কঠোর লকডাউন : ঘর থেকে বের হলেই ‘কঠোর শাস্তি’

আগের সংবাদ

বদলে গেছে ঢাকার দৃশ্যপট

পরের সংবাদ

অকারণে বের হলেই জেল

প্রকাশিত: জুলাই ১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুলাই ১, ২০২১ , ১২:৫৯ পূর্বাহ্ণ

** কঠোর লকডাউন শুরু ** ২৬৯ ধারায় মামলা ** তাৎক্ষণিক বিচারে ১০৬ ম্যাজিস্ট্রেট **
কাগজ প্রতিবেদক : দেশে যেদিন করোনার শনাক্তের সংখ্যা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে সেদিনই সকালে সরকার ২১ দফা বিধিনিষেধ জারি করে বলেছে, দেশজুড়ে নাগরিকদের এসব বিধিবিধান মেনে আগামী সাতদিন ঘরবন্দি থাকতে হবে। কেউ বিধি নিষেধ উপেক্ষা করে অকারণ ঘর থেকে বের হলে তিনি জেল, জরিমানাসহ নানা শাস্তির মুখে পড়বেন। গতকাল বুধবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ দেশে জারিকৃত এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধ করতে আজ বৃহস্পতিবার থেকে সাতদিন মানুষের চলাচলে ‘বিধিনিষেধ’ আরোপ করে গতকাল ২১ দফা নির্দেশনা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে। বিধিনিষেধ আরো সপ্তাহখানেক বেড়ে ১৪ জুলাই পর্যন্ত যেতে পারে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে পরবর্তী সাত দিনের বিধিনিষেধ কার্যকর করতে পুলিশের পাশাপাশি মাঠে থাকবে সেনাবাহিনী। তবে অনেকেই বলেছেন, এই সাতদিনের মধ্যে আগামী চারদিন কড়াভাবে দেশজুড়ে লকডাউন পালিত হতে পারে। কারণ আজ থেকে রবিবার পর্যন্ত জরুরি পরিষেবা ছাড়া দেশের সব সরকারি-বেসরকারি অফিস, আদালত, ব্যাংক, বিমা, পুঁজিবাজার সব বন্ধ থাকবে। কাজেই কোনো ছুতো দেখিয়ে এই চারদিন মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারবে না। বাকি তিনদিনের মধ্যে প্রতিদিন ব্যাংক খোলা থাকবে তিন ঘণ্টা। এর ফলে ওই সময়টাতে কিছু মানুষ টাকা তোলার ছুতো দেখিয়ে ঘর থেকে বের হতে পারে। এছাড়া সকাল ৯টা থেকে ৫টা পর্যন্ত কাঁচাবাজার খোলা থাকায় বাজারের ‘অজুহাত’ দেখিয়ে মানুষ ঘরের বাইরে যেতে পারে। এছাড়া শিল্পকারখানা খোলা থাকায় সেখানকার কর্মজীবীরা ঘর থেকে বেরোবে। তবে তাদের সঙ্গে পরিচয়পত্র রাখার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, অপ্রয়োজনে বাইরে বের হলে ৬ মাসের জেল হতে পারে। যুক্তিসংগত কারণ ব্যতীত কেউ বের হলে তাকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে।
তিনি বলেন, যারা বিনা কারণে বাইরে বের হবেন তাদের বিরুদ্ধে এবার আমরা প্রথমবারের মতো ২৬৯ ধারায় মামলা দিতে যাচ্ছি। এরপর তাদের গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হবে। এই আইনে মামলা হলে ন্যূনতম ৬ মাসের জেল ও জরিমানা হতে পারে।
এদিকে এক বিজ্ঞপ্তিতে আইএসপিআর জানিয়েছে, করোনা ভাইরাসের বিস্তাররোধে আরোপিত বিধিনিষেধ বাস্তবায়নের জন্য ‘ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’ এর আওতায় আগামী সাতদিন সারাদেশে সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন থাকবে।
চলমান বিধিনিষেধেও যদি মানুষ অকারণে ঘর থেকে বের হন তাহলে তার তাৎক্ষণিক বিচার হবে। কেন ঘর থেকে বেরিয়েছেন-এর সঠিক কারণ ব্যাখা করতে না পারলে ভ্রাম্যমাণ আদালতে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। এই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার জন্য বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ১০৬ জন কর্মকর্তাকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দিয়েছে সরকার।
দ্য কোড অব ক্রিমিনাল

প্রসিডিউর, ১৮৯৮ এর ১০(৫) ধারা অনুযায়ী এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দিয়ে মোবাইল কোর্ট আইন-২০০৯ এর ৫ ধারা মোতাবেক বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের আওতাধীন মোবাইল কোর্ট পরিচালনার নির্দেশনা দিয়ে গতকাল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় আদেশ জারি করে। এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটদের আজ বৃহস্পতিবার সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় কমিশনারের নির্দেশনা অনুযায়ী দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা দেয়া হয়।
প্রায় ১৫ মাস ধরে করোনা মহামারির সঙ্গে লড়াই করছে বাংলাদেশ। কয়েক দফা লকডাউন দেয়া হয়। গত মার্চ থেকে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়তে থাকলে ৫ এপ্রিল থেকে বিধিনিষেধ জারি করা হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সতর্কতার পর জাতীয় কারিগরি কমিটি ১৪ দিনের জন্য পূর্ণ শাটডাউন দেয়ার পরামর্শ দিয়েছিল। কিন্তু তা না করে আগের বিধিনিষেধের সঙ্গে নতুন কিছু শর্ত যোগ করে গত সোমবার থেকে তিনদিনের লকডাউন জারি করা হয়েছিল। আজ থেকে এক সপ্তাহের জন্য আরো কঠোর লকডাউন বাস্তবায়ন করার উদ্দেশ্যে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, কাঁচাবাজার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দোকান সকাল ৯টা থেকে ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। তবে ক্রয়-বিক্রয় করতে হবে উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে। খাবারের দোকান ও রেস্তোরাঁ সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। তবে তারা শুধু খাবার বিক্রি করতে পারবে, দোকানের ভেতরে গ্রাহককে সেবা দেয়া যাবে না।
স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় শিল্পকারখানা চালু থাকবে। শপিং মল, মার্কেট, দোকানপাট বন্ধ থাকবে। পর্যটন কেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার বন্ধ থাকবে।
জনসমাবেশ হয় এ ধরনের সামাজিক অনুষ্ঠান, যেমন বিয়ে, জন্মদিন, পিকনিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান করা যাবে না। সব ধরনের যন্ত্রচালিত যানবাহন বন্ধ থাকবে। পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত ট্রাক, লরি, কাভার্ড ভ্যান, কার্গো ভেসেল নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে থাকবে। বিমান, নৌ ও স্থল বন্দরের সঙ্গে সম্পৃক্ত অফিস এই বিধিনিষেধের আওতার বাইরে থাকবে।
আইনশৃঙ্খলা, জরুরি পরিষেবা, খাদ্যদ্রব্য পরিবহন ত্রাণ বিতরণ, রাজস্ব আদায়, টেলিফোন ও ইন্টারনেট (সরকারি ও বেসরকারি) গণমাধ্যম সংশ্লিষ্ট অফিসের কর্মীরা ও যানবাহন প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয় দেখিয়ে যাতায়াত করতে পারবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যাংকিং সেবা চালু থাকবে।
টিকা কার্ড দেখিয়ে কোভিডের টিকা গ্রহণ করতে যাওয়া যাবে। অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট বন্ধ থাকবে, তবে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু থাকবে এবং বিদেশগামী যাত্রীরা আন্তর্জাতিক ভ্রমণের টিকেট দেখিয়ে গাড়ি দিয়ে যাতায়াত করতে পারবে।
অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া (ওষুধ ও নিত্য প্রয়োজনীয় কেনাকাটা, চিকিৎসাসেবা, মৃতদেহ দাফন/সৎকার) বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না। নির্দেশনা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়