অমিত শাহের আশ্বাস : রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশের পাশে থাকবে ভারত

আগের সংবাদ

বিশ্বকাপের বাঁশি বাজল কাতারে

পরের সংবাদ

ধৃত বজলুর নামেই ২৬ মামলা : ২ হাজার মামলার আসামির নিরাপদ ঠিকানা চনপাড়া!

প্রকাশিত: নভেম্বর ২০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক ও রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি : রাজধানীর উপকণ্ঠ নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানাধীন চনপাড়া বস্তিতে সব ধরনের অপকর্মের হোতা হিসেবে পরিচিত ২৩ মামলার আসামি বজলুর রহমান গ্রেপ্তার হলেও এখনো স্বস্তি ফেরেনি সেখানে। আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষ সংশ্লিষ্টতা ও ক্ষতাসীনদের সঙ্গে সখ্যতা থাকায় তিনি সহজেই ছাড়া পেয়ে আবারো ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন কিনা সেই শঙ্কায় রয়েছে এলাকাবাসী। তারপরও গত দেড় যুগে রূপগঞ্জ থানার শুধু চনপাড়া এলাকার মাদক ব্যবসা সংক্রান্ত ঘটনায় দায়েরকৃত ২ হাজারের বেশি মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্রুত অভিযান শুরুর দাবি জানিয়েছে তারা। গত শুক্রবার বিকালে অস্ত্র, মাদক ও বৈদেশিক মুদ্রাসহ আটক বজলুর বিরুদ্ধে গতকাল শনিবার আরো তিনটি মামলা হয়েছে। এ নিয়ে তার বিরুদ্ধে মোট ২৬টি মামলার তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এদিকে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশ হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবিতে মানববন্ধন করেছেন তার বন্ধু, সহপাঠী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা। গতকাল শনিবার দুপুরে বুয়েটের শহীদ মিনার চত্বরে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। অন্যদিকে বুয়েটের এ মেধাবী শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধারের ১২ দিন পার হলেও তার মৃত্যু রহস্যের কুল-কিনারা করতে পারেনি তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ও র‌্যাবের পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে তদন্ত কাজে ধোঁয়াশা তৈরি হলেও মোবাইল ফোনের সংকেত মতে চনপাড়ায় তার সর্বশেষ অবস্থান ছিল। কিন্তু এরপর কোথায় কী হয়েছে তা এখনো রহস্যঘেরা।
চনপাড়া বস্তির একাধিক বাসিন্দা জানিয়েছেন, কায়েতপাড়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার ও ইউনিয়ন শাখা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বজলু স্থানীয় সংসদ সদস্য, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে তিনি চনপাড়ায় মাদক ও অপরাধের স্বর্গরাজ্য গড়ে তোলেন। গত দেড় যুগে হত্যা, মাদক, অস্ত্র, পুলিশ এসল্টসহ বিভিন্ন অভিযোগে ২ হাজার মামলায় আসামি হয়েছেন চনপাড়ার কয়েক হাজার বাসিন্দা। তাদের ধরতে পুলিশ-র‌্যাব সেখানে অভিযানে গেলে তাদের উপর একাধিক হামলার ঘটনা ঘটেছে। খুন হয়েছেন এক পুলিশ কর্মকর্তাও। এ অবস্থায় মামলা হলেও চনপাড়া থেকে আসামি ধরা ছিল দুরূহ। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর সেখানে পুলিশ-র‌্যাবের অভিযানে ছিল অলিখিত ‘নিষেধাজ্ঞা’! এই সুযোগে চনপাড়া হয়ে উঠেছে দাগী ও চিহ্নিত আসামিদের নিরাপদ ঠিকানা। আর অপরাধ ও অপরাধীদের সমন্বয়ে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন বজলু। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নামে-বেনামে গড়ে তুলেছেন সম্পদের পাহাড়। সামান্য একজন ইউপি সদস্য হলেও তিনি চলতেন তিনজন গানম্যান, পিএস ও এপিএস নিয়ে। ছিল বিশেষ

প্রটোকল। শুক্রবার র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হলেও তার বাহিনীর কয়েকশ দুর্ধর্ষ ক্যাডার এখনো ধরা পড়েনি। অস্ত্র উদ্ধারেও নেই অভিযান। তাছাড়া বজলুর ঘনিষ্ঠদের মধ্যে অনেক নারীও রয়েছেন, যারা এখনো রয়ে গেছেন অপরাধী তালিকার বাইরে।
ফারদিনের লাশ উদ্ধার ও র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে সিটি শাহিনের মৃত্যুর পর চনপাড়া ও বজলুর বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় আসে। বজলুকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র‌্যাব গতকাল জানায়, কায়েতপাড়া ইউপির ৯নং ওয়ার্ডের মেম্বার গ্রেপ্তারকৃত এ ব্যক্তি স্থানীয় উঠতি বয়সের ছেলেদের কাছে বজলু ভাই নামে পরিচিত। তার ছত্রছায়ায় কয়েকটি চক্র টাকার বিনিময়ে এলাকার ছেলেদের দিয়ে বিভিন্ন অপকর্ম যেমন- হত্যা, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, ভয়ভীতি, কিশোর গ্যাং, পতিতালয় পরিচালনা করে। ঘটায় ধর্ষণ, যৌন হয়রানির মতো ঘটনাও। কেউ চাঁদা না দিলেই তার কপালে জুটত ভয়াবহ নির্যাতন। আধিপত্য বিস্তার ও টাকার ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে গত এক-দেড় বছরে সেখানে খুন হয়েছে অন্তত ৬ জন। চলতি বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর অপরাধী গ্রেপ্তারে র‌্যাবের একটি দল চনপাড়া এলাকায় অভিযান চালালে বজলুর নির্দেশে অপরাধীরা তাদের ওপর আক্রমণ চালিয়ে আসামিকে ছিনিয়ে নেয়ারও অপচেষ্টা চালায়।
র‌্যাব-১ এর কমান্ডিং অফিসার (সিও) লে. কর্নেল আব্দুল্লাহ আল-মোমেন বলেন, গ্রেপ্তারের সময় বজলুর কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন, ৫ রাউন্ড গুলি, ২২০ গ্রাম হেরোইন, একটি মোবাইল সেট, ভারতীয় ২৫ হাজার জাল রুপি, ৭৫ হাজার জাল টাকা ও মাদক বিক্রির নগদ ২১ হাজার ৫০০ টাকা উদ্ধার করা হয়। এখন পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কার্যক্রমসহ বিভিন্ন অপরাধে ২৩টি মামলার রেকর্ড পাওয়া গেছে। নতুন করে বজলুর বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদক ও জাল নোটের মামলা হবে।
রূপগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এ এফ এম সায়েদ বলেন, ঘটনার পর চনপাড়ায় টহল জোরদার করা হয়েছে। মামলায় অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনতে আগেও অভিযান চালানো হতো। এখনো আমরা প্রতিনিয়ত সেখানে অভিযান চালাচ্ছি।
অন্যদিকে গতকাল দুপুরে বুয়েটের শহীদ মিনার চত্বরে পরশ হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবিতে মানববন্ধনে উপস্থিত তার সহপাঠী সাদমান সাংবাদিকদের বলেন, দুই সপ্তাহ হয়ে গেলেও তদন্ত কোন দিকে যাচ্ছে আমরা এখনো জানি না। ডিবি ও র?্যাব যখন যা জানতে পারছে, আমাদের জানাচ্ছে। আমরা জানি এখনো তদন্ত শেষ হয়নি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর পূর্ণ আস্থা আছে আমাদের। ফারদিন আমাদের ক্লাস রিপ্রেজেনটেটিভ ছিল। তার মধ্যে সেই দায়িত্ববোধটা ছিল। ওর কোনো পূর্বশত্রæতা থাকলে আমরা সেটা সম্পর্কেও কিছু বলতে পারতাম। কিন্তু এমন কিছুই ছিল না। আরেক সহপাঠী সাফি বলেন, আমরা অপেক্ষা করছি সুষ্ঠু তদন্তের। আমাদের বন্ধুকে হত্যায় জড়িতদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে শাস্তি চাই। উপস্থিত শিক্ষার্থীরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব সহকারে ফারদিন হত্যার তদন্ত চালিয়ে দ্রুততম সময়ে প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানান।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়