সেশনজট নিরসনে গ্রীষ্মকালীন ছুটি কমাল ঢাবি

আগের সংবাদ

কী নির্দেশনা পেলেন ডিসিরা : জনগণের সেবক হতে হবে > খাদ্য নিরাপত্তা-বাজার স্থিতিশীল রাখা > সাম্প্রদায়িকতা-জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ

পরের সংবাদ

নির্মূল কমিটির আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বক্তারা : জঙ্গিবাদ-সাম্প্রদায়িকতা নির্মূলে সমন্বিত কার্যক্রম প্রয়োজন

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : জঙ্গিবাদের বিষদাঁতগুলো ভেঙে দেয়ার সক্ষমতা অর্জন করেছি, কিন্তু সম্পূর্ণ নির্মূল করতে পারিনি- এ মন্তব্য করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, জঙ্গিবাদ নির্মূলে আমরা জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে পেরেছি। শিক্ষক, ছাত্রসমাজ ও জনতা সবাই জঙ্গিবাদ নির্মূলে আমাদের সহযোগিতা করেছিল। গত ৩০ বছরে নির্মূল কমিটি যে কাজ করেছে জঙ্গিবাদ দমনে তা আমাদের পাথেয় হয়ে আছে। নির্মূল কমিটি মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করেছে। এতে সবাই সাড়া দিয়েছে। এমনকি মা তার ছেলেকে আমাদের কাছে ধরিয়ে দিয়েছেন, এ রকম ৮টি ঘটনা ঘটেছে। জঙ্গিরা নিহত হলে তাদের পরিবার ও আত্মীয়স্বজন লাশ নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ৩০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল বুধবার সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে এক ভার্চুয়াল আন্তর্জাতিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সংগঠনের সভাপতি লেখক সাংবাদিক প্রামাণ্যচিত্রনির্মাতা শাহরিয়ার কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে আলোচ্য বিষয় ছিল ‘জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধে সরকার ও নাগরিক সমাজের করণীয়’। এতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউটের সভাপতি রামেন্দু মজুমদার, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ড. ফওজিয়া মোসলেম, নির্মূল কমিটির সহসভাপতি শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, গ্রাম থিয়েটারের সভাপতি নাসির উদ্দীন ইউসুফ, প্রজন্ম ’৭১-র সভাপতি আসিফ মুনীর তন্ময়, সর্ব ইউরোপীয় নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক আনসার আহমদ উল্লাহ, নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় নেতা লীনা পারভিন, নির্মূল কমিটির নিউইয়র্ক শাখার সাধারণ সম্পাদক স্বীকৃতি বড়ুয়া, টুয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরি ফোরাম ফর হিউম্যানিটি, তুরস্কের সাধারণ সম্পাদক শাকিল রেজা ইফতি, নির্মূল কমিটির বহুভাষিক সাময়িকী ‘জাগরণ’-এর হিন্দি বিভাগের সম্পাদক ভারতের সমাজকর্মী তাপস দাস, সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল এবং বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা শাখার নেতারা।
সভাপতির প্রারম্ভিক বক্তব্যে শাহরিয়ার কবির বলেন, ’৭১-এর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পাশাপাশি জঙ্গি মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা নির্মূল করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ ও জাতিগঠনের অঙ্গীকার নিয়ে আমাদের আন্দোলন যাত্রা শুরু করেছিল আজ থেকে ৩০ বছর আগে। দীর্ঘ তিন দশকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আরম্ভের মাধ্যমে আন্দোলনের প্রাথমিক বিজয় অর্জিত হলেও বাংলাদেশ থেকে আমরা মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা নির্মূল করতে পারিনি।
ড. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, ধর্মনিরপেক্ষ ও অসাম্প্রদায়িক দেশ গঠনের জন্য বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা দীর্ঘ সংগ্রামের মাধ্যমে

এ দেশকে স্বাধীন করেছিল। ’৭৫-এর পর বাংলাদেশে হাজার হাজার কওমি মাদ্রাসা চালু হয়। বর্তমানে যার সংখ্যা প্রায় ৪৪ হাজার। মৌলবাদীরা নারীদের স্বাধীনতার ওপরে হস্তক্ষেপ করে তারা নানাভাবে ধর্মীয় অপব্যাখ্যা দিয়ে নারীদের স্বাধীনতা খর্ব করে। আমাদের এদের বিস্তার যে কোনো মূল্যে প্রতিহত করতে হবে।
রামেন্দু মজুমদার বলেন, ধর্মের নামে রাজনীতি বন্ধ না করা গেলে বাংলাদেশ কিছুতেই সামনের দিকে এগোতে পারবে না। দেশ থেকে জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, মৌলবাদের দুষ্টচক্র রুখতে হলে সরকারকে যেমন অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে তেমনি আমাদের নাগরিক সমাজকেও একত্রিত হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী বলেন, মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির কাছে নির্লজ্জ পরাজয়ের জন্য পাকিস্তানের কোনো লজ্জা বা অনুশোচনা হয়নি বরং ওরা আরো বেশি বর্বরতা ও হিংস্রতার আশ্রয় নিয়েছে। জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর ক্ষমতায় বসিয়েছিল ওদের ভাবশিষ্য জিয়াউর রহমানকে। তিনি ক্ষমতায় বসেই জেলে আটক সব যুদ্ধাপরাধী, দালাল, রাজাকার, আলবদরদের মুক্ত করে তাদের রাজনীতিতে পুনর্বাসিত করেন। তাদের আদর্শে বাংলাদেশ হয় মিনি পাকিস্তান।
নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, শুধু বাংলাদেশ নয় পৃথিবীর কোনো দেশেই ‘একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি’র মতো একটি সামাজিক ও মানবাধিকার আন্দোলন খুঁজে পাওয়া যাবে না। গণহত্যা ও জেনোসাইডের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচার ও শাস্তির দাবিতে গত তিন দশক ধরে সংগঠনটি যে লাগাতার কর্মসূচি ও আন্দোলন পরিচালনা করে আসছে, তা এক কথায় অভূতপূর্ব।
আসিফ মুনীর তন্ময় বলেন, দেশে ও প্রবাসে সাম্প্রদায়িক শক্তি অনেক সংগঠিত। তাদের সাংগঠনিক ও প্রচারণার মাধ্যমগুলোও এখন প্রযুক্তিনির্ভর। কাজেই জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা মোকাবিলা করতে সরকার, নাগরিক সমাজ ও অ্যাকটিভিস্টদের সুসংগঠিত ও প্রযুক্তিনির্ভর পাল্টা ন্যারেটিভ প্রচারণা ও প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
লীনা পারভিন বলেন, ১৯৯২ সালের নির্মূল কমিটির জন্ম না হলে হয়তো ২০১৩ সালের গণজাগরণ সৃষ্টি হতো না। নির্মূল কমিটির জন্ম না হলে আমাদের জীবদ্দশায় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দেখে যেতে পারতাম না।
আনসার আহমদ উল্লাহ বলেন, জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে আমাদের অভিজ্ঞতা বলে জঙ্গিবাদ সম্বন্ধে জনগণকে অবহিত করলে জনগণই জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। তবে জনগণের পাশে যদি সরকার ও নাগরিক সমাজ থাকে তাহলে জনগণ আরো সাহস ও অনুপ্রেরণা পায়।
স্বীকৃতি বড়ুয়া বলেন, বাংলাদেশ একটি মৌলবাদমুক্ত, ধর্মনিরপেক্ষ অসাম্প্রদায়িক মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশে পরিণত হবে- এই প্রত্যাশায় আমরা যারা এই আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছি, সেই লক্ষ্যেই আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।
শাকিল রেজা ইফতি বলেন, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে সবার প্রথমে দরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রচার। দেশে ও বিদেশে সমানভাবে সরকার ও নাগরিক সমাজকে এই কাজটি করতে হবে।
তাপস দাস বলেন, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের একটি অধ্যায়ের নাম ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। বঙ্গবন্ধুর পরবর্তী বাংলাদেশে যে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক অপশক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল, তার বিরুদ্ধে এক প্রতিবাদী আন্দোলনের নাম নির্মূল কমিটি।
উল্লেখ্য, সকাল সাড়ে ৮টায় মিরপুরে শহীদজননী জাহানারা ইমামের সমাধিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মাধ্যমে ৩০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপনের দিনব্যাপী কর্মসূচি শুরু হয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়