অর্থনৈতিক অঞ্চলে সৌদিকে জমির প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর

আগের সংবাদ

চিকিৎসা গবেষণায় আগ্রহ কম : বরাদ্দ, অবকাঠামো সীমিত > প্রণোদনা স্বল্পতা > প্রাইভেট প্র্যাকটিসে মনোযোগ বেশি

পরের সংবাদ

অগ্নিঝরা মার্চ : ঘরে ঘরে কালো পতাকা উত্তোলন

প্রকাশিত: মার্চ ১২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ১২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাঙালি তখন মুক্তির চেতনায় উজ্জীবিত। একাত্তরের ১২ মার্চ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের অসহযোগ আন্দোলন সরকারি, আধা-সরকারি কর্মচারীদের কর্মস্থল বর্জন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তালা, সরকারি ও বেসরকারি ভবন, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, বাসগৃহ ও যানবাহনে কালো পতাকা ওড়ানো অব্যাহত থাকে। নির্বাচনে জয়ী সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে আওয়ামী লীগের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবির সঙ্গে পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনীতিকরাও তখন কণ্ঠ মেলাতে শুরু করেছেন।
প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা ক্যাপ্টেন মনসুর আলী এক বিবৃতিতে বাংলাদেশের জন্য খাদ্যবোঝাই মার্কিন জাহাজের গতি বদলে করাচি পাঠানোয় উৎকণ্ঠা ও নিন্দা জানান। রাওয়ালপিন্ডিতে এক সরকারি ঘোষণায়, ২৩ মার্চ পাকিস্তান দিবসের নির্ধারিত সশস্ত্র বাহিনীর কুচকাওয়াজ, খেতাব বিতরণ ও অন্যান্য অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়। জাতীয় পরিষদ সদস্য মোহাম্মদ জহিরউদ্দিন পাকিস্তান সরকারের দেয়া খেতাব বর্জন করেন। পূর্ব বাংলার চলচ্চিত্র প্রদর্শকরা বঙ্গবন্ধুর অসহযোগ আন্দোলনে সমর্থন জানিয়ে ঢাকাসহ সারাদেশে অনির্দিষ্টকাল প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেন। তারা আওয়ামী লীগের সাহায্য তহবিলে ১৩ হাজার ২৫০ টাকা অনুদান দেন।
দৈনিক ইত্তেফাক, রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী ‘৭১ এর দশমাস’ এর তথ্যমতে, ময়মনসিংহে এক জনসভায় আবদুল হামিদ খান ভাসানী বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের প্রতি তার সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, আমি জানি শেখ মুজিবুর রহমান কখনোই বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারেন না। আপনারা শেখ মুজিবের ওপর সম্পূর্ণ ভরসা রাখুন। এদিন লাহোরে এক সংবাদ সম্মেলনে গণঐক্য আন্দোলনের প্রধান এয়ার মার্শাল (অব.) আসগর খান বলেন, পূর্বাঞ্চলের জনসাধারণ সমান অধিকার নিয়ে থাকতে চায়, পশ্চিমাঞ্চলের দাস হিসেবে নয়। পাকিস্তানকে রক্ষা করার একটিমাত্র পথ খোলা। আর তা হচ্ছে শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর। ন্যাপের মহাসচিব সি.আর. আসলাম এক বিবৃতিতে বলেন, দেশের বর্তমান সংকটের জন্য একচেটিয়া পুঁজিপতি ও আমলারাই দায়ী। ভুট্টোও এ ব্যাপারে নিজের দায়িত্ব এড়াতে পারেন না। ভুট্টোর হুমকিপূর্ণ মনোভাব ও ক্ষমতার লিপ্সাই রাজনৈতিক সংকটকে আরো ঘনীভূত করে তুলছে।
বগুড়া জেলখানা ভেঙে এদিন ২৭ জন কয়েদি পালিয়ে যায়। কারারক্ষীদের গুলিতে ১ কয়েদি নিহত ও ১৫ জন আহত হন। অব্যাহত আন্দোলনে সরকারি-আধাসরকারি অফিসের কর্মচারীরা কর্মস্থল বর্জন করেন। দৈনিক পাকিস্তান এদিন এক খবরে জানায়, বাঙালি সিএসপি কর্মকর্তারা চলমান আন্দোলনের সমর্থনে মিছিল করেছেন। আওয়ামী লীগের তহবিলে একদিনের বেতন অনুদান দিয়েছেন তারা।
একাত্তরের মার্চ মাসের দিনগুলো ছিল থমথমে, উৎকণ্ঠা, শঙ্কায় পরিপূর্ণ। চাপা উদ্বেগ, অস্থিরতা আর অনিশ্চয়তার আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছিল সাড়ে ৭ কোটি বাঙালি। কী ঘটবে, কী ঘটতে যাচ্ছে- তা নিয়ে চিন্তিত, উৎকণ্ঠিত ছিলেন সবাই।
অবরুদ্ধ গণমানুষ ভেতরে ভেতরে প্রস্তুত হচ্ছিলেন চূড়ান্ত লড়াইয়ের জন্য। লক্ষ্য একটাই, নিরঙ্কুশ স্বাধীনতা। কারণ, ততদিনে দিনের আলোর মতো স্পষ্ট হয়ে উঠছিল যে, পশ্চিম পাকিস্তানি বেনিয়া দুর্বৃত্ত শোষকগোষ্ঠী বাঙালিকে তার ন্যায্য অধিকার কোনোদিনই দেবে না। তাই তাদের বিরুদ্ধে শুধু সংগ্রাম, মিছিল-সমাবেশই নয়, লড়তে হবে চূড়ান্ত লড়াই।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়