নিশ্চিত মৃত্যু থেকে ইমরান খানকে বাঁচালেন এক যুবক : প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের দিকে সন্দেহের তীর

আগের সংবাদ

এ মরণফাঁদ থেকে মুক্তি মিলবে কবে?

পরের সংবাদ

পীরগঞ্জে কাঠ পোড়ানোর ব্যাপক প্রস্তুতি : বসতবাড়ির আশপাশে ও ফসলের মাঠে ১৭ ইটভাটা

প্রকাশিত: নভেম্বর ৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ৫, ২০২২ , ১২:২৯ পূর্বাহ্ণ

দেলওয়ার হোসেন দুলাল সরকার, পীরগঞ্জ (ঠাকুরগাঁও) থেকে : ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে বসতবাড়ির আশপাশে ও ফসলি জমির মাঝখানে নিয়মবহির্ভূতভাবে স্থাপন করা হয়েছে ইটভাটা। ইট বানাতে ফসলি জমির উপরিভাগের মাটি কেটে নিয়ে জমির উর্বরতা শক্তি নষ্ট করা হচ্ছে। কয়লার পরিবর্তে কাঠ পুড়িয়ে দূষিত করা হচ্ছে এলাকার পরিবেশ। ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় প্রতি বছর নষ্ট হচ্ছে আম ও লিচু গাছের মুকুলসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষেত। শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগ ছড়িয়ে পড়ছে ভাটা এলাকার সাধারণ মানুষের মাঝে। কমছে ফসলের উৎপাদন। এ উপজেলায় এ রকম ১৭টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে দুটি হাওয়া ভাটা। বাকিগুলো ফিক্সড চিমনি ভাটা। ভাটাগুলোর বেশির ভাগের কোনো লাইসেন্স নেই। অন্যান্য বছরের মতো এবারো এসব ভাটায় ইট তৈরির প্রস্তুতি চলছে। ভাটায় পোড়ানোর জন্য স্তূপ করা হয়েছে শত শত টন কাঠখড়ি। এ মাসেই বেশ কিছু ভাটায় আগুনও দেয়া হবে। এসব দেখার যেন কেউ নেই। তবে প্রশাসন বলছেন, অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। পীরগঞ্জ পৌর শহর ঘেঁষে চাপোড় এলাকায় পীরগঞ্জ-বীরগঞ্জ পাকা সড়কের দুই পাশে বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠের মাঝখানে ৫টি, ভেলাতৈড় ও গনিরহাটে জনবসতি এলাকায় ৩টি, কেউটগাঁওয়ে একটি, গোদাগাড়ি-সিন্দুর্না এলাকায় ৪টি, কালিয়াগঞ্জে একটি, মল্লিকপুরে একটি এবং বৈরচুনায় পাকা সড়কের দুধারে দুটি ইটভাটা রয়েছে।
গাছের গুঁড়ি ও ডালপালা ভাটায় জ¦ালানোর উপযোগী করার জন্য চাপোড় এলাকায় অবৈধভাবে স্থাপন করা হয়েছে একটি করাত কল। সেখানে রাত-দিন শুধু ভাটায় পোড়ানোর জন্য খড়ি কাটা হয়। এসব খড়ি ট্রলিতে করে বিভিন্ন এলাকায় স্তূপ করছেন ভাটা মালিকরা। জসাইপাড়া গ্রামের তারেক হোসেন জানান, পীরগঞ্জে তিন ফসলি জমির মাঝখানে ইটভাটা করা হয়েছে। ভাটার আশপাশের আবাদি জমির উপরিভাগের মাটি কেটে নিয়ে ইট বানানো হচ্ছে। ভাটায় কয়লার পরিবর্তে কাঠের ব্যবহার এখন মামুলি ব্যাপার। এতে কারো নজর নেই। এর ফলে জমি কমছে, মাটি কেটে নিয়ে যাওয়া জমিতে কমপক্ষে ৭-৮ বছর ভালো ফসল হচ্ছে না।
ভেলাতৈড় গ্রামের কামরুজ্জামান জানান, তাদের এলাকায় ভাটার ধোঁয়া, আগুনের ফুলকি আর ধুলা-বালিতে গ্রামের অনেকের শ্বাসকষ্ট রোগ দেখা দিয়েছে। ইট পোড়ানোর মৌসুমে এ রোগের হার বেড়ে যায়। এতে এলাকার মানুষ দীর্ঘমেয়াদি ভোগান্তিতে পড়ছে। ভাটা বন্ধে তারা অনেকবার বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেছেন। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।
নারায়ণপুর গ্রামের মো. বাদল জানান, ভাটার কালো ধোঁয়ায় দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। আশপাশের আম-লিচু বাগানের মুকুল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। হাওয়া ভাটার গরম বাতাসে ধানসহ অন্যান্য ফসল ঝলসে যাচ্ছে। ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ অনুযায়ী, আবাসিক এলাকা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাটবাজার ও ফসলি জমির এক কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না এবং ইট তৈরির ক্ষেত্রে আবাদি জমির উপরিভাগের মাটি ব্যবহার নিষিদ্ধ। ইট পোড়ানোর ক্ষেত্রে কাঠ কিংবা বাঁশ পোড়ানো যাবে না। আবাদি জমির উপরিভাগের মাটি ব্যবহার করে ইট তৈরি করলে প্রথমবার ২ বছরের কারাদণ্ড ও ২ লাখ টাকা জরিমানা এবং এর পরবর্তীতে আবার ব্যবহার করলে ২ থেকে ১০ বছরের জেল, একই সঙ্গে ২ থেকে ১০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। ইট পোড়ানোর কাজে জ্বালানি হিসেবে কাঠ ব্যবহার করলে অনধিক ৩ বছরের কারাদণ্ড বা ৩ লাখ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। তবে কোনোভাবেই এসব নিয়ম মানা হচ্ছে না। স্থানীয় ও জেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর, শুল্ক বিভাগ, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা ও কিছু সাংবাদিককে ম্যানেজ করেই ইটভাটার এ অবৈধ কর্মযজ্ঞ চালানো হয় বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ভাটা মালিক। তারা বলছেন, প্রশাসনসহ সব শ্রেণিকেই হাত করে ইটভাটা চালাচ্ছেন তারা। এ জন্য বছরে তাদের ভাটাপ্রতি আড়াই লাখ টাকা করে বাড়তি খরচ করতে হয়।
উপজেলা ভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রেজওয়ানুল হক বিপ্লব জানান, পীরগঞ্জ উপজেলা মূলত কৃষিপ্রধান এলাকা। এখানে সব জমিতেই কম-বেশি আবাদ হয়। উন্নয়ন কাজের জন্য ইট দরকার। এজন্য তুলনামূলক কম আবাদ হয় এমন জমিতে ভাটা করা হয়েছে। সবাই কাঠ পোড়ান- এটা ঠিক না, আর আবাদি জমির উপরিভাগের মাটি সংশ্লিষ্ট জমি মালিকের সম্মতিতেই কাটা হয়। উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহরিয়ার নজির জানান, জেলা প্রশাসনের নির্দেশনামতে অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়