সীমিত লকডাউনে নগরবাসীর দুর্ভোগ

আগের সংবাদ

অকারণে বের হলেই জেল

পরের সংবাদ

ড্রপ আউট শিক্ষার্থীদের মূল ধারায় ফিরিয়ে আনুন

প্রকাশিত: জুন ৩০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ৩০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

করোনা বৈশ্বিক মহামারির কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে বর্তমান পর্যন্ত প্রায় ১৫ মাস ধরে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় শিক্ষার প্রসারে এক ধরনের স্থবিরতা বিরাজ করছে। আর করোনাকালীন এই স্থবিরতায় আর্থিক দৈন্যতা, উদাসীনতা কিংবা অন্য কোনো কারণে দেশের মোট শিক্ষার্থীর একটি অংশ স্ব-স্ব শ্রেণিতে শিক্ষার্জন থেকে দূরে সরে গিয়ে ধারাবাহিক শিক্ষার্জন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ কারণে শিক্ষায় এসব শিক্ষার্থীর ড্রপ আউট কিংবা ঝরে পড়া হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। একটি ফুল গাছ থেকে একেকটি ফুল ঝরে গেলে ওই গাছের সৌন্দর্য যেমন ক্রমান্বয়ে লোপ পাই, ঠিক তেমনি একইভাবে দেশের মোট শিক্ষার্থীর একটি অংশ যদি স্বাভাবিক শিক্ষার্জন থেকে পিছিয়ে পড়ে তবে দেশের জাতীয় উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়। শিক্ষা ব্যবস্থায় কোভিড-১৯ এর প্রভাব পর্যালোচনাকারী শিক্ষাবিদদের আশঙ্কা, হয়তো বা এই মহামারির পর ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে নাও ফিরতে পারে, যা আমাদের দেশের শিক্ষা বিস্তারে উদ্বেগের কারণ। কেননা করোনাকালীন অর্থনৈতিক মন্দায় চলমান মহামারির আগের দরিদ্র অনেক পরিবার অতি দরিদ্রের কাতারে গিয়ে দাঁড়াবে। সে ক্ষেত্রে ওইসব পরিবারের অভিভাবক তাদের সন্তানদের হয়তো বা বিদ্যালয়ে না পাঠিয়ে কোনো চাকরিতে পাঠাতে পারে। এমনকি মহামারির উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক মন্দায় অনেক শিক্ষার্থীর পক্ষে শিক্ষা ব্যয় মেটানো সম্ভব নাও হতে পারে। ফলে দেশে মোট শিক্ষার্থীর একটি অংশ ঝরে পড়লে তা অবাস্তব কিছু হবে না। তাই এখন থেকে এই ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ নিয়ে সরকারের চিন্তা করা বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে খুবই জরুরি হিসেবে আমি মনে করছি। একজন শিক্ষার্থীও যেন করোনাকালে ঝরে না যায় সেদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
এছাড়াও প্রত্যেক শিক্ষার্থীর ঝরে পড়া রোধে সরকার কর্তৃক শিক্ষাবৃত্তিসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করতে হবে যেন তাদের পরিবার নিজ নিজ সন্তানদের পড়াশোনার খরচকে কোনোভাবেই বোঝা মনে না করেন এবং প্রতিষ্ঠানগুলোতে খেলাধুলা, বিনোদনমূলক কার্যক্রম ও অন্যান্য সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির পরিধিকে বিস্তৃতি ঘটানোর লক্ষ্যে সরকারি সহযোগিতা প্রয়োজন। এছাড়াও অন্যদিকে করোনাকালে অভিভাবকদের আর্থিক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বিদ্যালয়ভিত্তিক তালিকা তৈরি করে সরকারি সহযোগিতায় বিশেষ করে দরিদ্র শিক্ষার্থীদের ভরণ-পোষণসহ প্রয়োজন অনুযায়ী মাসিক বৃত্তির প্রচলন করা এই মুহূর্তে অতীব প্রয়োজন। অন্যদিকে বর্তমানে প্রযুক্তিগত সহায়তায় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভার্চুয়াল প্ল্যাটফরমে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করা হলেও শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের মতো ক্ষতি পুষিয়ে নিতে নিম্নোক্ত বিষয়ের প্রতি গুরুত্বারোপ করা দরকার। ওই বিষয়ের আলোকে যেসব শিক্ষার্থী ভার্চুয়াল প্ল্যাটফরমে যুক্ত হয়ে শিক্ষার্জন করছে তারা কতটুকু শিখনফল অর্জন করতে পেরেছে সেটি বিবেচনায় এনে প্রতিষ্ঠানগুলোকে পরবর্তী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। দ্বিতীয়ত, মফস্বল কিংবা দুর্গম এলাকার যেসব শিক্ষার্থী কোনো মাধ্যমেই যুক্ত হতে পাচ্ছে না এ মুহূর্তে তাদের ওপরও সমান গুরুত্ব দেয়া দরকার। আর এজন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে তা বিশ্লেষণ করা। আর এক্ষেত্রে কত জনের মধ্যে ভার্চুয়ালি শিক্ষাগ্রহণের সুযোগ পৌঁছেছে তা জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর মাধ্যমে আদমশুমারির মতো শিক্ষাশুমারির ব্যবস্থা করে প্রয়োজন অনুযায়ী বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে বিশেষ ব্যবস্থা নিয়ে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের মূল ধারায় ফিরিয়ে এনে শিক্ষার প্রসারকে সুষম গতিতে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। দরকার হলে তাদের জন্য ভার্চুয়ালি শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিতকল্পে প্রতি শিক্ষার্থীর জন্য সরকার কর্তৃক অন্ততপক্ষে একটি অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ও বিনামূল্যে ইন্টারনেট সেবার সুযোগ নিশ্চিত করা দরকার।
শিক্ষক ও লেখক।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়