কাগজ প্রতিবেদক : ভোটের আগে ও পরে ব্যালট পেপারের নিরাপত্তা দিতে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ব্যর্থ হয়েছে বলে মনে করেন সিনিয়র নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। তিনি বলেছেন, ভোটযুদ্ধ আছে কিন্তু ভোট নেই। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এখন উৎসবের বদলে বিষাদের করুণ সুর বাজছে। গতকাল বুধবার দুপুরে সাভারের আশুলিয়া স্কুল এন্ড কলেজ ও আশুলিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ কয়েকটি ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন শেষে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি এসব কথা বলেন।
মাহবুব তালুকদার বলেন, কোথাও কোনো লোকজন নেই। প্রিজাইডিং অফিসারের সামনে সিল মারছে, সাক্ষী আছেন, সাংবাদিকরা দেখেছেন। অথচ কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। পুলিশ আছে, র‌্যাব আছে কেউ কিছু বলেনি। কী নির্বাচন করছি আমরা? নির্বাচনে অনিয়মের ব্যাপারে কী ব্যবস্থা নেয়া হবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রিটার্নিং কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দিয়েছি, উনিই এখানে কমিশন। উনি যেটা ভালো বোঝেন, সেভাবে ব্যবস্থা নেবেন।
পরে নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, নির্বাচনের মৌলিক শর্ত ভোটের আগে ও পরে ব্যালট পেপারের নিরাপত্তা বিধান। আমরা যথাযথভাবে তা দিতে ব্যর্থ হয়েছি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায় এড়াতে পারবে বলে মনে হয় না। পত্রিকামতে দেশের বেশ কয়েকটি এলাকায় যেমন- টাঙ্গাইল (ডুবাইল), কুড়িগ্রাম (যাত্রাপুর), নেত্রকোনা (দূর্গাপুর), ফেনী (ছাগলনাইয়া), কুমিল্লার আদর্শ সদর (পাস্তুরি), সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর (জালালপুর), কিশোরগঞ্জ (ভৈরব), রাজশাহী (চারঘাট), হবিগঞ্জ (সদর), ঠাকুরগাঁও সদর (আখানগর), গোপালগঞ্জ (কোটালিপাড়া), গাইবান্ধা (জুমারবাড়ী), যশোর (কেশবপুর), সাভার (আশুলিয়া) ইত্যাদি স্থানে নির্বাচনের ব্যালট পেপার ছিনতাই হয়ে গেছে। যে কোনো মূল্যে ব্যালট পেপারের সুরক্ষা দিয়ে এই অবস্থার অবসান ঘটানো প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
মাহবুব তালুকদার আরো বলেন- স্মরণযোগ্য যে, ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগের রাতে ব্যালট পেপারের ঘটনাটি বিবিসি প্রকাশ করার পর নির্বাচন কমিশন দিনের ভোট রাতে করে বলে আমরা প্রশ্নবিদ্ধ হই। এটি কোনোভাবেই কাম্য ছিল না।
তিনি বলেন, মানবাধিকারের আলোচনা এখন তুঙ্গে। মানবাধিকার উৎসারিত হয় ভোটের অধিকার থেকে। আমাদের সংবিধানের স্পিরিটই হচ্ছে তাই। জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা ও রক্ষা করা এখনো সুদূর পরাহত। গণতন্ত্র ও মানবাধিকার একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। একমাত্র নির্ভেজাল গণতন্ত্রই মানবাধিকারের গ্যারান্টি দিতে পারে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও এর প্রতিষ্ঠানিক রূপদানের জন্য অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ আইনানুগ গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই।
সিনিয়র এ নির্বাচন কমিশনার বলেন, নির্বাচনী আইন ভঙ্গ করে আচরণবিধি লঙ্ঘন সুষ্ঠু নির্বাচনের গোড়া কর্তনের নামান্তর। কয়েকজন সংসদ সদস্য সরাসরি আচরণবিধি লঙ্ঘন করে চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কলুষিত করেছেন। কেবল চিঠি দেয়া ছাড়া তাদের সম্পর্কে আর কোনো ব্যবস্থা নেয়া যায়নি। কেউ কেউ সেই চিঠি উপেক্ষা করেছেন। এজন্য আইনের কঠোর প্রয়োগ অনিবার্য ছিল। কিন্তু নির্বাচন প্রক্রিয়া সংস্কার করা না হলে তাদের সম্পর্কে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব নয়। অন্য যারা আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন, তাদের সামান্য অর্থদণ্ড ছাড়া অন্য কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা ছাড়া আইনের কঠোর বাস্তবায়ন অসম্ভব।
মাহবুব তালুকদার আরো বলেন, সন্ত্রাস ও সংঘর্ষ যেন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে। কিন্তু নির্বাচন ও সন্ত্রাস একসঙ্গে চলতে পারে না। নির্বাচনী সন্ত্রাস প্রতিহত করতে হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তাদের প্রতিঘাত আরো জোরদার করতে হবে। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের সন্ত্রাসের কারণ অনুসন্ধান করে তা থেকে অব্যাহতির উপায় উদ্ভাবন অপরিহার্য। তবে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নের প্রথা উঠিয়ে না দিলে সন্ত্রাস ও সংঘর্ষ উত্তরোত্তর বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আমরা অবশ্যই সন্ত্রাস ও সংঘাতমুক্ত নির্বাচন চাই।