সহিংসতা প্রতিরোধে মাঠে থাকবে ১৪ দল

আগের সংবাদ

পঞ্চগড়ে নৌকা ডুবে নিহত ২৫, নিখোঁজ অর্ধশতাধিক : করতোয়া তীরে শোকের মাতম

পরের সংবাদ

৯০তম আত্মাহুতি দিবসে আলোচনা : স্বাধীনতা সংগ্রামের বীজ বপন করেন প্রীতিলতা

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম অফিস : ব্রিটিশবিরোধী সশস্ত্র আন্দোলনের প্রথম নারী শহীদ বীরকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের ৯০তম আত্মাহুতি দিবসে নানা কর্মসূচি পালন করেছে বিভিন্ন সংগঠন। ব্রিটিশ সা¤্রাজ্যবাদ থেকে মাতৃভূমিকে মুক্ত করতে অগ্নিযুগের বিপ্লবী প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের জীবনদানকে গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করেছে চট্টগ্রামের বিভিন্ন সংগঠন। এ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, ব্রিটিশের শোষণ থেকে দেশকে এবং দেশের মানুষকে মুক্ত করার জন্য, স্বাধীনতার জন্য প্রীতিলতা জীবন দিয়েছিলেন। নিজের জীবন উৎসর্গ করে বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রামের বীজ বপন করেছিলেন সেদিন বীরকন্যা প্রীতিলতা। কিন্তু আত্মাহুতির এত বছর পরও তার স্মৃতি সংরক্ষণের কোনো উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হয়নি। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম বিপ্লবী মাস্টারদা সুর্যসেন, বীরকন্যা প্রীতিলতাসহ সব বীর সেনানীদের স্মৃতিবিজড়িত ইউরোপিয়ান ক্লাবকে জাদুঘর হিসেবে সংরক্ষণের দাবি জানান বক্তারা। প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের জন্মস্থান পটিয়ায় সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় নির্মিত প্রীতিলতা সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্সে গতকাল শনিবার সকালে প্রীতিলতার আবক্ষ মূর্তিতে পুষ্পস্তবক দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে বীরকন্যা প্রীতিলতা ট্রাস্ট, পটিয়া প্রেস ক্লাব, কালের কণ্ঠ শুভসংঘ, নজির আহমদ দোভাষ ফাউন্ডেশন, পটিয়া গৌরব সংসদসহ বিভিন্ন সংগঠন। এছাড়া নগরীর পাহাড়তলীতে প্রীতিলতা ভাস্কর্যে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি বিভিন্ন সংগঠন আলোচনা সভার আয়োজন করে।
গতকাল দুপুরে প্রীতিলতা ট্রাস্টের উদ্যোগে আলোচনা সভা, ক্ষুদিরাম বইয়ের মোড়ক উন্মোচন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রীতিলতা ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি পংকজ চক্রবর্ত্তী। অন্যতম ট্রাস্টি প্রবোধ রায় চন্দনের সঞ্চালনায় এতে প্রধান অতিথি ছিলেন পটিয়া সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাকিবুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক রাশেদ মনোয়ার ধলঘাট ইউপি চেয়ারম্যান রনবীর ঘোষ টুটুন,

বিশিষ্ট নারী নেত্রী জেসমীন সুলতানা পারু, চমেক হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. প্রণব কুমার চৌধুরী, পটিয়া সাহিত্য পরিষদ আহ্বায়ক আহাম্মদ কবির, পটিয়া প্রেস ক্লাব সভাপতি নুরুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক আবদুল হাকিম রানা, সহসভাপতি আবদুর রাজ্জাক প্রমুখ।
এদিকে নগরীর পাহাড়তলীতে প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের ভাস্কর্যে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে শ্রদ্ধা জানান বাসদের নেতাকর্মীরা। পুষ্পস্তবক অর্পণের পর সমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বক্তব্য দেন, বাসদ চট্টগ্রাম জেলা ইনচার্জ আল কাদেরী জয়, সদস্য রায়হান উদ্দিন, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট জেলার আহ্বায়ক হেলাল উদ্দিন কবির, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট নগরের সভাপতি মিরাজ উদ্দিন ও শিক্ষক শফিউল আলম। চট্টগ্রাম জেলা ছাত্র ইউনিয়নের পক্ষ থেকেও পাহাড়তলীতে বীরকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের ভাস্কর্যে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এরপর সংক্ষিপ্ত সভায় বক্তব্য রাখেন জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি অ্যানি সেন, সাংস্কৃতিক সম্পাদক শুভ দেব নাথ, হালিশহর থানার সদস্য অবিনাশ রায়, প্রণয়নী ইপা, মুক্তা পাল। নারীমুক্তি কেন্দ্র, চট্টগ্রাম জেলার উদ্যোগে প্রীতিলতার ভাস্কর্যে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। সংগঠনের জেলা আহ্বায়ক আসমা আক্তারের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজের উপাধ্যক্ষ সালমা রহমান ও সহকারী অধ্যাপক নিগার সুলতানা, নারীমুক্তি কেন্দ্রের জেলা সদস্য দীপা মজুমদার। বীরকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের আত্মাহুতি দিবস উপলক্ষে পাহাড়তলীতে আবক্ষ ভাস্কর্যে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর পথসভার আয়োজন করে ‘বিপ্লবী তারকেশ্বর দস্তিদার স্মৃতি পরিষদ’। পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সিঞ্চন ভৌমিকের সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য রাখেন পরিষদের উপদেষ্টা শিক্ষক বিজয় শংকর চৌধুরী, অর্থ সম্পাদক তপন ভট্টাচার্য্য, বাসদ চট্টগ্রাম জেলার ইনচার্জ আল কাদেরী জয়, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি মিরাজউদ্দিন।
বক্তারা বলেন, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ আমাদের জাতীয় জীবনে একই সূত্রে গাঁথা। বিপ্লবীদের পথ ধরেই মানুষ যুদ্ধ করে, রক্ত দিয়ে এ দেশকে স্বাধীন করেছে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী বিপ্লবীদের সম্মান দেয়া হয়নি। বীরকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের আত্মাহুতি দিবসকে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করার দাবি জানান বক্তারা।
সভায় বক্তারা বলেন, প্রীতিলতাসহ ব্রিটিশবিরোধী বিপ্লবীদের স্মৃতি ও ইতিহাস সংরক্ষণে রাষ্ট্র ও নগর কর্তৃপক্ষের কোনো উদ্যোগ নেই। ইউরোপিয়ান ক্লাবকে জাদুঘর হিসেবে সংরক্ষণের জন্য দীর্ঘদিনের দাবি সত্ত্বেও সেটা অবহেলায় ফেলে রাখা হয়েছে। যাদের আত্মদান ও সংগ্রামের স্মৃতিতে চট্টগ্রাম ‘বীর চট্টলা’ হয়েছে, সেই চট্টলা আজ তার বীরদের ভুলতে বসেছে, যা লজ্জা ও বেদনার। তরুণ প্রজন্মের সামনে প্রীতিলতাদের সংগ্রামী গৌরবগাঁথা ইতিহাস তুলে ধরে তাদের সেই ঋণ আজ শোধ করতে হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়