মহাখালীতে অভিযান : তিন রেস্টুরেন্টকে তিন লাখ টাকা জরিমানা

আগের সংবাদ

শ্রমবাজারে সম্ভাবনার হাতছানি : সৌদি আরব ও মালয়েশিয়ায় সংকট দেখা দিলেও ইউরোপে সম্ভাবনার হাতছানি

পরের সংবাদ

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমাজের সর্বত্র ছড়িয়ে দেয়ার তাগিদ

প্রকাশিত: মার্চ ১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ঝর্ণা মনি : বাহাত্তরের সংবিধানের চারটি মূলনীতি- জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা। কিন্তু জাতির পিতা এবং জাতীয় চার নেতা হত্যাকাণ্ডের পর মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ শক্তি ষড়যন্ত্রমূলকভাবে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে পাকিস্তানি আদলে চার মূলনীতিকে ক্ষতবিক্ষত করে। ২০১১ সালের ৩০ জুন পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে চার মূলনীতিকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, স্বাধীনতার বায়ান্ন বছর পর এসেও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠায় লড়াই করতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। পাঁচ দশকে দেশটির অর্জনের ঝুলিতে নিত্যনতুন পালক যুক্ত হলেও কিছু ব্যর্থতা বারবার ¤øান করে দিতে চায় সাফল্য। সবস্তরে স্বাধীনতার চেতনা প্রতিষ্ঠা করে এগিয়ে যাওয়াকেই বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা।
বিশ্লেষক ও গবেষকদের মতে, মুক্তিযুদ্ধের মূলনীতি ছিল তিনটি- ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র। তবে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের শুরুই হয়েছিল দ্বিজাতিতত্ত্বকে প্রত্যাখ্যান করে। দ্বিজাতিতত্ত্বটা ছিল ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদের ওপর নির্ভরশীল। অন্যদিকে পাকিস্তানে গণতন্ত্রের নাম-নিশানা ছিল না। শাসন ব্যবস্থা ছিল পুরোপুরি আমলাতান্ত্রিক; অসামরিক ও সামরিক। পাকিস্তানের ২৩ বছরের ইতিহাসে কোনো সাধারণ নির্বাচন হয়নি। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ২২ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা- এই চারটি মূলনীতি দিয়েই বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। এই চারটি মৌলিক নীতির ধারায় বাংলাদেশ পরিচালিত হবে।
স্বাধীনতার বায়ান্ন বছরে সংবিধানের চার মূলনীতিতে কতটুকু অটল বাংলাদেশ- এমন প্রশ্নের জবাবে ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, বাহাত্তরের সংবিধান থেকে সমাজ-রাষ্ট্র অনেক দূরে। বঙ্গবন্ধু ধর্মনিরপেক্ষ অসাম্প্রদায়িক বৈষম্যহীন সমতাভিত্তিক বাংলাদেশ রাষ্ট্র চেয়েছিলেন; কিন্তু গত পাঁচ দশকে এই বৈষম্য আরো বেড়েছে। সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ধর্মনিরপেক্ষতা মূলনীতিটি পালিয়েছে। ধর্মান্ধগোষ্ঠী বাড়ছে।
অর্জন অনেক, চ্যালেঞ্জও কম নয় : গবেষকদের মতে, বায়ান্ন বছরেও সংবিধানের ওই চার মূলনীতি এখনো অধরা। স্বাধীনতার সাড়ে তিন বছরের মাথায় পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী জাতীয় চার নেতার নির্মম হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে উল্টোপথে যাত্রা করে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ। স্বৈরশাসকের বন্দুকের নলের খোঁচায় ক্ষতবিক্ষত সংবিধান থেকে অন্তর্হিত হয়ে যায় ধর্মনিরপেক্ষতা। সংবিধান অনুযায়ী, বাংলাদেশের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। অথচ শুরুতে সংবিধানে রাষ্ট্রধর্মের কোনো বিধান ছিল না। বরং সংবিধানের চার মূলনীতির অন্যতম ছিল ধর্মনিরপেক্ষতা। কিন্তু ১৯৮৮ সালে এরশাদের শাসনামলে সংবিধানের চরিত্র পাল্টে দেয়া হয়। শুধু তাই নয়, জেনারেল জিয়া এবং জেনারেল এরশাদের আমলে রাষ্ট্র কাঠামোর পরিবর্তনে দেখা দেয় নানা বৈপরীত্য। ইতিহাসবিকৃতির মহোৎসব, বিচারহীনতার সংস্কৃতি ও দুর্নীতির ক্রমবিকাশে মুখ থুবড়ে পড়ে বৈষম্যমুক্ত, ন্যায়বিচারভিত্তিক সমাজ গঠনে সংবিধানের মূলনীতি। ক্ষতবিক্ষত সংবিধান ও সামরিক শাসিত রাষ্ট্র চারনীতির পরিবর্তে ফিরে যায় পাকিস্তানি ভাবধারায়। এজন্য বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় দীর্ঘদিন মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী

শক্তির অবস্থান, মৌলবাদের উত্থানকেই দায়ী করেছেন তারা।
এ ব্যাপারে প্রবীণ রাজনীতিবিদ, ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পংকজ ভট্টাচার্য ভোরের কাগজকে বলেন, সাফল্য অনেক, সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। সামরিক শাসনের অবসান হয়েছে। সংবিধানের কিছু সীমাবদ্ধতাসহ ধর্ম নিরপেক্ষতা ফিরে এসেছে। যুদ্ধাপরাধীর বিচার হয়েছে। তবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুরোপুরি ফিরিয়ে আনা এখনো সম্ভব হয়নি। বঙ্গবন্ধু ধর্মের নামে রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছিলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর জিয়াউর রহমান ধর্মভিত্তিক রাজনীতি চালু করে। ধর্মীয় সংগঠনগুলোকে রাজনীতি করার অধিকার দেয়।
বিশ্লেষকদের মতে, দেশে মৌলবাদের বিস্তার, ধর্মের অপব্যাখ্যা, ইতিহাস বিকৃতির কারণে আদর্শহীনতার রাজনীতি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম এই মূলনীতি বৈষম্যহীন সমাজ আজো প্রশ্নবিদ্ধ। কমেনি ধনী-দরিদ্র বৈষম্য। যদিও ৫২ বছরে দরিদ্রতার তকমা ঘুচিয়ে বাংলাদেশ এখন মধ্যম সারির দেশ। রূপকল্প-২০৪১ সালে উন্নত দেশের স্বপ্নে বিভোর জাতি। এক দশকে দারিদ্র্য কমেছে ১৫ শতাংশের বেশি। তাদের মতে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কেবল স্লোগান বা বুলি নয়, এটি আদর্শ- যা ধারণ করতে হবে, লালন করতে হবে। সেই আলোকে পদক্ষেপ নিতে হবে। গড়তে হবে সব মানুষের বাসযোগ্য বাংলাদেশ; সেখানে ধর্ম-বর্ণে বিভাজন থাকবে না, শোষণ-বঞ্চনা থাকবে না।
এ ব্যাপারে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. হারুন অর রশিদ ভোরের কাগজকে বলেন, বঙ্গবন্ধু, জাতীয় চার নেতা, ৩০ লাখ শহীদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন প্রয়োজন। আর এর মধ্য দিয়েই সোনার বাংলা গড়া সম্ভব।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়