অশ্লীল ভিডিও তুলে ব্ল্যাকমেইল : সবুজবাগে ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রীর আত্মহত্যা

আগের সংবাদ

কারিগরি কারণে পদ্মা সেতুর রেললাইন প্রকল্পে ধীরগতি

পরের সংবাদ

জেনারেল ইয়াহিয়া খানের ক্ষমতা দখল

প্রকাশিত: জুলাই ৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুলাই ৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

পরাধীন ব্রিটিশ-ভারত থেকে পাকিস্তানের কালো অধ্যায় পেরিয়ে জন্ম হয় বাংলাদেশ নামক স্বাধীন রাষ্ট্রের। এই মহান অর্জনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ইতিহাসের মোড় ঘোরানো নানা ঘটনা, যার কারিগর হিসেবে কেউ আখ্যায়িত হয়েছেন নায়কের অভিধায়; কেউবা আবির্ভূত হয়েছেন খলনায়কের চরিত্রে। ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে সেসব ঘটনা ও তার নায়ক-খলনায়কদের কার কি ভূমিকা, তাই নিয়েই অধ্যাপক আবু সাইয়িদের গ্রন্থ ‘যেভাবে স্বাধীনতা পেলাম’। সম্প্রতি ভোরের কাগজ প্রকাশন থেকে বের হয়েছে বইটি। এ বই থেকে ধারাবাহিকভাবে প্রতিদিন কিছু অংশ তুলে ধরা হচ্ছে ভোরের কাগজের পাঠকদের জন্য।
শেখ মুজিব গোলটেবিল বৈঠক পরিত্যাগ করলেন। বললেন, বাংলার মানুষের দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলন চলবে। পূর্ব পাকিস্তান গর্জে উঠল। স্বৈরাচারের পতন চাই। দুঃশাসন দূর হোক। জেনারেল আইয়ুব খান বিদায় নিতে বাধ্য হলেন। কেননা, তার পেছনে তখন সামরিক চক্র দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছিল।
সেনাবাহিনীর কাঠামোগত ঐক্য ও ক্ষমতার কর্তৃত্ব ধরে রাখার স্বার্থেই ১৯৬৯ সালের ২৫ মার্চ প্রধান সেনাপতি জেনারেল ইয়াহিয়া খানের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হয়। যদিও ক্ষমতা হস্তান্তরের শাসনতান্ত্রিক বিধান অনুসারে রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব কাঠামোয় আইয়ুব সৃষ্ট বেসামরিক শাসনতান্ত্রিক কর্তৃপক্ষের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করাই ছিল আইনানুগ। পরবর্তীকালে বাংলাদেশে অভ্যুদয়ের পর জেনারেল ইয়াহিয়ার ক্ষমতা দখলের এই অশাসনতান্ত্রিক প্রক্রিয়া শাসনতন্ত্রবহির্ভূত বলে পাকিস্তান লাহোর হাইকোর্টের এক রায়ে ঘোষিত হয়েছে। 
অসাংবিধানিক ও অগণতান্ত্রিক পথে ক্ষমতা দখলকারী সামরিক কর্তৃত্বের গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে শেখ মুজিব প্রথম থেকেই কড়া নজর রেখেছিলেন। জেনারেল ইয়াহিয়া খানের সামরিক শাসন জারির সমান্তরাল পদক্ষেপ হিসেবে শেখ মুজিব গণআন্দোলনের পথ পরিহার করেননি। তার নির্দেশে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ এক বিবৃতিতে পূর্ণ ব্যক্তিস্বাধীনতা, মৌলিক অধিকার, গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি ৬ দফা ও ১১ দফা দাবি ও এক ব্যক্তি এক ভোট নীতি, পার্লামেন্টারি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবি জোরালোভাবে উত্থাপন করে।
ইয়াহিয়ার চতুরতা : বঙ্গবন্ধুর কৌশল
জেনারেল ইয়াহিয়া খান ক্ষমতা দখল করার পরই ১৯৬৯ সালের ২৬ মার্চ এক বেতার ভাষণে শাসনতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার উপযোগী পরিবেশ ও জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা ঘোষণা করে বলেন, তার সরকারের ভূমিকা

হবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের। 
কিন্তু তিনি সর্বময় ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব তার হাতে রেখে দেন। এ লক্ষ্যে ১৯৭০ সালে ৩০ মার্চ ইয়াহিয়া খান আইনগত কাঠামো আদেশ জারি করেন। এই আদেশটি বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে পাকিস্তানের ২৩ বছর ধরে চলে আসা অগণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা বহাল করার গণতন্ত্রবিরোধী এবং মৌলনীতির পরিপন্থি আইনগত কাঠামো আদেশে প্রেসিডেন্টের হাতে যথেচ্ছা ক্ষমতা রক্ষিত হয়েছে। ফলে প্রস্তাবিত সংসদ এবং তার দ্বারা প্রণীত শাসনতন্ত্রও অর্থহীন হয়ে পড়বে। পশ্চিম পাকিস্তানের বৃহৎপুঁজি, সামরিক বেসামরিক আমলা চক্রের এবং জেনারেল ইয়াহিয়ার ব্যক্তি স্বার্থে আটঘাট বেঁধেই এলএফও জারি করা হয়। শেখ মুজিবসহ অন্যান্য দলের নেতারা এলএফওর বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা করেন। এর অগণতান্ত্রিক দিকগুলোও বাতিল করার দাবি উত্থাপন করেন। 
সামরিক চক্র কর্তৃক এলএফওকে ইস্যু করে আন্দোলনের পথে না গিয়ে শেখ মুজিব নির্বাচনে যাওয়ার কথা ঘোষণা করলেন। এই এলএফও দ্বারা শেখ মুজিবের হাতপা বেঁধে ফেলা হয়েছে। মূলত, এটি ছিল ছয় দফা কনসেপ্টের পরিপন্থি। শেখ মুজিবের এ ধরনের ঘোষণা সামরিক চক্রের পূর্ব পরিকল্পিত ব্লু-প্রিন্টকে অকেজো করে তোলে। 
পাকিস্তান গোয়েন্দা বাহিনীর রিপোর্ট ও শেখ মুজিবের চরিত্র বিশ্লেষণের সঙ্গে শেখ মুজিবের এই ঘোষণা শাসক চক্রকে হতবাক করে তোলে। শেখ মুজিবের কথা ছিল গণতান্ত্রিক পথে সামরিক চক্রের পরিকল্পিত চক্রান্তকে তিনি মোকাবিলা করবেন। কেননা, জনগণের ঐক্য ও শক্তি সম্পর্কে শেখ মুজিবের হিসাবে ছিল নির্ভুল। নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় বিজয়ী হতে পারলে জনগণের শক্তি নিয়ে এলএফওকে ছুঁড়ে ফেলতে শেখ মুজিব কোনো তোয়াক্কা করবেন না।

আগামীকাল প্রকাশিত হবে ‘ওদের হিসাব ভুল ছিল’ 
‘যেভাবে স্বাধীনতা পেলাম’- বইটি পাওয়া যাচ্ছে ভোরের কাগজ প্রকাশনে (ভোরের কাগজ কার্যালয়, ৭০ শহীদ সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা)। এছাড়া সংগ্রহ করা যাবে নযড়ৎবৎশধমড়লঢ়ৎড়শধংযধহ.পড়স থেকেও।
 
 

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়