে চা উৎপাদনে সারা বিশে ১২তম অবস্থানে ছিল। ২০১৯ সালে নবম স্থান অর্জন করে, যা আমাদের চা শিল্পে সোনালি অর্জন। সে অর্জনটুকু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র হাতে গড়া চা শ্রমিকদেরই অর্জন। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে সম্ভাবনাময় চা শিল্প দেশের জিডিপিতে অবদান রাখে।
চা শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণে চা বাগানের মালিকপক্ষের সংগঠন এবং চা শ্রমিক ইউনিয়নের মধ্যে চুক্তি সম্পাদিত হয় প্রতি দুই বছর পরপর। ২০২০ সালের ১৩ অক্টোবর একটি চুক্তি সম্পাদিত হয়। সে চুক্তি অনুযায়ী, ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে এ ক্লাস বাগানে দৈনিক ১২০ টাকা, বি ও সি ক্লাসে যথাক্রমে ১১৮ এবং ১১৭ টাকা নির্ধারিত হয়। চুক্তির মেয়াদ গত বছরের ৩১ ডিসেম্বরে শেষ হয়ে যায়। গত ১৪ জুন চা- শ্রমিকদের দৈনিক ন্যূনতম মজুরি ১১৭ টাকা নির্ধারণে সুপারিশ করে নিম্নতম মজুরি বোর্ডের ওয়েবসাইটে প্রজ্ঞাপনে প্রকাশ করা হয়। যা থেকে চা শ্রমিকদের মাঝে অসন্তুষ্টি দেখা দেয়। শ্রমিকরা দৈনিক মজুরি ৫০০ টাকা করার দাবি জানিয়েছে।কষ্টে যাদের জীবনধারা চালিত হয় স্বপ্ন তাদের বাঁচতে শেখায়। যারা স্বপ্নই বুনন করতে জানে না তারা ‘বেঁচে’ থাকার মাঝেই সার্থকতা খুঁজে নেয়। আর বেঁচে থাকার জন্য প্রতি মুহূর্তে জীবনযুদ্ধ চালিয়ে যেতে হয়। তাই জীবনযাপনের মান, মুদ্রাস্ফীতি, দ্রব্যমূল্যের কথা বিবেচনায় নিয়ে দৈনিক মজুরি প্রদান করলে তাদের সহায়ক হবে। না হয় নির্ধারিত মজুরির বিনিময়ে তাদের জীবনযাত্রার সঙ্গে খাপ খাওয়ানো কষ্টকর হবে।
ব্যাংক কর্মকর্তা ও লেখক।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়