ঢাকা কলেজ : ক্যান্টিনে খাওয়া নিয়ে দু’গ্রুপের সংঘর্ষ, আহত ১০

আগের সংবাদ

ভাঙা সড়কে খোঁড়াখুঁড়ির মচ্ছব : সড়ক খনন নীতিমালা উপেক্ষিত > তিন মাসের কাজ বছরজুড়ে > সেবা সংস্থার কাজে সমন্বয় নেই

পরের সংবাদ

ঢাবি ছাত্রীর সেই অপহরণকারী রুবেল গ্রেপ্তার : ১০ বছরে ৫০টি ধর্ষণ দেড় হাজার ছিনতাই!

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে রাজধানীর কল্যাণপুর থেকে পুলিশ পরিচয়ে তুলে নেয়া সেই অপহরণকারীকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখা। তার নাম শাকিল আহমেদ রুবেল (২৮)। তার বিরুদ্ধে আরো অর্ধশতাধিক তরুণীকে অপহরণ করে তাদের জিনিসপত্র ছিনতাই এবং অশালীন আচরণ করার অভিযোগ রয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। রুবেলের সঙ্গে গ্রেপ্তার হওয়া তার তিন সহযোগী হলেন- মো.আকাশ শেখ, দেলোয়ার হোসেন ও মো.হাবিবুর রহমান। এ সময় তাদের কাছ থেকে ১টি বিদেশি পিস্তল, ২টি রাউন্ড গুলি, ১টি ম্যাগজিন, ১টি ওয়ারলেস সেট, ২টি পুলিশ স্টিকারযুক্ত মোটরসাইকেল ও ছয়টি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়েছে।
গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীসহ এর আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় গত শনিবার অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করে ডিএমপি গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) উত্তরা বিভাগ।
গতকাল রবিবার সকালে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে ডিবি প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, আটক রুবেল একজন পেশাদার ছিনতাইকারী। তার মূল টার্গেট কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা। রুবেল পুলিশের পরিচয়ে গত ১০ বছরে প্রায় দেড় হাজার ছিনতাই ও ৫০ তরুণীকে ধর্ষণ করেছে। পুলিশ পরিচয়ে অপহরণ আর বহু ধর্ষণ করা শাকিল আহমেদ রুবেল অসংখ্য অপরাধ করেও এতদিন সবার চোখের আড়ালেই থেকে যায়। কারণ যারা নির্যাতনের শিকার হতেন, তারা কেউ কখনো থানায় অভিযোগ দায়ের করেননি।

সংবাদ সম্মেলনে ডিবি প্রধান বলেন, ঘটনার মূল অভিযুক্ত রুবেলের বাড়ি গাজীপুর। তবে আরো দুটি ঠিকানা পাওয়া গেছে। সেগুলো আমরা যাচাই-বাছাই করছি। রুবেল ঢাকায় কোনো বাসা ভাড়া নেয়নি।

সে রাজধানীর বিভিন্ন হোটেলে রুম ভাড়া নিয়ে অবস্থান করতো। তারপর মোটরসাইকেল ছিনতাই কিংবা ভাড়া নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা কলেজের শিক্ষার্থীদের টার্গেট করে এসব ঘটনা ঘটাতো। ঢাবির ওই ছাত্রীকেও তুলে নিয়ে ছিনতাইয়ের আগে সে গত ১২ আগস্ট উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টর থেকে একটি মোটরসাইকেল ছিনতাই করে। সেই মোটরসাইকেলে পুলিশের স্টিকার লাগিয়ে ঢাবির ওই শিক্ষার্থীকে অপহরণ করে দিয়াবাড়ীতে নিয়ে ছিনতাই করে। সে এ পর্যন্ত ঢাকাসহ সারা দেশে ১ হাজার ৫০০ টির বেশি ছিনতাই করেছে। এর মধ্যে ছিনতাইয়ের পর সে ৫০ জন তরুণীকে ধর্ষণ ও কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের সঙ্গে অশালীন আচরণ করেছে। ছিনতাইয়ের পর তরুণীদের সঙ্গে সে অশালীন আচরণ করতো এই জন্য যে, তারা যেন পরে লোকলজ্জার ভয়ে কোনো কথা না বলে বা অভিযোগ না করে। ছিনতাইয়ের জন্য নির্জনস্থান বেছে নিতো রুবেল। তরুণীদের মোটর সাইকেলে তুলে রাজধানীর ৩০০ ফিট, দিয়াবাড়ী ও পূর্বাচল এলাকায় নিয়ে যেত।
ঢাবির একজন ছাত্রী কীভাবে এত সহজে রুবেলের খপ্পরে পরে যায় জানতে চাইলে ডিবি প্রধান বলেন, আসলে তার হাতে ওয়াকিটকি, পিস্তল ও গাড়িতে পুলিশের স্টিকার দেখে হয়ত ওই শিক্ষার্থী তাকে পুলিশ ভেবে নেয়। তবে সে যদি আশপাশের লোকজনকে ডেকে তাকে চ্যালেঞ্জ করত তাহলে হয়ত এমন ঘটনা ঘটত না। পুলিশ মোটরসাইকেলে করে কখনো আসামি নিয়ে যায় না। আমরা অনুরোধ করবো কেউ পুলিশ পরিচয় দিলেই যেন তার মোটরসাইকেলে কেউ ওঠে না যায়। তাকে যেন চ্যালেঞ্জ করে ও তার পরিচয় জানার চেষ্টা করে।
ছিনতাই কী রুবেলে পেশা নাকি নেশা প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এটা রুবেলের পেশা ও নেশা দুটোই। সে পুলিশের ছদ্মবেশে এই কাজগুলো করে আসছিল। সে একাধিকবার জেলে গিয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ৬টি মামলাও রয়েছে। তার সহযোগীদের কী কাজ ছিল জানতে চাইলে হারুন বলেন, তারা রুবেলকে বিভিন্ন সময় নানাভাবে সহযোগিতা করত। কেউ মোটরসাইকেল ভাড়া করে এনে দিত, আবার কেউ অন্যভাবে সহযোগিতা করত। রুবেল ওয়াকিটকি, পিস্তল ও ডিএমপির লোগো কীভাবে পেল জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা রিমান্ডে এনে তার কাছ থেকে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করব। ভুয়া পুলিশের ঘটনা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে আটকানো যাচ্ছে কেন- এমন প্রশ্ন করা হলে ডিবির এ কর্মকর্তা বলেন, এসব ঘটনায় অনেকে মামলা করতে থানায় যায় না। মামলা করলে এসব বিষয়ে শক্ত পদক্ষেপ নেয়া হয়। মামলা না হলে তো আমরা এসব বিষয় জানতে পারি না। তার পিছনে সত্যিকারের কোনো পুলিশ সদস্য আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার সঙ্গে আর কে বা কারা জড়িত রয়েছে তা বিস্তারিত জানতে আমরা রিমান্ডে এনে তাকে আরো জিজ্ঞাসাবাদ করবো।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়