ভালোবাসা এখন ‘ভার্চুয়াল’, আবেগেও পড়েছে টান : তবুও বসন্ত জেগেছে বনে

আগের সংবাদ

সংস্কৃতির চর্চা জোরদারের তাগিদ > বাঙালির প্রাণের মেলার উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী : হাতে নিয়ে বই পড়ার আনন্দ অনেক

পরের সংবাদ

বঙ্গবন্ধুর ধর্মীয় চেতনা

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ইসলামি ব্যক্তিত্ব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা বা ধর্মীয় নেতার পরিচয়ে মহিমাময় কোনো আসনে বসানো আমার এ লেখার উদ্দেশ্য নয়। মূলত বঙ্গবন্ধু প্রচলিত অর্থে কোনো ইসলামি ব্যক্তিত্ব ছিলেন না, ধর্মীয় নেতৃত্বের গতানুগতিক কোনো পরিচয়ও কখনো তাঁর জীবন-বৈশিষ্ট্যে স্পর্শ করেনি। তবে ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ধর্মকর্ম পালন করেছেন, ধর্মের শান্তি-সফলতার অমীয় বাণীসমূহ তাঁর প্রাত্যহিক জীবনমানে রেখাপাত করেছে এবং ধর্মীয় বিধিবিধান ও আচার-অনুষ্ঠানের বিষয়াবলি তাঁর সম্ভ্রান্ত পারিবারিক ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে তাঁকে প্রভাবিত করেছে। বঙ্গবন্ধু তাঁর ব্যক্তিজীবনকে কখনোই ধর্মীয় অনুশাসনের বাইরের বিষয় বলে ভাবেননি, বরঞ্চ যতটুকু পেরেছেন প্রাত্যহিক কর্মকাণ্ডে ধর্মীয় নীতিবিধানের ফরমাবরদারি করেছেন; যা তাঁর ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনের নানা ঘটনাপ্রবাহে প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশমান সেসব বিষয়ের আলোকে একজন সত্যনিষ্ঠ ধার্মিক মানুষ হিসেবে বঙ্গবন্ধুকে মূল্যায়ন করাই বর্তমান লেখার মূল লক্ষ্য।
বঙ্গবন্ধুকে একজন ধার্মিক মানুষ হিসেবে মূল্যায়ন করাটাও তাঁর কীর্তিময় জীবনের জন্য খুব জরুরি বলে আমরা মনে করি না। তবে কেনই-বা আমাদের বর্তমান এই প্রয়াস? এখানে তার দীর্ঘ জবাবের অবকাশ নেই, শুধু এটুকু বলি- পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের বেদনাদায়ক ও নারকীয় হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর বিয়োগান্ত ঘটনার পর থেকে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে তাঁর নানা বিষয়ে দুর্ভাগ্যজনক বিষোদগার, ভিত্তিহীন অপপ্রচার ও জঘন্য কুৎসা রটানো হয়েছে। এটি অপ্রত্যাশিত হলেও আমাদের সমাজ-বাস্তবতার দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত ভয়াল রূপ। বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে যেসব বিষয়ে অপপ্রচার হয়েছে তার অন্যতম হলো ধর্মীয় অঙ্গন; স্বার্থান্বেষী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী নিজেদের ষোলোআনা ফায়দা হাসিলের মানসিকতায় ধর্মীয় নানা বিষয়ে তাঁর বিরুদ্ধে অপবাদ আরোপ করেছে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমাদের দেশের ধর্মীয় নেতৃত্বের কিছু জায়গা থেকেই বহুকাল ধরে লাগাতার এসব অপপ্রচার চলেছে। অপপ্রচারের পরিমাণ কিছুটা হ্রাস পেলেও তা যে একবারেই বন্ধ হয়ে গেছে সেটি ভাবা সত্যের অপলাপ বৈকি। সময়, সুযোগ, পরিবেশ আর পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তা আবারো পূর্বাপেক্ষা অধিক পরিমাণে যে চালু হবে না, তা বলা মুশকিল।
অথচ বঙ্গবন্ধুর জীবনের সঙ্গে ধর্মের বিশেষত শান্তি ও মানবতার ধর্ম ইসলামের যে কোনো বিভেদ বা সংঘাত নেই- তা আজ দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট। অথচ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে পড়াশোনার সময় মাঝেমধ্যে শুনতাম, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশ ভারত হয়ে যাবে, মসজিদে আজানের আওয়াজ ধ্বনিত হবে না; উলুধ্বনি শোনা যাবে। কিন্তু এখন দেখা গেল বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ কয়েকবার ক্ষমতায় এলেও দেশ ভারত হয়ে যায়নি আর মসজিদেও উলুধ্বনি শোনা যায়নি। উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত বিরোধিতার খাতিরে কিছু মানুষ বলতেন, বেটা আওয়ামী লীগও করে আবার নামাজও পড়ে। মানে, আওয়ামী লীগ করলে নামাজ পড়া যাবে না। কিছু মানুষ তো আরো অনেকটু অগ্রগামী হয়ে বলতেন, বেটা মুসলমান আবার করে আওয়ামী লীগ। অর্থাৎ তাদের দৃষ্টিতে মুসলমান আর আওয়ামী লীগ পরস্পর বিপরীতধর্মী দুটি বিষয়; যেন কোনো মুসলমান আওয়ামী লীগ করলে সেটি তাদের কাছে রীতিমতো বিস্ময়ের ও নিন্দনীয় বিষয়। কিন্তু সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অকুতোভয় নেতৃত্বে ৩০ লাখ মানুষের আত্মাহুতি আর দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের সমাজ চিত্র ও বাস্তবতা একেবারেই ভিন্ন। আর সেটি হলো- গোটা দেশের সর্বত্রই দেখা যায়, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী-সমর্থকরা শুধু মুসলমান বলে দাবি করে বসে থাকেন না; তারা মসজিদে নামাজের যান, সামনের কাতারেও বসেন, মসজিদ কমিটির সভাপতিসহ নানা দায়িত্বও পালন করেন। মসজিদের ইমামের ভরণপোষণের চিন্তায় তাঁরাও সময় ব্যয় করেন, মসজিদ পরিচালনায় নানাভাবে সহযোগিতার হাতও প্রসারিত করেন। তাঁরা বিভিন্ন ক্যাটাগরির ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বা মাদ্রাসাও প্রতিষ্ঠা করেন। মাদ্রাসায় যেন ভালোভাবে শিক্ষাকার্যক্রম চলে সেজন্য সাধ্যমতো সব ধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত মানুষজনের ইসলাম-সংশ্লিষ্ট কর্মকাণ্ড এমন হওয়া ঐতিহাসিক কারণেই স্বাভাবিক। কেননা ঐতিহ্যবাহী এ দলটির মহান নেতা, বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শান্তির ধর্ম ইসলাম ও এর মূল্যবোধ প্রচার-প্রসারে যে অসামান্য অবদান রেখে গেছেন, তা ইতিহাসে বিরল।
বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি হিসেবে এ দেশে মদ, জুয়া ও হাউজির লাইসেন্স বাতিল করেছিলেন, ঘোড়দৌড় নিষিদ্ধ করেছিলেন, তাবলিগ জামাতের নিরবচ্ছিন্ন ইসলাম প্রচারের স্বার্থে কাকরাইল মসজিদের জমি বরাদ্দ, পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম জমায়েত টঙ্গির বিশ্ব ইজতেমা ময়দানের জায়গা নির্ধারণ, মাদ্রাসা বোর্ডের সংস্কার ও আধুনিকায়ন, বেতার-টিভিতে পবিত্র কুরআন তেলাওয়াতের ব্যবস্থা, জাতীয় পর্যায়ে সিরাত মজলিশ ও ঈদে মিলাদুন্নবি (সা.) উদ্যাপন, শবে কদরের মহিমান্বিত রজনীতে সংবিধান পাস, হজযাত্রীদের ভ্রমণ কর রহিতকরণ, রাশিয়ায় তাবলিগ জামাতের প্রতিনিধি প্রেরণ এবং একেকজন সদস্যকে স্বদেশের পক্ষে কূটনীতিকের ভূমিকা পালনের আহ্বান, আলেম-উলামা, পির-মাশায়েখগণের সঙ্গে ভালোবাসা ও শ্রদ্ধাপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন, শর্ষিণা ও ফুরফুরাসহ বিশুদ্ধ আকিদার অন্যান্য দরবার ও খানকার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা, অহংকারমুক্ত বিশাল হৃদয় নিয়ে সত্যনিষ্ঠ অবস্থান গ্রহণ করা, মেহনতি মানুষের জন্য কাজ করা ও মানবতার খেদমতে আত্মনিয়োগ, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান রচনা ও প্রণয়নে ঐতিহাসিক মদিনার সনদের বিভিন্ন ধারার সঙ্গে সাযুজ্য রক্ষা ও তার প্রভাব প্রতিবিম্বিত করা, ‘কুনু মাআস্ সাদেকিন’ পবিত্র কুরআনের এ নির্দেশনা অনুযায়ী সত্যনিষ্ঠ, বিবেকবান ও দেশপ্রেমিক মানুষদের সাহচর্য ও বন্ধুত্ব গ্রহণ, ছাত্রজীবন থেকেই ধর্মপ্রাণ ও নামাজি শিক্ষার্থীদের প্রতি বিশেষ নজর দান ও নানাবিধ কাজে তাদের অগ্রাধিকার প্রদান, ধর্মীয় সভাসমিতি, ওয়াজনসিহত বা মাহফিল অনুষ্ঠানে বিঘœ বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হলে দায়িত্ব নিয়ে সেই সভা বা মাহফিল অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করে দেয়া, অধ্যয়নকালীন অবস্থায়ও প্রিয় স্ত্রীকে লেখা চিঠি-পত্রাবলিতে মহান আল্লাহর ওপর অকৃত্রিম বিশ্বাসের শক্তিতে বলীয়ান হয়ে ইসলামের জন্য জীবন উৎসর্গ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করা, আল্লাহ যা করেন তা মঙ্গলের জন্যই করেন মর্মে সবকিছু তাকদিরের অংশ হিসেবে স্বাভাবিকভাবে মেনে নেয়া, জীবনের প্রথমবারের মতো জেলে যাওয়ার কারণটিকে ধর্মীয় চেতনার অংশ হিসেবে স্মরণীয় করে রাখা, জীবনের সমগ্র ভাষণে উদারতা, কল্যাণকামীতা আর সীমাহীন আন্তরিকতার স্বাক্ষর রেখে আদম সন্তানদের ‘ভায়েরা আমার’ বলে সম্বোধন করা, যাবতীয় জুলুম ও অনিয়ম-অনাচারের বিরুদ্ধে দাঁড়াবার অসীম সাহসিকতা প্রদর্শন, বৈষম্য ও নিপীড়নের দিক থেকে বাঙালি সমাজকে মক্কার সমাজের প্রতিচ্ছবি করা, তমদ্দুন মজলিসসহ অন্যদের সঙ্গে ভাষা আন্দোলনের প্রেরণা হিসেবে ইসলামি চেতনাবোধের প্রতি সহমত থাকা, সত্য ও ন্যায়ের প্রতি নিষ্ঠাবান থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার হয়েও অন্যায় আদেশের সামনে মাথা নত না করা, মুচলেকা ও জরিমানা না দেয়া ও আত্মসম্মান আর আত্মমর্যাদাবোধের ওপর অবিচল থাকা, সত্তরের নির্বাচনের প্রাক্কালে দেয়া বিশেষ ভাষণে ও অন্যান্য সময়ে ‘কুরআন-বিরোধী কোনো আইন করা হবে না’ মর্মে ঘোষণা দেয়া, কথায়-বার্তায় ও বক্তৃতা-ভাষণে অনুপম ভঙ্গিতে ‘ইনশাআল্লাহ’ বলে ইসমে আজমের অসীম ক্ষমতার প্রতি আস্থা জ্ঞাপন, যাত্রাবাড়ী মাদ্রাসাসহ কওমি ঘরানার আলেমদের নিয়ে ভারতের ‘দারুল উলুম দেওবন্দ’ প্রকৃতির ইসলামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার ক্ষেত্রে পৃষ্ঠপোষকতা এবং মুসলিম মিল্লাতের বৃহত্তর স্বার্থ সংরক্ষণের তাগিদে ওআইসির সম্মেলনে অংশগ্রহণসহ নানাবিধ কর্ম সম্পাদনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু তাঁর ইসলামবিষয়ক কীর্তি ও ধর্মীয় চেতনার স্বাক্ষর রেখে গেছেন। তবে বাংলাদেশে ইসলামের তরে চিরস্মরণীয় ও নজিরবিহীন যে কাজটি তিনি করেছেন সেটি হলো, ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা। সমগ্র বিশ্বে ইসলামের প্রচার-প্রসার ও গবেষণা আর প্রকাশনার ক্ষেত্রে এটি সর্ববৃহৎ এক অনন্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃত।
এ বিষয়ে কারো দ্বিমত নেই যে, পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান ও এর জনগণের ওপর কোনো ক্ষেত্রেই আদল ও ইনসাফ তথা সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করেনি। বরং তারা এতদঞ্চলের মানুষের ওপর রীতিমতো অবিচার তথা জুলুমের রাজত্ব কায়েম করেছিল। তারা সর্বক্ষেত্রে খারাপ কাজের নজির স্থাপন করেছিল।
ইসলামের সর্বশ্রেষ্ঠ নবি ও রাসুল হজরত মোহাম্মদ (সা.) ঘোষণা করেছেন- ‘মান রাআ মিনকুম মুনকারান ফালয়ুগাইয়িরহু বিয়াদিহি ফাইল্লাম য়াসতাতি ফাবিলিসানিহি ফাইল্লাম য়াসতাতি ফাবিকালবিহি ওয়া যালিকা আজআফুল ইমান’ অর্থাৎ তোমাদের মধ্যে যে কেউ যখনই কোনো খারাপ বা মন্দ কাজ প্রত্যক্ষ করবে তাৎক্ষণিক সেটি প্রতিহত করার জন্য শক্তিপ্রয়োগ করো। আর শক্তিপ্রয়োগে যদি তুমি সামর্থ্য না হও তবে তোমার ভাষণে-বক্তব্যে বা কথায় সেটির প্রতিবাদ করো। তা-ও যদি না পারো, তবে সেই কুকর্ম বন্ধকরণে তুমি তোমার অন্তঃকরণের দ্বারা কোনো একটি পরিকল্পনা বের করো, যাতে করে সেটি বন্ধ হতে পারে। আর এটি হলো ইমানের একেবারে সর্বনিম্ন স্তর। বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের জালেম ও স্বেচ্ছাচারী শাসকগোষ্ঠীর সব প্রকার অপকর্মের দাঁতভাঙা জবাব দিয়ে ইমানের প্রথম স্তরের পরিচয়ই পেশ করেছিলেন। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের ভাষণেও তিনি তাঁর মূল শক্তি ও সম্পদ হিসেবে যা বিবৃত করেছিলেন, তার অন্যতম ছিল সেই ইমান ও ইমানি তেজোদীপ্ততা। অন্যদিকে বাঙালিরা ছিল মজলুম তথা নির্যাতিত। মহানবি (সা.)-এর অপর একটি নির্দেশনা হচ্ছে- তোমরা মজলুমের পক্ষ সমর্থন করে তাদের নিপীড়িত আত্মার অভিশাপ থেকে নিজেদের রক্ষা করো। মানবতাবাদী চেতনায় উজ্জীবিত লৌহমানব বঙ্গবন্ধু সত্যিকার অর্থেই সারাটি জীবন অত্যাচারিত মানবতার ভাগ্যোন্নয়নে অতিবাহিত করেছেন, যা উল্লিখিত বাণীরও এক সফল বাস্তবায়ন।
বঙ্গবন্ধু ছিলেন অসাম্প্রদায়িক, উদার ও মহানুভব একজন বিশ্ব নেতা। সব ধর্মের সমান অধিকার তিনি নিশ্চিত করেছিলেন। প্রত্যেকেই যেন তার নিজস্ব ধর্মবিশ্বাস অনুযায়ী স্বাধীনভাবে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন করতে পারেন, তিনি প্রকৃত অর্থে সেই ব্যবস্থা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, আমি সাড়ে ৭ কোটি মানুষের ধর্মীয় অধিকার সুরক্ষার ব্যবস্থা করেছি। প্রকৃতপক্ষে সব ধর্মমতের মানুষের সহাবস্থান ইসলামেরই মহান শিক্ষা; বঙ্গবন্ধু মদিনা সনদের আলোকে সেই শিক্ষারই বাস্তবায়ন ঘটিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু তাঁর মাতৃভূমি প্রিয় বাংলাদেশকে পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ হিসেবে ঘোষণা করে বলেছিলেন- “আমি এ দেশে ইসলামের অবমাননা চাই না।” স্বাধীনতা-উত্তর বঙ্গবন্ধু মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের প্রভূত উন্নতি বিধান করেন। কেননা, মুক্তিযুদ্ধকালীন মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ছিল নেতিবাচক। কিন্তু বঙ্গবন্ধু তাঁর গতিশীল নেতৃত্ব আর প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব দিয়ে অল্পকালের ব্যবধানে সে সম্পর্ক এমন এক জায়গায় উপনীত করেন যে, তাদের অনেকেই তখন বাস্তবতা উপলব্ধি করেন এবং পুরো বিষয়ে তারা যে অন্ধকারে ছিলেন ও তাদের ভাবনা যে সঠিক ছিল না- তা তারা স্বীকার করেন। এরই ধারাবাহিকতায় পরবর্তীতে ১৯৭৪ সালে লাহোরে অনুষ্ঠিত ইসলামি সম্মেলন সংস্থার শীর্ষসম্মেলনে তিনি যে গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দেন, তাতে বিশ্ব মুসলিমের মধ্যে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বলতর হয় এবং মুসলিম দেশসমূহের সঙ্গেও সম্পর্কের আরো উন্নতি ঘটে। তিনি বলেছিলেন, “আমরা যদি মহানবি (সা.) প্রচারিত মানবপ্রেম ও মানুষের মর্যাদার শাশ্বত মূল্যবোধ মানবসমাজে সঞ্চারিত করতে পারি, তাহলে তা থেকে চলমান সমস্যাদির যথোপযুক্ত সমাধানে মুসলিম জনসাধারণ সুস্পষ্ট অবদান রাখতে পারবে। এসব মূল্যবোধে উদ্দীপ্ত হয়ে শান্তি ও ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে আমরা একটি নতুন আন্তর্জাতিক ঐতিহ্য গড়ে তুলতে পারি।”
উপরিউক্ত আলোচনার ফলশ্রæতিতে আমরা কাউকে হেয় না করেও বলতে পারি যে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধু কর্তৃক ইসলামের কল্যাণে যেসব কার্যসূচি সম্পন্ন করা হয়েছে, তা স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে সত্যিকার অর্থেই অতুলনীয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়