অশ্লীল ভিডিও তুলে ব্ল্যাকমেইল : সবুজবাগে ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রীর আত্মহত্যা

আগের সংবাদ

কারিগরি কারণে পদ্মা সেতুর রেললাইন প্রকল্পে ধীরগতি

পরের সংবাদ

‘কঠোর’ বিধিনিষেধ অনেকটাই উধাও

প্রকাশিত: জুলাই ৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুলাই ৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : দিন যতই যাচ্ছে রাজধানীর সড়কে মানুষ এবং যানবাহনের চাপ ততই বাড়ছে। সড়কে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কঠোর বিধিনিষেধ মানাতে একদিকে যেমন তৎপরতা চালাচ্ছে, অন্যদিকে বিধিনিষেধ ভাঙতে দ্বিগুণ উৎসাহ নিয়েই মানুষ রাস্তায় বের হচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার ষষ্ঠ দিনে রাজধানীর অনেক সড়ক থেকে কঠোর বিধিনিষেধ উধাও হয়ে গেছে! সকালের দিকে কোথাও কোথাও যানজটও দেখা গেছে। মোবাইল কোর্টের তৎপরতাও ছিল নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে।
রাজধানীর আগারগাঁও, বছিলা, মোহাম্মদপুর, আসাদগেট, ফার্মগেট ও কারওয়ান বাজারের বাসস্ট্যান্ডেও মানুষের ভিড় দেখা গেছে। হাতিরঝিল, মগবাজারসহ আশেপাশের এলাকায় যানবাহনের চাপ গতকাল একটু বেশিই ছিল বলে জানিয়েছেন দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তা কাজী মিজানুর রহমান।
শাহবাগ এলাকায় র‌্যাবের মোবাইল কোর্টের জেরায় পড়ে জাকির নামের এক ব্যক্তিকে ১ হাজার টাকা জরিমানা গুনতে হয়েছে। জাকির বলেন, করোনায় ব্যাংক খোলায় তিনি ধানমন্ডির একটি ব্যাংকে টাকা তুলতে গিয়েছিলেন। ফেরার পথে র‌্যাবের মোবাইল কোর্ট তাকে ১ হাজার টাকা জরিমানা করেছে।
জাকিরের অভিযোগ প্রসঙ্গে র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু জানান, টাকা লেনদেনের জন্য তিনি অবশ্যই ব্যাংকে যেতে পারেন। তবে তিনি এক চেকের টাকা তুলতে সঙ্গে আরো তিনজনকে সঙ্গে নিয়েছিলেন। এ কারণেই তাকে জরিমানা করা হয়েছে।
রাজধানীর গাবতলীসহ আরো অনেক স্থানেও মোবাইল কোর্টের তৎপরতা ছিল। এসব মোবাইল কোর্টে রিকশার যাত্রী, মোটরসাইকেল ও ব্যক্তিগত গাড়ির লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়তে হয়েছে। শাহবাগ এলাকায় অন্যদিনের তুলনায় বেশি যানবাহন চলেছে। অধিকাংশ মানুষই বাইরে আসার জন্য বিভিন্ন কারণ দেখিয়েছেন।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় সেনাবাহিনীর চেকপোস্ট

বসানো হলেও মানুষের ভিড় এবং যানবাহনের কমতি ছিল না। এখানে সেনাসদস্যরা রিকশা, মোটরসাইকেল ও ব্যক্তিগত গাড়ি থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের সময় যানবাহনের দীর্ঘ লাইন পড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। বিধিনিষেধের মধ্যেই আবার রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি কাজও চলছে। ধানমন্ডি ২৭ নম্বর, আসাদগেট, শ্যামলীসহ এলাকার বিভিন্ন স্থানেও যানবাহনের দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের রায়েরবাগ এলাকার চিত্র প্রায় স্বাভাবিক সময়ের কাছাকাছি ছিল। রাস্তার চিত্র দেখে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে বলে মনেই হয়নি। এই এলাকায় কিছু কিছু মিনিবাস চলেছে। এ ছাড়া ব্যক্তিগত গাড়ি, মোটরসাইকেল, রিকশা এবং কিছু হিউম্যান হলার যাত্রী পরিবহন করেছে। হেঁটে কর্মস্থলে যাওয়া মানুষের ব্যাপক ভিড় ছিল রাস্তায়। অনেকে পায়ে হেঁটেই কর্মস্থলের দিকে রওনা হয়েছেন।
শনির আখড়া থেকে সায়দাবাদ পর্যন্ত এলাকাতেও একই অবস্থার সৃষ্টি হয়। কঠোর বিধিনিষেধের প্রতি কারো কোনো তোয়াক্কা নেই। যাত্রাবাড়ী মোড়ে মানুষের প্রচণ্ড ভিড়ের পাশাপাশি রাস্তায় রয়েছে রিকশার দাপট। হাজার হাজার রিকশার পাশাপাশি শত শত মোটরসাইকেল চলাচল করেছে। মতিঝিল এলাকাতেও যানবাহন চলাচল আরো বেড়েছে। ব্যক্তিগত গাড়ি এবং মোটরসাইকেলের চাপ এখানে বেশি ছিল।
এদিকে রাজধানীর গাবতলী এলাকায় যানবাহন ও মানুষের চাপ গতকালও ছিল। এই প্রবেশপথ দিয়ে প্রতি মিনিটে রাজধানীতে ৮ থেকে ১০টি করে মাইক্রোবাস ও প্রাইভেট কার, ৬টি থেকে ৭টি মোটরসাইকেল ছাড়াও পণ্যবাহী যানবাহন যথারীতি ঢাকায় ঢুকেছে। পুলিশের চেকপোস্ট থাকলেও যানবাহন ও মানুষের চলাচলে কোনো বাঁধা নেই। যারা যুক্তিসংগত কারণ দেখাতে পারছে তাদের যেতে দেয়া হচ্ছে। সকালে এখানে চেকপোস্টের পাশেই ২০ থেকে ২৫ জনের মতো পথচারীকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। তাদের পুলিশ আটক করেছে। মিরপুর জোনের ট্রাফিক বিভাগের এসি মিজানুর রহমান জানান, তারা যৌক্তিক কারণ ছাড়া বের হয়েছে। তাদের আইনানুগ ব্যবস্থার আওতায় আনা হবে। যানবাহন এবং মানুষের চলাচল গত কয়েক দিনের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। ব্যাংকসহ অনেক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম চালু হওয়ায় মানুষ রাস্তায় বের হয়ে আসছে। যানবাহনের চাপ বাড়ল পুলিশ সব যানবাহন থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।
কঠোর লকডাউনের মধ্যেও দোকান খোলা রাখতে চায় দোকান মালিকরা। গত সোমবার তারা গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত প্রেস বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েছে। এরপরই গতকাল সকাল থেকে নগরীর প্রায় সব এলাকাতেই অনেক দোকানপাট আংশিকভাবে খুলেছে। রাজধানীর পান্থপথের বেশ কয়েকটি ফার্নিচারের দোকান বিশেষ করে যেগুলো অলিগলির একটু ভেতরে অবস্থান, সেগুলোতে বেচাকেনাও হয়েছে। সব এলাকার অলি-গলির ভেতরের দোকানপাট পুরোপুরি খোলা রয়েছে। কাঁচাবাজারে প্রতিদিনের মতোই ভিড় লেগেই ছিল। কাউকে স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে কোনো ধরনের তোয়াক্কা করতে দেখা যায়নি।
এদিকে উপযুক্ত কারণ ছাড়া বাইরে বের হওয়ায় গতকাল ৪৬৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। আর ভ্রাম্যমাণ আদালতে ৩০৫ জনকে ২ লাখ ২৭ হাজার ৪৮০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া ১০৮৭টি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে ২৫ লাখ ২৯ হাজার ২৫ টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছে ট্রাফিক বিভাগ। গতকাল বিকালে গণমাধ্যমকে এসব তথ্য জানান ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) ইফতেখায়রুল ইসলাম।
অন্যদিকে বিনা প্রয়োজনে গাড়ি নিয়ে বের হওয়া, রাস্তায় অনর্থক ঘোরাফেরা করা, মাস্ক না পরা, মোটরসাইকেলে দুইজন আরোহণ করাসহ বিভিন্নভাবে বিধিনিষেধ অমান্য করার অভিযোগে সারাদেশে ৪১৫ জনকে ২ লাখ ৩৭ হাজার ২০০ টাকা জরিমানা করেছে র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। গতকাল সন্ধ্যায় র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়