অশ্লীল ভিডিও তুলে ব্ল্যাকমেইল : সবুজবাগে ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রীর আত্মহত্যা

আগের সংবাদ

কারিগরি কারণে পদ্মা সেতুর রেললাইন প্রকল্পে ধীরগতি

পরের সংবাদ

অনিয়মে প্রশ্নবিদ্ধ ‘আশ্রয়ণ’ > দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা : পাঁচ কর্মকর্তা ওএসডি, দুজনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত

প্রকাশিত: জুলাই ৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুলাই ৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

** জায়গা চিহ্নিতকরণ ও নির্মাণ ত্রæটিই দায়ী ** ৩৬ উপজেলার ৩৯ প্রকল্প নিয়ে অভিযোগ **
ঝর্ণা মনি : মুজিববর্ষে কেউ গৃহহীন থাকবে না- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন অঙ্গীকার বাস্তবায়নে চালু হয় ‘আশ্রয়ণ প্রকল্প’। এই প্রকল্পের আওতায় ইতোমধ্যেই ঘর পেয়েছেন ১ লাখ ২৩ হাজার ছিন্নমূল পরিবার। তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অনিয়ম ও দায়সারা কাজের মাশুল দিচ্ছেন আশ্রয়ণ প্রকল্পের সুবিধাভোগীরা। স্থান নির্বাচন এবং নির্মাণ ত্রæটির কারণে ২২ জেলার ৩৬ উপজেলার ৩৯টি প্রকল্পের অধিকাংশ ঘরই বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। যে কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অত্যন্ত প্রশংসনীয় উদ্যোগ প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে কোথাও কোথাও। অবশ্য প্রধানমন্ত্রীর ড্রিম প্রজেক্টে এমন অনিয়মের বিরুদ্ধে দ্রুত অ্যাকশনে নেমেছে সরকার। এজন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে ৫ জনকে ওএসডি করা হয়েছে আর দুজনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত ও মামলা করেছে দুদক। বাকিদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ইতোমধ্যে ওএসডি করা কর্মকর্তারা হলেন- চাঁপাইনবাবগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক লিয়াকত আলী শেখ, বরগুনার আমতলীর নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান, মুন্সীগঞ্জ সদরের নির্বাহী কর্মকর্তা হামিদুর রহমান, মুন্সীগঞ্জ সদরের এসিল্যান্ড মেজবাউল সাবেরিন এবং সিরাজগঞ্জের শফিকুল ইসলাম। এছাড়া বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার সাবেক ইউএনও মাহমুদা পারভীন ও সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার ইউএনও আল-মুক্তাদির হোসেনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এ ব্যাপারে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক অতিরিক্ত সচিব মো. মাহবুব হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, বিশ্বের প্রথম এই ইউনিক প্রজেক্টে স্বামী-স্ত্রীর নামে জমির দলিল করে ঘর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ প্রকল্পে কিছু কিছু অভিযোগ পাওয়া গেছে। সব অভিযোগই আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। অভিযোগ প্রমাণিত হলে অবশ্যই সরকারি চাকরির বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এছাড়া যেখানে অভিযোগ এসেছে সেখানেই নতুন করে ঘর তৈরির নির্দেশ দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের এই প্রকল্প যেন কোনোভাবেই প্রশ্নবিদ্ধ না হয় সেজন্য আমরা সতর্ক রয়েছি।
জায়গা চিহ্নিতকরণ ও নির্মাণ ত্রæটিই দায়ী : বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার মানিকদিপা পলিপাড়া এলাকায় প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরগুলো এখন পানিতে ডুবে আছে। নিচু জমিতে ঘরগুলো নির্মাণ করায় সামান্য বৃষ্টিতেই সেগুলো তলিয়ে যাচ্ছে। গজারিয়া বালুয়াকান্দি ইউনিয়নের বড় রায়পাড়া নদীর পাড়ে ঘর তৈরি করতে না করতেই ভেঙে পড়েছে। ভারি বর্ষণ ও নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় প্রতিটি ঘরই ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বগুড়ার শেরপুরে কায়রাখালী বাজারের কাছে খালের পাড়ে নির্মিত ঘরগুলো এখন ভাঙনের সম্মুখীন। অতিবৃষ্টির কারণে সাতটি ঘর ধসেও পড়েছে।
জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ চুকাইবারি রায়পুরা গ্রামে ঘর ভেঙে আহত হয়েছেন মমতাজ বেগম। গোপালগঞ্জে সদর উপজেলার মধুপুর গ্রামে দুটি ঘর ভেঙে পড়েছে। বরগুনার তালতলীতে নির্মাণের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ভেঙে পড়ে ঘর। লালমনিরহাটে ঝড়ে উড়ে যায় ঘরের চালা। প্রশাসনের

উদাসীনতায়ই এমন ঘটনা ঘটেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নকশা ও প্রাক্কলন অনুযায়ী ঘর নির্মাণ করা হয়নি। দায়সারা স্থান নির্ধারণ এবং নির্মাণ ত্রæটির জন্যই এ অবস্থা হয়েছে।
এ ব্যাপারে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের সহকারী প্রকৌশলী আবুল বাশার মোল্লা ভোরের কাগজকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর অভিনব আইডিয়া আশ্রয়ণ প্রকল্প। তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কারণে কোথাও কোথাও অনিয়ম হয়েছে। একেক জায়গায় একেক ধরনের সমস্যা চিহ্নিত করা গেছে। শেরপুরে জায়গা চিহ্নিত করা ঠিকমতো হয়নি। মুন্সীগঞ্জ সদরে নির্মাণ কাজের ত্রæটি ধরা পড়েছে। দায়ীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। জেলা প্রশাসককে আরো বেশি তদারকি করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এদিকে ঘর ভেঙে পড়ার কারণ জানেন না বগুড়ার শেরপুরের নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ময়নুল ইসলাম। জানতে চাইলে তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, ঘর ভেঙে পড়ার কারণ জানি না। তবে সঙ্গে সঙ্গেই পরিদর্শন করেছি। ব্যবস্থা নিয়েছি। দু’একদিনের মধ্যেই ভেঙে পড়া ঘরগুলো ঠিক হয়ে যাবে।
৩৬ উপজেলার ৩৯টি প্রকল্পে অভিযোগ : করোনাকালে ৪৯২টি উপজেলায় পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি করে আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সরকার। কমিটির সদস্যরা হলেন- নির্বাহী কর্মকর্তা, এসিল্যান্ড, উপজেলা প্রকৌশলী, উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান। এই পাঁচজনসহ স্থানীয় সংসদ সদস্য, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও গণ্যমান্য ব্যক্তি জায়গা নির্ধারণ করে থাকেন। আশ্রায়ণ-২ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক অতিরিক্ত সচিব মো. মাহবুব হোসেন জানিয়েছেন ইতোমধ্যে ২২ জেলার ৩৬ উপজেলার ৩৯টি প্রকল্পে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়গুলো তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এ নিয়ে তদন্ত কমিটি করেছেন সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকরা। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিদর্শন দলের সদস্যরাও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করছেন। তদন্তে অনিয়ম পাওয়া গেলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়