বাম গণতান্ত্রিক জোটের হুঁশিয়ারি : দমন-পীড়ন করে গদি রক্ষা করা যাবে না

আগের সংবাদ

চার কারণে ভ্যাট আদায়ে বিপর্যয়

পরের সংবাদ

ভাগ্যগুণে সিংহাসনে ৭ দশক ধরে উজ্জ্বল

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : ১৯৫৩ সালের ২ জুন অভিষেক হয় রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের। গ্রেট ব্রিটেন এবং উত্তর আয়ারল্যান্ডের রাজদণ্ড হাতে তুলে নেন তিনি। যদিও রানি হওয়ার কথা তার ছিল না কখনো। নেহাতই ভাগ্যগুণ। তার বাবা প্রিন্স অ্যালবার্ট, ডিউক অব ইয়র্ক ছিলেন রাজা পঞ্চম জর্জের ছোট ছেলে। বড় ছেলে অষ্টম এডওয়ার্ডের রাজা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এক ডিভোর্সি নারীকে বিয়ে করায় রাজা হতে পারেননি। ১৯৩৬ সালের ১১ ডিসেম্বর ব্রিটেনের রাজা হন এলিজাবেথের বাবা প্রিন্স অ্যালবার্ট।
বড় মেয়ে হিসাবে সিংহাসনের দাবিদার তখন এলিজাবেথ। তাই ছোটবেলা থেকেই মেয়ের প্রশিক্ষণের উপর কড়া নজর রাখতে শুরু করেন রাজা। বাড়িতে এসে তাকে ইতিহাস, ভাষা, সংগীতের পাঠ দিতেন বিখ্যাত শিক্ষকরা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন এলিজাবেথ আর বোন মার্গারেটকে লন্ডনের বাইরে স্কটল্যান্ড এবং উইন্ডসরে পাঠিয়ে দেন রাজা।
১৯৪৭ সালের ২০ নভেম্বর দূর সম্পর্কের ভাই লেফটেন্যান্ট ফিলিপ মাউন্টব্যাটেনের সঙ্গে বিয়ে হয় এলিজাবেথের। পরের বছর ১৯৪৮ সালের ১৪ নভেম্বর জন্ম হয় প্রথম সন্তান প্রিন্স চার্লসের। ১৯৫১ সালে অসুস্থ হয়ে পড়েন রাজা অ্যালবার্ট। তখন থেকে তার প্রতিনিধিত্ব করে স্বামীর সঙ্গে বিদেশ সফরে যেতে শুরু করেছিলেন এলিজাবেথ।
১৯৫২ সালের জানুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ড সফরে বেরিয়েছিলেন রানি এলিজাবেথ। সঙ্গে প্রিন্স ফিলিপ। পথে কেনিয়া নেমেছিলেন। সেখানেই রাজার মৃত্যুর খবর পান। তড়িঘড়ি দেশে ফিরে আসেন এলিজাবেথ। তখন তার বয়স মাত্র ২৫।
শোক করার আর সময় পাননি তরুণী রানি। তত দিনে প্রথম ছেলে চার্লসের পর একমাত্র মেয়ে প্রিন্সেস অ্যানের জন্ম দিয়েছেন। দুই শিশু সন্তানকে দেশে রেখেই ১৯৫৩ সালের নভেম্বরে ৬ মাসের জন্য কমলওয়েলথভুক্ত দেশের সফরে বেরিয়েছিলেন রানি এলিজাবেথ। সঙ্গে স্বামী ডিউক অব এডিনবরা, ফিলিপ। শিশু সন্তানদের অবহেলা করেছেন, এই অভিযোগ বার বার উঠেছিল তার বিরুদ্ধে। সমালোচনার মুখেও পড়েছিলেন। সব সময় পাশে থাকেননি স্বামীও। বাবার আদরের লিলিবেথ (ডাকনাম) অবশ্য কর্তব্যকেই অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন বরাবর।
১৯৫৩ সালে অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ড দিয়ে এলিজাবেথের ৬ মাসের কমনওয়েলথ সফর শুরু। এলিজাবেথের আগে ব্রিটেনের অন্য কোন শাসক ওই দুই দেশে যাননি। ১৯৬১ সালে ভারতীয় উপমহাদেশ সফরে এসেছিলেন রানি। তার আগে ৫০ বছর ব্রিটেনের কোনো শাসক এদেশে পা রাখেননি। এলিজাবেথের আগে কোনো ব্রিটিশ শাসক দক্ষিণ আমেরিকাতেও যাননি। সেদিক থেকে পূর্বতন ব্রিটিশ শাসকদের রক্ষণশীলতা অনেকটাই ভেঙেছিলেন রানি।
তা বলে নিজের কার্যকালে কম সমালোচনার মুখে পড়েননি এলিজাবেথ। না চাইতেও জড়িয়েছেন বহু বিতর্কে। বার বার অভিযোগ উঠেছে, স্বামী ডিউক অব এডিনবরার অনেক ভুলই চোখে দেখেও দেখেননি। স্রেফ এড়িয়ে গিয়েছেন। মায়ের ভূমিকাতেও ব্যর্থ, অভিযোগ তেমনটাই। নিজের বিয়ে টিকিয়ে রাখলেও চার সন্তানের মধ্যে তিনজনেরই বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছে। সেই দায়ও আকারে-ইঙ্গিতে তার উপরই চাপিয়েছেন সমালোচকরা। বলেছেন, মা-বাবাকে কাছে না পেয়েই পরিবার কেমন হয়, বুঝতে পারেননি প্রিন্স চার্লস, প্রিন্সেস অ্যান এবং প্রিন্স অ্যান্ড্রিউ।
১৯৯৭ সালে প্রিন্সেস ডায়নার মৃত্যুর পর রানির বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় বয়ে গিয়েছিল। স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতেই মুখে কুলুপ এঁটে এড়িয়ে গিয়েছিলেন যাবতীয় সমালোচনা। তারপর কালের নিয়মে থেমে গিয়েছে সব। জীবদ্দশায় কোনো দিন সংবাদ মাধ্যমকে কোনো সাক্ষাৎকার দেননি। ১৯৯৭ সালে শুধু একবার একটি ভাষণে বলেছিলেন, ‘রাজনীতিকরা ব্যালট বাক্সে প্রত্যাখ্যাত হন। আর আমাদের, রাজ পরিবারের সদস্যদের জন্য এই প্রত্যাখ্যানের বার্তাটা অনেক কঠিন।’
এ বছরই রানির সিংহাসনে বসার ৭০ বছর পূর্তি হয়েছে। তবে উৎসব হলেও ঔজ্জ্বল্য ছিল না। কারণ ২০২১ সালের ৯ এপ্রিল মারা গিয়েছিলেন ডিউক অব এডিনবরা। রানির অভিষেকের ৭০ বছর পূর্তিতেও বিতর্ক রানির পিছু ছাড়েনি। সংবাদ মাধ্যমের দাবি, চার সন্তানের মধ্যে রানির সব থেকে প্রিয় যুবরাজ অ্যান্ড্রু। সেই যুবরাজের বিরুদ্ধে আমেরিকায় যৌন হেনস্থার অভিযোগ উঠেছে। তার জেরে সামরিক খেতাব ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। হারিয়েছেন রাজ পরিবারের পৃষ্ঠপোষকতা।
বিতর্কের এখানেই শেষ নয়। ছোট নাতি যুবরাজ হ্যারির স্ত্রী মেগান বর্ণবিদ্বেষের অভিযোগ এনেছেন রাজ পরিবারের বিরুদ্ধে। রাজ পরিবারের সঙ্গে সব সম্পর্ক চুকিয়ে স্ত্রী, ছেলেকে নিয়ে আমেরিকায় থিতু হয়েছেন হ্যারি। এই নিয়েও একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি তিনি। করদাতাদের টাকায় এত অতিরিক্ত সুযোগ-সুবিধা কেন পাবেন রাজ পরিবারের সদস্যরা, এলিজাবেথের রানি হওয়ার ৭০ বছরে সেই প্রশ্নও উঠেছে। সেই নিয়েও কোনো কথা বলেননি। আর বলবেন না। সব প্রশ্ন রেখেই গতকাল ৯৬ বছরে চলে গেলেন তিনি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়