প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
২০২০ সাল। ১৭ মার্চ। শ্রেণি কার্যক্রম শেষে মনে হলো কোন দিকে যাচ্ছি। এক ভয়াবহ অবস্থার মধ্য দিয়ে শুধু বাংলাদেশ নয়- পুরো বিশ্ব গিয়েছি। ১৭ মাসের অধিককাল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। ছাত্ররা ক্লাসে আসেনি। ঘণ্টা বাজেনি। হৈ চৈ-হীন নীরব জগতের বাসিন্দা হয়ে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। একবুক শূন্যতা নিয়ে প্রতিদিন লক্ষ করেছি কী হচ্ছে? কী হতে পারে? কী হবে? এভাবে ভাবতে ভাবতে ২০২০ শেষ করলাম। ২০২১ প্রায় শেষ হতে চলেছে, একদিন ঘোষণা এলো ১২ সেপ্টেম্বর ২০২১ হতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ১৯টি নিয়ম মেনে সপ্তাহে ১ দিন করে ক্লাস চলবে। কোনো কোনোটি একাধিক দিনও চলবে-
রোহান ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র ছিল ২০২০ সালে। হাইস্কুল জীবনের প্রথম অধ্যায়। কতটা আনন্দ নিয়ে শ্রেণি কার্যক্রম শুরু করেছিল। ৬ষ্ঠ শ্রেণির শুরুতে ঠিক করল জীবনের লক্ষ্য সে একজন রাজনীতিবিদ হবে। কিন্তু ২ মাস ক্লাস করার পর তার সব লক্ষ্য যেন অন্যদিকে মোড় নিল। ২০২০ শেষ করে ২০২১ এলো। সে ৭ম শ্রেণির ছাত্র এখন। মাসের পর মাস ক্লাস নেই, বই নেই, পড়া নেই। এক সময় সে মোবাইলে আসক্ত হয়ে পড়ে। এখন জীবন চলে আইফোনের গতিতে। করোনা মহামারির এ সময়টা নিশ্চয়ই কেটে যাবে একদিন। আমাদের বন্ধ থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আবার প্রাণচঞ্চল হয়ে উঠবে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীমুখর হয়ে উঠবে প্রতিটি ক্যাম্পাস। কিন্তু সময়টা আরো দীর্ঘস্থায়ী হলে আগামীর শিক্ষা ব্যবস্থা কেমন হবে? করোনার কারণে তৈরি হওয়া অনলাইন আর অফলাইনের শিক্ষার এই বৈষম্য আমরা কি সমাধান করতে পারব? সমাধান করতে গেলে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষায় উদ্ভাবনীয় ব্যক্তিদের ভূমিকা অথবা শিক্ষায় যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তাদের ভূমিকাই বা কী হবে?
আমরা কীভাবে আগামীর বিশ্বে একটি বৃহত্তর উদ্দেশ্য পরিবেশন করতে পারি, মহামারি চলাকালীন এবং পরবর্তী মহামারিগুলোর জন্য প্রচেষ্টার সম্মিলিত বুদ্ধি গঠনের কীভাবে একটি সুযোগ হবে, শিক্ষায় কতটুকু সংস্করণ করা প্রয়োজন অথবা সংস্করণ করতে হলে কোন কোন বিষয়গুলো আমাদের ভেবে দেখা দরকার তা আলোচনায় উঠে আসে। শিক্ষা পুনঃসংস্করণে শিক্ষা কাঠামো, শিক্ষাক্রম, পাঠ্যক্রমসহ শিক্ষক-শিক্ষার্থী বা বিদ্যালয়ের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা জরুরি।
আমাদের শিক্ষার সবচেয়ে বড় দুর্বল দিক হলো কারিকুলাম। কারিকুলাম শিক্ষার গতিপথ নিয়ন্ত্রণ করে। করোনা মহামারির পর আগামী কারিকুলাম গতানুগতিক হবে না। বর্তমান সময় ও আগামীর কথা মাথায় রেখেই কারিকুলাম পুনঃসংস্করণ করা জরুরি। বর্তমানে প্রয়োজন কমিউনিটি বেইজড বা ক্রাউড সোর্স কারিকুলাম। যার মাধ্যমে শিক্ষা যতটুকু কমিউনিটির প্রয়োজন, ততটুকু কারিকুলামে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। কমিউনিটি বেইজড কারিকুলামের ফলে শিক্ষা বৈষম্য কমিয়ে আনা সম্ভব। কারিকুলাম প্রস্তুতিতে অবশ্যই শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষক ও শিক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সমন্বয় করতে হবে। জরুরি অবস্থায় শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও শিক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ভূমিকা কী হবে, তা সুনির্দিষ্ট করে দিতে হবে। জীবনমুখী ও প্রাকৃতিক শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে অনেক। দক্ষতাভিত্তিক কারিকুলামের পাশাপাশি বাস্তবমুখী নানা কার্যক্রমও কারিকুলামে অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। কিন্তু তা কতটুকু সম্ভব। আদৌ সম্ভব কিনা। নতুন বছরে ২০২২ সালে কেমন করে তা আসছে এর কোনোটিই আমরা অনেকেই জানি না, মতামত নেয়া হয়নি বা হচ্ছেও না। সেই ক্ষেত্রে অতি জরুরি বিষয় হলো মাঠ পর্যায়ে যারা কাজ করে এমন ব্যক্তিবর্গের মতামত নেয়া ও সংযোজন করা।
শিক্ষা হলো সামগ্রিক বিষয়। শিক্ষার্থীদের শিখনের জন্য যুগোপযোগী এডুকেশনাল রিসোর্স প্রয়োজন। শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবইগুলো আরো যুগোপযোগী এবং বিস্তৃত করে তৈরি করতে হবে। প্রতিটি পাঠ্যবইয়ের সঙ্গে একটা করে ওয়ার্কবুক তৈরি করে দিলে শিক্ষার্থীরা বাসায় বসে বাড়ির কাজগুলো নিজেরাই সম্পূর্ণ করতে পারবে। শিক্ষার্থীদের পড়া মূল্যায়ন পদ্ধতিতে আনতে হবে পরিবর্তন। প্রয়োজনে সামাজিক মাধ্যম যেমন- এপস, হোয়াটসআপ, ইমো, ভাইভার, ফেসবুক, ইউটিউব এবং জুম ব্যবহার করতে হবে। সহজে কীভাবে শিক্ষার্থীদের পড়া মূল্যায়নে পরিবর্তন আনা যায়, তা নিয়ে আরো চিন্তা করতে হবে। শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের জন্য ইন্টারনেট, কম্পিউটার, রেডিও, টেলিভিশন এবং মোবাইল ফোনের ব্যবহার আরো সহজলভ্য করে তুলতে হবে। প্রয়োজনে শিক্ষা প্রদানের জন্য ফিচার ফোন এবং বাইটস সাইজ এডুকেশন চালু করার কথা উঠে এসেছে। এছাড়াও ইন্টারনেটের গতি বাড়ানোর প্রতি মনোযোগ দিতে হবে।
শিক্ষার্থীরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ, আগামী দিনের বাংলাদেশ। সময়ের সঙ্গে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য আমাদের শিক্ষার্থীদের একুশ শতকের দক্ষতায় দক্ষ করে তুলতে হবে। ২১ শতকের দক্ষতাগুলো যেমন- চিন্তা ও সমস্যা সমাধান, সৃজনশীল ও উদ্ভাবনী ক্ষমতা, সহযোগিতামূলক ও দলগত দক্ষতা, নৈতিকতা ও সহমর্মিতা, সক্রিয়তা নিয়ে আরো ভাবতে হবে। বর্তমানে এ দক্ষতাগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আগামীর সম্ভাবনাগুলো নিরূপণ করে শিক্ষার্থীদের দিয়ে দক্ষতাগুলোকে কার্যকরী করে তুলতে হবে। এই সময়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো- চিন্তা ও ভাবনার জগৎ বড় করা এবং সমস্যা কেমন তার সমাধানের দক্ষতা শিক্ষার্থীর কতটুকু রয়েছে। কিন্তু আমাদের সেই সুযোগ কতটুকু বিস্তৃত।
শিক্ষক, প্রতিষ্ঠান, সামাজিক শক্তি ও অভিভাবকদের এই বিষয়ে সবার আগে ভূমিকা রাখতে হবে। বর্তমানে শিক্ষার্থীদের মানসিকভাবে আরো সুদৃঢ় ও আত্মপ্রত্যয়ী হওয়ার জন্য মনস্তাত্ত্বিক শিক্ষা খুব গুরুত্বপূর্ণ। যে কোনো জরুরি সময়ে যে কোনো সমস্যা সবার সহযোগিতা নিয়ে কীভাবে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব এবং মানসিক শক্তি আরো সুদৃঢ় করার উপায়গুলো অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শিক্ষকদেরও মানসিকভাবে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করার ক্ষমতা রাখতে হবে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে অনলাইন যোগাযোগের মাধ্যমেও একে অপরের পাশে এসে সহযোগিতা ও সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দেয়ার উপায়গুলোও আমাদের নতুন করে ভাবতে হবে। শিক্ষকরা একে অন্যের পাশে এসে দাঁড়ানোর সুযোগগুলো আরো বাড়াতে হবে। বাড়ানোর জায়গায় আমরা কতটা কাজ করতে পেরেছি আদৌ কাজ করছি কিনা তাও গুরুত্ব দিতে হবে।
আমাদের সামগ্রিক শিক্ষা চিন্তা হলো বই, ক্লাস, পরীক্ষা। একটি সনদ একটি জীবন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা যেন প্রাকৃতিকভাবে শিখতে পারে সেই চেষ্টা করতে হবে। হোম স্কুলিংয়ের মাধ্যমে বাসায় বসে কীভাবে হাতে-কলমে কিংবা খেলাধুলার মাধ্যমে শিখতে পারে, সেই পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করতে হবে। সিলেবাসে আবদ্ধ না রেখে শিক্ষার্থীর নিজস্ব চিন্তা-ভাবনা প্রকাশ করার সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে। শিক্ষার পদ্ধতিগুলো-হোক সমস্যাভিত্তিক, প্রজেক্টভিত্তিক, ধারণা বা অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখন। একসময় সর্বোচ্চ বরাদ্দের কথা শুনলেও আজকাল আর সেভাবে তা শুনি না। আমাদের দেশে জিডিপির মাত্র ২.২ শতাংশ বরাদ্দ করা হয় শিক্ষায়, যা অপ্রতুল। বর্তমানের শিক্ষার এই বৈষম্য দূর করার জন্য সরকারের শিক্ষা ক্ষেত্রে বাজেট আরো বাড়াতে হবে। সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নতুন নতুন স্টার্ট-আপ গড়ে তুলতে হবে। স্টার্ট-আপ উদ্যোক্তাদের জন্য দিতে হবে নানান প্রণোদনা, যেন তারা রিসোর্স ও কনটেন্টের মান ও সংখ্যা আরো বাড়াতে পারেন। সরকারি-বেসরকারি সমন্বয়ে তৈরি করতে হবে এডুকেশন-ফান্ডিং। বাজেট তৈরির আগে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষা-সংশ্লিষ্ট সবার মতামত নিতে হবে।
এতদিন যেখানে শিক্ষা বাণিজ্য বলে আমরা মুখ ফাটিয়েছি আজকের এই সময়ে পুরো বিশ্ব মনে করছে এ সময়ে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়। সরকারের রয়েছে পরিকল্পনা ও শিক্ষানীতি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর রয়েছে কাজের বাস্তবিক অভিজ্ঞতা এবং প্রচুর রিসোর্স। আগামীকে মোকাবিলা করার জন্য যৌথভাবে কাজ করতে হবে। পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপগুলোর সুযোগ ও সমন্বয়ের উদ্যোগ রাষ্ট্রকে নিতে হবে। প্রাইভেট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে বরং সরকারের অংশ মনে করে এর সঙ্গে সুযোগের সমন্বয় তৈরি করতে হবে। একটি পরীক্ষা পাসের পরই চাকরি। শিক্ষিত ছেলে বেকার থাকবে কেন? সময়ের সঙ্গে সঙ্গে চাকরির বাজার পরিবর্তন হচ্ছে। আগামীর বাজার আরো দ্রুত পরিবর্তন হবে। বর্তমান সমস্যাকে মোকাবিলা করে আগামী সম্ভাবনা কাজে লাগানোর জন্য প্রয়োজন নতুন নতুন রিসোর্স ও কনটেন্ট তৈরি করা- এই রিসোর্স ও কনটেন্ট তৈরির জন্য দক্ষ ও অভিজ্ঞ জনবল প্রয়োজন হবে। ফলে আগামীতে চাকরির বাজারে নতুন নতুন সুযোগ তৈরি হবে। সেই সুযোগ কতটা তৈরি করতে পারব তা বিবেচনায় আনতে হবে এবং তাতে মনে থাকবে আমাদের শিক্ষার গতি কী হচ্ছে।
প্যারেন্টিং এডুকেশন : কোভিড যে শিক্ষা দিল তা থেকে বোঝা যায়- আগামীতে হয়তো বিদ্যালয়ের শ্রেণি কার্যক্রমের সময়সীমা কমে যেতে পারে। শিক্ষার্থীরা বাসায়ই অধিকাংশ সময় অতিবাহিত করবে। নতুনভাবে তৈরি হবে ‘হোম স্কুলিং আইডিয়া’। হোম স্কুলিংয়ের জন্য প্যারেন্টিং এডুকেশন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একজন অভিভাবক একজন ভালো শিক্ষক কীভাবে হয়ে উঠতে পারেন তার ওপর গুরুত্ব বাড়বে। ফলে একজন অভিভাবকের দায়িত্বও বেড়ে যাবে। সন্তান লালন-পালনের পাশাপাশি সন্তানের সুশিক্ষা অর্জনের জন্য বিদ্যালয়ের সঙ্গে সম্পর্ক আরো বাড়াতে হবে। শিক্ষার্থীর পড়া তৈরিতে সহযোগিতা, বাসায় বসে মূল্যায়ন ও ফিডব্যাক দেয়ার জন্য প্যারেন্টিং এডুকেশনের প্রয়োজন হবে। তাই প্যারেন্টিং এডুকেশনের ওপর আমাদের গুরুত্ব খুব তাড়াতাড়ি বাড়াতে হবে। আদৌ সেটি আমাদের আছে কিনা। গ্রাম বিবেচনায় সেই সুযোগ বা কতটুকু।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভূমিকা সবসময় শিক্ষার্থীর জন্য ভিন্নরকম। কালে কালে প্রতিষ্ঠানই বেশি ভূমিকা পালন করেছে। আজকাল ইউনিক আইডি, ভোটার তালিকা, ভোট গ্রহণ, টিকা নিবন্ধন, অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন কাজেই যেন প্রতিষ্ঠানগুলোর দিন চলছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর ভূমিকাও পরিবর্তন হচ্ছে। শুধু জ্ঞান বিতরণই নয়, জ্ঞান বিতরণের পাশাপাশি বিদ্যালয়গুলো নিজ নিজ কমিউনিটিতে রাখতে পারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। জিপিএ-ভিত্তিক শিক্ষার্থী তৈরি না করে মেধাবী ও দক্ষ শিক্ষার্থী তৈরি করতে হবে। বিদ্যালয়গুলোকে সমাজের যে কোনো জরুরি-পরিষেবা দেয়ার জন্য প্রস্তুত রাখতে হবে। এসব করতে হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে অনেকটা চাপমুক্ত রাখতে হবে। অনেক শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে। বাল্যবিয়ের স্বীকার হয়েছে। পরিবারের সহায়তার জন্য শিশুশ্রম বেড়েছে। অনেকেই নেশাগ্রস্ত হয়েছে। স্কুলে ফিরবে না। এসব শিক্ষর্থীকে স্কুলে ফেরানো সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সেটি মোকাবিলায় কতটা সচেষ্ট বা আন্তরিক তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে এই বিষয়টি মাথায় নিয়ে কাজ না করলে আমি নিশ্চিত বলতে পারি এটি আমাদের শিশুদের জন্য শিক্ষার জন্য একটি বড় ধরনের ক্ষতির বিষয় হয়ে দাঁড়াবে।
শিক্ষকরাই জাতির মেরুদণ্ড। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষকদের কাজের পরিধি অনেক বেড়েছে। বেড়েছে অনেক চ্যালেঞ্জও। বর্তমান সমস্যা মোকাবিলা করে আগামীর সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর জন্য দক্ষ, আধুনিক ও সময়োপযোগী শিক্ষক তৈরি করতে হবে। ডিজিটাল রিসোর্স তৈরি করার জন্য এবং এডুকেশন টুলস ব্যবহার করার জন্য প্রশিক্ষিত শিক্ষকের বিকল্প নেই। তাই শিক্ষক প্রশিক্ষণের সব ব্যবস্থা নিতে হবে। গতানুগতিক চিন্তা থেকে বের করে বিশ্বায়নের সব সুযোগ যেন আমাদের শিক্ষকরা গ্রহণ করতে পারে, তার জন্য নানা কর্মশালার আয়োজন করতে হবে। প্রশিক্ষিত শিক্ষক একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তথা সমাজের সম্পদ। যেকোনো মহামারি রাষ্ট্রকে যেমন সমস্যায় ফেলে দেয়; তেমন সমস্যা উত্তরণের জন্য অনেক সুযোগও তৈরি করে দেয়। শিক্ষা ব্যবস্থাকে পুনঃসংস্করণ করার মাধ্যমে বর্তমান সমস্যাগুলো সমাধান করে সম্ভাবনাগুলো কাজে লাগাতে হবে। সে জন্য সবার সমন্বিত উদ্যোগ ও প্রচেষ্টা খুবই জরুরি। সরকারের পাশাপাশি ব্যক্তি উদ্যোগে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষা-সংশ্লিষ্ট সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। তবেই এই সময় কেটে যাবে এবং শিক্ষা বৈষম্য অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। আমরাও তাই আশাকরি।
শিক্ষক ঝরে পড়া : মহামারি করোনাতে আপনারা দেখেছেন বহু শিক্ষক চাকরি হারিয়েছে। জীবনের অন্য পেশায় অনেকেই জীবনের তাগিদে অসম্মানজনক পেশাতেও নিয়োজিত হয়েছে। আমাদের অর্থনীতি ও স্বাস্থ্য খাত নিয়ে পুরো সময়টাই সরকার মনোযোগ দিয়েছে। কিন্তু শিক্ষকদের ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধার দিকে মন দেয়নি-খবরও নেয়নি। যার ফলে মেধাবী মানুষজন শিক্ষকতাকে আর পেশা হিসেবে নেবে না। কারণ এই করোনায় এককথায় শিক্ষকদের অবহেলা ও অসম্মান করা হয়েছে। যা একটি জাতির জন্য বেদনাদায়ক ও হতাশার। আমি হতাশার সব বিষয় ভুলে সরকার ও প্রতিষ্ঠান একযোগে শিক্ষার এই অবস্থার দূরীকরণে কাজ করার কথাই বলব। আশা করি সেদিকেই মন দেবে সবাই।
শেয়ার করুন
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।