সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী : সাম্প্রদায়িক সম্প্রীরীতি রক্ষায় সজাগ থাকতে হবে সবাইকে

আগের সংবাদ

পঞ্চগড়ে নৌকাডুবিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫০, এখনো নিখোঁজ অন্তত ২৭ : মরদেহের অপেক্ষায় স্বজনরা

পরের সংবাদ

পঞ্চগড়ে নৌকা ডুবে নিহত ২৫, নিখোঁজ অর্ধশতাধিক : করতোয়া তীরে শোকের মাতম

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২২ , ১২:১১ পূর্বাহ্ণ

এন এ রবিউল হাসান লিটন, বোদা ও আবু সালেহ মো. রায়হান, পঞ্চগড় থেকে : পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় করতোয়া নদীতে শ্যালো ইঞ্জিনচালিত নৌকা ডুবে নারী ও শিশুসহ ২৫ জন নিহত হয়েছেন। এ দুর্ঘটনায় নিখোঁজ রয়েছেন অর্ধশতাধিক। গতকাল রবিবার বেলা দেড়টার দিকে উপজেলার মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়নের আউলিয়া ঘাট এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। ডুবে যাওয়া নৌকায় যাত্রী ধারণক্ষমতা ছিল ৩৫ থেকে ৪০ জন। সেখানে শতাধিক যাত্রী তোলা হয়েছিল। মূলত ছোট নৌকায় অতিরিক্ত যাত্রী তোলায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।
মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনায় বিপুল সংখ্যক মানুষের প্রাণহানিতে শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। খবর পেয়ে জেলা প্রশাসক মো. জহিরুল ইসলাম, পুলিশ সুপার এস এম সিরাজুল হুদা, বোদা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফারুক আলম টবিসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এদিকে র্দুঘটনার কারণ অনুসন্ধানে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। গতকাল রাতে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দীপংকর রায়কে প্রধান করে এই কমিটি গঠন হয়।
নিহতদের মধ্যে ৮ শিশু, ৪ পুরুষ ও ১২ নারী রয়েছেন। তাদের মধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়ার পর সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। বাকি ১৮ জনের মরদেহ নদীর পাড়ে রাখা হয়েছে। এদের মধ্যে সন্ধ্যা পর্যন্ত ১৯ জনের পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। তারা হলেন- বোদা উপজেলার মাড়েয়া ফুটকিবাড়ী এলাকার হেমন্তের মেয়ে কলি রানি (১৪), দেবীগঞ্জ শালডাঙা হাতিডোবার কার্তিক রায়ের স্ত্রী ল²ী রানি (২৫), কাবুল চন্দ্র রায়ের ছেলে দিপঙ্কর চন্দ্র রায় (৩), বোদার মাড়েয়া বামনপাড়া এলাকার সজিব চন্দ্র রায়ের মেয়ে প্রিয়ন্তী (২), দেবীগঞ্জের ল²ীগড় ডাঙাপাড়া এলাকার চন্ডি দাসের স্ত্রী প্রমিলা রানি (৫৫), দেবীগঞ্জ পশ্চিম শিকারপুর এলাকার কালি কান্তের ছেলে অমল চন্দ্র (৩৫), রবীন চন্দ্রের স্ত্রী তারা রানি (২৪), বোদার পাঁচপীর বংশীধর পূজারি এলাকার মৃত চুড়ামোহন রায়ের স্ত্রী ধনবালা (৫৭), রমেশ চন্দ্রের স্ত্রী সুমিত্রা রানি (৫৭), ময়দান দীঘি এলাকার বিলাশ চন্দ্রের স্ত্রী সফলতা রানি (৫৫), মাড়েয়া বামনহাট এলাকারর রমেশ চন্দ্রের স্ত্রী শিমলা রানি (৩৫), বোদার বড়শশী কুমারপাড়া এলাকার আহম্মদ আলীর ছেলে হাসান আলী (৫২), বোদা মাড়েয়া আলোকপাড়া এলাকার রমেশ চন্দ্রের শিশু কন্যা উষসী (১), দেবীগঞ্জের হাতিডুবা এলাকার নারায়ণের শিশু কন্যা তনুশী (১), বোদার পাঁচপীর মদনহার এলাকার রতন চন্দ্রের শিশু কন্যা শ্রেয়শী (১), সাকোয়ার গড়দীঘি বাবু বাজার এলাকার ধর্ম নারায়ণের শিশু কন্যা প্রিয়ন্তী, বোদার মাড়েয়া এলাকার রবীন্দ্রের ছেলে বিলাশ চিন্দ্র, বোদা মাড়েয়া বামনহাট এলাকার নির্মল চন্দের স্ত্রী শোভা রানি (২৭) ও খুশি রানি (৩৫) নামে এক নারী।
গতকাল বিকালে সরজমিনে আউলিয়া ঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নদীর পাড়ে সারিবদ্ধ মরদেহ ঘিরে আহাজারি করছেন স্বজনরা। নিহতদের স্বজনদের পাশাপাশি কেঁদে বুক ভাসাচ্ছেন নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবারের লোকজনও। তাদের কান্নায় ভারি হয়ে উঠেছে আশপাশের পরিবেশ।
মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু আনছার মো. রেজাউল করিম জানান, মহালয়া উপলক্ষে মাড়েয়া বাজার এলাকার আউলিয়া ঘাট থেকে শ্যালো ইঞ্জিনচালিত নৌকাযোগে শতাধিক যাত্রী বড়শশী ইউনিয়নের বদেশ্বরী মন্দিরে (নদীর অপর পাড়ে) যাচ্ছিলেন। মাঝ নদীতে নৌকাটি ডুবে যায়। এ সময় কয়েকজন সাঁতরে তীরে ওঠেন। ঘটনাস্থলেই ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয় লোকজন ১০ জনকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়ার পর সাতজনের মৃত্যু হয়। এখনো অর্ধশতাধিক নিখোঁজ রয়েছেন। বাকিরা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
তিনি বলেন, স্থানীয় নৌকার মাঝিদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, মহালয়া উপলক্ষে মানুষের চাপ বেশি ছিল। প্রায় সব নৌকা বেশি করে যাত্রী নিয়ে যাচ্ছিল। দুর্ঘটনাকবলিত নৌকায় যাত্রী ধারণক্ষমতা ছিল ৩৫ থেকে ৪০ জন। সেখানে ৮০ জনের বেশি যাত্রী নেয়া হয়েছিল। অতিরিক্ত যাত্রী তোলায় দুর্ঘটনা ঘটেছে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী নজরুল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম ও ধনেশ চন্দ্র জানান, সকাল থেকে ঘাটে মানুষের ভিড় ছিল। ছোট ছোট নৌকাগুলো অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে চলাচল করেছিল। দুর্ঘটনাকবলিত নৌকায় ৮০ জনের বেশি যাত্রী ছিল। ঘাট থেকে ছেড়ে কিছুদূর যাওয়ার পরই অতিরিক্ত যাত্রীর কারণে নৌকাটি দুলতে থাকে। এ সময় মাঝি নৌকাটি ঘাটে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেন। তারই একপর্যায়ে নৌকাটি ডুবে যায়। এ সময় সাঁতার জানা যাত্রীরা তীরে উঠতে পারলেও বেশিরভাগ নারী-শিশু পানিতে ডুবে যান। তাদের চিৎকারে এলাকার লোকজন ছুটে এসে অনেককে উদ্ধার করেন। পরে জেলা, উপজেলা, পুলিশ প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়া হয়। খবর পেয়ে সবাই এসে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করেন। নদীর পাড়ে নারী-শিশুসহ ১৫ জনের মরদেহ রয়েছে। এছাড়া উদ্ধার হওয়া যাত্রীদের পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতাল ও বোদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে। সেখানে সাত জনের মৃত্যু হয়।
বোদা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এএসএম রাজিউল করিম রাজু বলেন, এখানে ১০ জনকে আনা হয়েছিল। এর মধ্যে নারী ও শিশুসহ সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। বাকি তিনজনের চিকিৎসা চলছে।
বোদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সোলেমান আলী বলেন, নৌকাডুবিতে এখন পর্যন্ত ২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ১২ নারী, আট শিশু ও চার পুরুষের লাশ পেয়েছি আমরা। তিনি আরো জানান, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। সন্ধ্যা পর্যন্ত সেখানে ১৬ জন নিখোঁজের তালিকা করা হয়েছে। উদ্ধার কার্যক্রম চলছে। সবার তালিকা পাওয়ার পর নিশ্চিত হওয়া যাবে প্রকৃতপক্ষে কতজন নিখোঁজ রয়েছেন। লাশ শনাক্তের প্রক্রিয়া চলছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মৃতদের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে দেয়া হবে।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, নৌকাটিতে দ্বিগুণ যাত্রী ছিল। ফায়ার সার্ভিসের অভিযান শেষ না হলে প্রকৃত মৃত্যুর সংখ্যা জানানো যাচ্ছে না। এ পর্যন্ত ২৪ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে মৃতদের পরিবারকে ২০ হাজার করে এবং আহতদের প্রত্যেককে ১০ হাজার করে টাকা দেয়া হবে।
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এস এম শফিকুল ইসলাম বলেন, ঘটনাস্থলে পুলিশের পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা উদ্ধার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। হতাহতের সংখ্যা বাড়তে পারে। আহতদের হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। নিখোঁজদের উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শোক :
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ পঞ্চগড়ের করোতোয়ায় নৌকাডুবিতে হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। গতকাল রাতে এক শোকবার্তায় দুর্ঘটনায় নিহতদের আত্মার মাগফিরাত ও শান্তি কামনা করেন এবং আহতদের আশু সুস্থতা কামনা করেন রাষ্ট্রপ্রধান।
পৃথক শোকবার্তায় যুক্তরাষ্ট্রে সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নৌকাডুবির ঘটনায় প্রাণহানিতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। নিহতদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়